গিওর্গি লুকাস হাঙ্গেরীয় মার্কসবাদী দার্শনিক এবং সাহিত্য সমালোচক

গিওর্গি লুকাস (১৮৮৫-১৯৭১) হাঙ্গেরীয় মার্কসবাদী দার্শনিক এবং সাহিত্য সমালোচক ছিলেন। ১৮৮৫ সনের ১৩ এপ্রিল বুদাপেস্টে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বুদাপেস্ট এবং বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। ১৯০৮ সন থেকে ১৯১৫ সনের মধ্যে লুকাস সৌন্দর্যতত্ত্ব এবং সাহিত্য সমালোচনা সম্পর্কে বিভিন্ন গ্রন্থ প্রকাশ করেন। তার সঙ্গে প্রখ্যাত সামজতত্ত্ববিদ ম্যাক্স ওয়েবারের বন্ধুত্ব হয় ১৯১২ সনের দিকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কালে লুকাস হয়ে উঠলেন মার্কসবাদী এবং ১৯১৮ সনের স্বল্পকালীন হাঙ্গেরীয় সোভিয়েত রিপাবলিকে তিনি শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন।

গিওর্গ লুকাস দীর্ঘকাল নির্বাসিত ছিলেন। এর মধ্যে ভিয়েনাতে ১৯১৯ থেকে ১৯২৯, মস্কোতে ১৯৩০ থেকে ১৯৩১, বার্লিনে ১৯৩১ থেকে ১৯৩৩ এবং পুনরায় মস্কোতে ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সন পর্যন্ত। ১৯৪৫ সনে তিনি পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে দেশে ফেরেন। ১৯৫৬ সনের হাঙ্গেরীয় আন্দোলনে তিনি অংশ নেন এবং পুনরায় শিক্ষামন্ত্রী হন (১৯১৯ সনে)। নাজী সরকারের পতনের পরে তিনি রুমানিয়ায় ১ বৎসর বন্দি থাকেন, অতঃপর বুদাপেস্টে ফিরে আসেন। বুদাপেস্টেই ১৯৭১ সনের ৪ঠা জুন গিওর্গ লুকাস ইন্তেকাল করেন।

History and Class Conciousness (১৯২৩) লুকাসের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক গ্রন্থ। লুকাস প্রকৃতির বিশ্লেষণ বা ‘দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ’ হিসেবে মার্কসবাদকে অস্বীকার করেন। হেগেল এবং মার্কসের প্রথম দিককার তত্ত্বগুলোর উপর ভিত্তি করেই লুকাস বস্তুজগৎকে এবং নিপীড়িত জগৎকে প্রত্যক্ষ করেন। তার মতে, মানবতার মুক্তির নামে বস্তুগত পীড়নকে ধ্বংসের উদ্দেশে সম্মিলিত মানব প্রচেষ্টাতেই দ্বন্দ্ব রয়েছে। এই মানবতাবাদী দ্বান্দ্বিকতা সবচেয়ে বঞ্চিত এবং শৃংখলিত শ্রেণিসমূহ তাদের আত্মবিকাশের মধ্যে বহন করে চলে। লুকাসের এই ধারণাকে ১৯২৪ সনে রুশ কমিউনিস্ট পার্টির নেতা গ্রিগরি যাইনোভিয়েভ বিচ্যুতিবাদ (deviationist) বলে অভিহিত করেন।

ইউরোপীয় সাহিত্য সম্পর্কে গিওর্গি লুকাস-এর আলোচনা-সমালোচনা সুবিখ্যাত। তিনি মার্কসীয় সাহিত্যচিন্তায় একটি ধারাও সংযোজন করেন। গটফ্রিড কেলার, গ্যেটে, টমাস মান, বালজাক প্রমুখের সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে তিনি বিশেষভাবে পর্যালোচনা করেন। তাছাড়া হেগেল, মোসেস হেস, মার্কস, লেনিন, অস্তিত্ববাদ সম্পর্কে তিনি দার্শনিক পর্যালোচনাও করেন। তাঁর মতে, “দর্শন হচ্ছে অতীন্দ্রিয় বাসস্থানহীনতা, এটা সবস্থানকেই বাসস্থান হওয়ার তাড়না দেয়।”

আরো পড়ুন:  আরজ আলী মাতুব্বর ছিলেন বাংলার এক অসামান্য লোক দার্শনিক এবং জ্ঞানী ব্যক্তি

তথ্যসূত্র:

১. আফজালুল বাসার; বিশ শতকের সাহিত্যতত্ত্ব; বাংলা একাডেমী, ঢাকা; ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১; পৃষ্ঠা ৩০২।

Leave a Comment

error: Content is protected !!