ওদিকে প্রচণ্ড তর্ক,—‘এটা ঠিক’, ‘না, এইটে ঠিক’ বলে।
ঘন ঘন উঠছে নামছে তাপমানযন্ত্রের পারদ।
কিছু তালেবর লোক তাল বুঝে কত্তালে শ্রীখোলে
‘লেগে-যা’, ‘লেগে-যা’ বোলে রব তুলছে : নারদ! নারদ !
এদিকে রাস্তার জল ভাসতে ভাসতে রসাতলে নামে।
চলে যাচ্ছে টলতে টলতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় ঝাঁঝরিতে
কাগজের নৌকোগুলো। হা হতোস্মি ! দক্ষিণে ও বামে।
ছিঁড়ে খাচ্ছে শুড়ি ছুঁড়ি গনৎকার পুরুত পাদরিতে।
ব্যস, এ কোরাস শেষ।
‘আমার এ গল্পের নায়ক
কুমোরটুলিতে থাকত ; যতই সে বানাত প্রতিমা
লোকে ফেলে দিত জলে,—বারোমাস এই বাঁধা ছক ॥
‘একদিন ধুত্তোর ব’লে সরে পড়ল গায়ে দিয়ে নিমা
পাশের গলিতে,—যেখানে দাড়িয়ে থাকে সুশীলা-ফুসিলা—
ভাল ক’রে নেড়ে চেড়ে দেখল ভারী সুন্দর বানানো
ঈশ্বরের জীব।
ফিরে এসে বানাল সে পুতুল রঙ্গিলা।
খুব কাটল। উপরন্তু যত্নে রইল ঘরে ঘরে। জানো?
রামো রামো !
শেষে কিনা এই গল্প !
-ওহে বসে পড়ো !
বুঝেছ ? আদতে দোষটা হলো গিয়ে চোখের ঠুলির —
কেননা সমস্যাগুলো ওর চেয়ে ঢের ঢের বড়ো।
পৃথিবীর মানচিত্রে নামও নেই কুমোরটুলির ।।
আসলে যে চরিত্রটা নিয়ে এত কাণ্ড, এত গলাবাজি—
সে কিন্তু সমস্ত বোঝে।
এবং সে
বাজারেও যায়
থলি হাতে।
পৃথিবীকে ঢেলে সাজতে সেও খুব রাজি
ভোর হবে। তাই এত অন্ধকার ব্যথায় মোচড়ায়।।
সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯ – ৮ জুলাই ২০০৩) ছিলেন বিশ শতকের উল্লেখযোগ্য বাঙালি বামপন্থী কবি ও গদ্যকার। তিনি কবি হিসেবে খ্যাতিমান হলেও ছড়া, প্রতিবেদন, ভ্রমণসাহিত্য, অর্থনীতিমূলক রচনা, অনুবাদ, কবিতা সম্পর্কিত আলোচনা, উপন্যাস, জীবনী, শিশু ও কিশোর সাহিত্য ইত্যাদি রচনাতেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন। সম্পাদনা করেছেন একাধিক গ্রন্থ এবং বহু দেশি-বিদেশি কবিতা বাংলায় অনুবাদও করেছেন। “প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য় এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা” বা “ফুল ফুটুক না ফুটুক/আজ বসন্ত” প্রভৃতি তাঁর অমর পঙক্তি বাংলায় আজ প্রবাদতুল্য।