দেশি পিপুল বা পিপলা দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ভেষজ বীরুত

পিপারাসির প্রজাতি

দেশি পিপুল

বৈজ্ঞানিক নাম: Piper longum L., Sp. Pl.: 29 (1753). সমনাম: Piper latifolium Hunter (1809), Chavica roxburghi Miq. (1844). ইংরেজি নাম: Indian Long Pepper, Long Pepper. স্থানীয় নাম: পিপলা, পিপলা-মূল, দেশি পিপুল, পিপুল মরিচ।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae বিভাগ: Angiosperms অবিন্যাসিত: Monocots বর্গ: Liliales গোত্র: Liliaceae গণ: Piper প্রজাতি: Piper longum L..

বর্ণনা: দেশি পিপিল বা পিপলা বা পিপুল (বৈজ্ঞানিক নাম: Piper longum) পিপারাসি পরিবারের পিপার গণের বহুবর্ষজীবী বীরুৎ। এদের শাখাসমূহ স্ফীত পর্ববিশিষ্ট, বিটপ সরু, শয়ান বা উধ্বগ, পর্ব থেকে মূল গজায়। এদের পাতা সরল, একান্তর, ভল্লাকার থেকে ডিম্বাকার-ভল্লাকার, পাদদেশ হৃৎপিণ্ডাকার, শীর্ষ তীক্ষাগ্র থেকে দীর্ঘাগ্র, পত্রবৃন্ত ১.২ সেমি পর্যন্ত লম্বা।

পুষ্প ক্ষুদ্র, সাদা থেকে গোলাপী সাদা, বেলনাকার স্পাইকে, মঞ্জরীপত্র বর্তুলাকার, ছত্রাকার। বৃত্যংশ এবং পাপড়ি অনুপস্থিত। পুং স্পাইক সরু, মঞ্জরীপত্র ছত্রাকার, সুস্পষ্ট কিন্তু খর্বাকার বৃন্তবিশিষ্ট, পুংকেশর ২টি, পুংদন্ড খাটো, পরাগধানীর কোষগুলো আনত। স্ত্রী স্পাইক বেলনাকার, গর্ভদন্ড খাটো, গর্ভমুণ্ড ৩৪টি, বৃহৎ। ফল ড্রুপ, বৃহদাকার, ঝাঝালো। বীজ বেলনাকার। ফুল ও ফল ধারণ ঘটে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে।

থাইল্যান্ডের চিয়াং রাই প্রদেশের বাজারে পিপুলের ফল, আলোকচিত্র: Takeaway

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২৪, ২৬, ৪৮, ৫২, ৯৬ (Kumar and Subramaniam, 1986).

আবাসস্থল: বনের ভিতরে ছায়াযুক্ত স্থান। বিস্তৃতি ও ভারত ও শ্রীলংকায় ব্যাপক চাষ হয় কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াসহ অন্যত্র কদাচিৎ চাষ হয়। বাংলাদেশে দেশের সর্বত্র পাওয়া যায়।

অর্থনৈতিক ব্যবহার/গুরুত্ব/ক্ষতিকর দিক: পিপুলের ফলে উত্তেজনা বৃদ্ধিকারী, পুষ্টির পরিবর্তনকারী, পাকস্থলীর বায়ুনাশক, পাকস্থলীর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিকারী, দুগ্ধ বৃদ্ধিকারী, পুরুষের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি কারী এবং কাশির মাধ্যমে ফুসফুস থেকে শ্লেষা নির্গতকারী গুণাবলী বর্তমান। কাচা ফল আয়ুর্বেদীক ঔষধ হিসেবে অজীর্ণতা, ঠান্ডা, কাশি, ব্রংকাইটিস্, এ্যাজমা, টিউমার, পাইলস্, ব্যাথা প্রদাহবিশিষ্ট ক্ষত, জন্ডিস, অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ এবং জ্বরের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ইহার শিকড় পাকস্থলীর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিকারক, পাকস্থলীর বায়ুনাশক, কৃমিনাশক হিসেবে এবং পেটের ব্যাথা, প্লীহার রোগে, ব্রংকাইটিস, মাথা ব্যাথা এবং নিদ্রাহীনতায় ব্যবহৃত হয়। ফল থেকে পৃথকীকৃত এক প্রকার উপক্ষার যক্ষার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে (Ghani, 2003).

আরো পড়ুন:  এলাচ বা ছোট এলাচে আছে খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিসহ নানা ভেষজ গুণ

জাতিতাত্বিক ব্যবহার: সমগ্র স্পাইকটি (যার রসালো মঞ্জরীদন্ডে ক্ষুদ্রাকার ফলগুলো নিহিত থাকে) মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চীনে ইহার শিকড়ের গুঁড়া গর্ভবতী মায়ের প্রসব ত্বরান্বিত করতে খাওয়ানো হয়ে থাকে (de GuZman and Siemonsma, 1999).

বংশ বিস্তার: কর্তিত কান্ডের মাধ্যমে এবং বীজের সাহায্যেও বংশ বিস্তার করে থাকে।

অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৯ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) দেশি পিপুল প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ নেই এবং বাংলাদেশে এটি আশংকা মুক্ত (lc) হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে দেশি পিপুল সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটি বর্তমানে সংরক্ষণের জন্য কোনো প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন নেই।[১]

তথ্যসূত্র:

১. এম আহসান হাবীব, (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৯ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৯৪-৩৯৫। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

Leave a Comment

error: Content is protected !!