শাচী শাক বর্ষজীবী বা বহুবর্ষজীবী। ভূশায়িত আগাছার মতো জন্মে। সরু সরু শাখা-প্রশাখা হয়ে ধীরে ধীরে প্রসারিত হয়। শাখা ৭ থেকে ৪৫ সেমি লম্বা, অরোমশ, শেষোক্ত শাখার দুই সারি রোম থাকে। সাধারণত জলা জমিতে, পতিত নিচু জমিতে আপনা-আপনিই জন্মে। মূলের নিকটবর্তী পর্ব থেকে সরু শিকড় বেরিয়ে মাটিতে গেঁথে যায়। রসযুক্ত বা জলা জমিতে জন্মানো লতাটির পাতা সবচেয়ে বড় হলেও তা ৫ থেকে ৮ সেমি-এর বেশি লম্বা হয়। পাতা মাংসল। কোনো কোনো সময় দর, আয়ত-উপবৃত্তাকৃতি, চমৎকার সবুজ।
ফুল অদৃশ্যপ্রায়, চ্যাপ্টা, গোলাকৃতি, মেয়েদের কানের ফুলের মতো, রং সাদা। ফলও চ্যাপ্টা ফলের বাইরের দিকটায় একটা আবরণ থাকে এবং ভিতরে ছোট ছোট বীজ থাকে। গুচ্ছে, ফুল জন্মে ডাঁটা পুষ্পবিন্যাসের মতো দেখতে, তবে ছোট। বীজ ১.২৫ থেকে ১.৫ মিমি সাব-আরবিকুলার। এর উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম- Alternanthera sessilis (Linn.) DC. পূর্বনাম (Synonym)- A. triandra Lam. A denticulata K. Br. গোত্র এমারাস্থ্যাসী।
শাচী শাক-এর ভেষজ গুণ:
এই শাক আগাছার মতো হলেও; এটি শাক হিসাবে যেমন খাওয়া যায় তেমনি ঔষধ হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। প্রয়োগের সঠিক নিয়ম জানা থাকলে আমরা বাড়িতে বসেই কিছু রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা করতে পারব।
১. পেটে ক্রিমির সমস্যায়: ক্রিমিতে দাঁত কালো হয়ে যায়, মুখে গন্ধ হয়, নারীদের স্তন্য বাড়তে দেয় না। পেটের ক্রিমিতে শাচীর রস ২ চামচ এবং সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে গরম করে সকালে খালি পেটে কয়েকদিন খেলে পেটের ক্রিমি ও তার ডিম ধ্বংস হয়।
২. আলস্য দূর করতে: সামান্য অবসরে যারা তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন, তারা সাচিশাক রান্না করে খেলে বা এর রস এবেলা ওবেলা এক চামচ করে খেলে উপকার হবে।
৩. অতি ভোজনের সমস্যায়: আহার যে পরিমাণে গ্রহণ করা হয় তার চেয়ে অধিক এবং আহার্য দ্রব্যগুলো অর্ধপক্ব অবস্থায় বেরিয়ে এলে ১ থেকে ১.৫ চামচ শাচী শাকের রস একটু গরম করে প্রতিদিন একবার করে কয়েকদিন খেলে এ অসুবিধা চলে যায়।
৪. লালা ঝরা বন্ধ করতে: অল্পতেই তন্দ্রা এবং সঙ্গে সঙ্গে মুখ থেকে লালা ঝরে। এ অবস্থায় ১-১.৫ চামচ সাচি শাক-এর রস দিনে একবার বা দুবার খেলে উপকার হয়।
৫. পেটের সমস্যায় সারাতে: অপরিপাক, বদহজম প্রভৃতি কারণে অল্পবয়সী মেয়েদের যখন লাবণ্য চলে যায়। তখন এর ১ চামচ রসের সঙ্গে ৩ থেকে ৪ চামচ পানি এবং ২-৫ ফোটা মধু মিশিয়ে এ-বেলা ও-বেলা খেতে হবে। ফলে কয়েকদিনে লাবণ্য ফিরে আসবে।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. ড. সামসুদ্দিন আহমদ: ওষুধি উদ্ভিদ (পরিচিতি, উপযোগিতা ও ব্যবহার), দিব্যপ্রকাশ, বাংলাবাজার, ঢাকা, জানুয়ারি ২০১২, পৃষ্ঠা, ১১২-১১৩।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Vengolis
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।