সমস্ত বাংলা ও ভারতবর্ষে বট একটি সুপরিচিত নাম। আর সেজন্য এই গাছের বিশেষ পরিচিতির কোন প্রয়োজন নাই। এই গাছের বিস্তারিত পরিচিতি পড়ুন এই লিংক থেকে।
ঔষধার্থে বট গাছের ছাল, দুধ অর্থাৎ ক্ষীর, শুঙ্গ অর্থাৎ অঙ্কুর, পাতা, ফল ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। বটের আঠা পা ফাটা সারায়। বটের ছাল দেহের মেদ কমায়। হাড় মচকে গেলে এর ছাল বেটে গরম করে মালিস করলে আরাম পাওয়া যায়। ভারতীয় উপমহাদেশসহ গোটা দুনিয়ায় ঔষধি ব্যবহার অনুসারে বট গাছের নানা বৈচিত্র্য রয়েছে। নিচে সেগুলো উল্লেখ করা হলো।
প্রয়োগ ক্ষেত্রে:
১. আমাতিসার: যেখানে দাস্তের সঙ্গে শরীরের জ্বালা থাকে, সেখানে পিত্তবিকার হয়েছে এইটাই প্রমাণিত; কেবলমাত্র সেই আমাশয়ে বটের কুঁড়ি বা পাতার শীর্ষভাগের অংশটি ২টি করে বেটে তিন ঘন্টা অন্তর ২ বা ৩ বার আতপ চাল ধোওয়া জল দিয়ে খেতে দিলে ওটার উপশম হবে। তবে শিশু বা বালকের মাত্রা বয়সানুপাতে। এটাতে দুদিনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সফল পাওয়া যায়।
২. নাক দিয়ে রক্ত পড়া: নাসা বা পলিপাস নেই এবং হাই প্রেসারও নেই, অথচ রক্ত পড়ছে এক্ষেত্রে রুক্ষতাই এর কারণ। এখানে বটের কুঁড়ি বা পাতা, ঝুরি ও ছাল একসাথে মিশিয়ে ৮ থেকে ১০ গ্রাম করে তাতে ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে, ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ছেকে, একটু দুধ মিশিয়ে খেতে হবে। সুশ্রুত সংহিতায় উক্ত আছে এটা রক্তপিত্তে ও দেওয়া যায়।
৩. যোনির অর্শে: এখানেও অর্শের মতো বলি হয়, অনেক সময় ব্যথা ও অল্প স্রাব হয়, কিন্তু সেটা রক্ত নয় এবং একটা আসটে গন্ধও থাকে। এক্ষেত্রে ৮ থেকে ১০ গ্রাম বটের ছাল থেতো করে ১ কাপ গরম জলে ভিজিয়ে রেখে, সেটা ছেঁকে অর্ধেকটা জল খেতে হবে আর বাকী অর্ধেকটা দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
৪. শুক্রতারল্যে: যাকে আমরা চলতি কথায় বলি ধাতু পাতলা, শুক্রটা জলের মত পাতলা হয়ে গিয়েছে, ধারণের শক্তি কম, অল্প উত্তেজনায় ক্ষরিত হয়, এক্ষেত্রে বটের আঠা ৩০ থেকে ৪০ ফোঁটা দুধে মিশিয়ে সকালে বিকালে ২ বার খেতে হবে। এটাতে কয়েকদিনের মধ্যেই ওটার যে ঘনত্ব আসছে সেটা প্রত্যক্ষ করবেন।
৫. ধসা মেদ: ঢোলা শরীর, মেদের যেন কোনো আঁটসাঁট নেই; সেক্ষেত্রে ৫ থেকে ৬ গ্রাম বটের ছাল থেতো করে এক কাপ গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে, পরের দিন ছেকে ওটা সকালে ও বিকালে দুই বারে খেতে হবে।
৬. দাহ রোগে: কি গ্রীষ্ম কি বসন্ত, কি সকাল কি বিকাল, সর্বদাই গায়ে জ্বালা, হাওয়াতেও যেন স্বস্তি হচ্ছে না; এক্ষেত্রে ৫০ বা ১০০ গ্রাম আন্দাজ বটের ছাল ১ লিটার জলে সিদ্ধ করে সিকি থাকতে নামিয়ে, ছেকে অন্য জলের সঙ্গে মিশিয়ে সেই জলে গোসল করা আর ঐ সিদ্ধ জল ২ থেকে ৩ চা চামচ নিয়ে খেতে হবে, তবে খাওয়ার সময় একটু দুধ মিশিয়ে খেলে ভাল হয়।
৭. রক্তপ্রদর (স্ত্রী-রোগ): মাসিক হলে দীর্ঘদিন ধরে চলে, কখনও বেশী কখনও কম, প্রস্রাবে গন্ধ থাকে, আবার এটা কমে গেলে চুলকায়, এক্ষেত্রে বট ছাল ৫ গ্রাম ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছেকে একটু দুধ ও চিনি মিশিয়ে খেতে হবে। তবে ছাগল দুধ হলে ভাল হয়। তবে এটা সিদ্ধ করার সুবিধা না হলে ওটা থেতো করে গরম জলে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন ছেঁকেও খাওয়া যাবে ।
৮. ফোড়া (স্থান বিশেষের): বেয়াড়া জায়গা, সেখানে কমপ্রেস করতে নেই আবার করাও অসুবিধে, সেখানে বটের কচিপাতা বেঁটে লাগিয়ে দিতে পারলে ওটা বসে যায়, কারণ এসব জায়গায় পাকানো বা ফাটানো উচিত নয়।
৯.পা ফাটায়: এটা হয় বায়ু, পিত্তাধিক্য প্রকৃতির লোকের। যাদের ফাটে তাদের স্বভাবটা হবে নিজের কোলে ঝোলটা বেশী টানা, আত্মম্ভরিতায় তাঁরা সদা তৎপর। তারা পায়ে ফাটা আসছে দেখলেই তা সরাতেই বটের আঠা পায়ের গোড়ালি বা ধারে লাগিয়ে দেবেন, ওটা আর আসবে না।
১০. মেস্তায়: রূপ থাকতেও রূপের বড়াই করা যায় না, আবার লুকোবারও উপায় নেই, অথচ ঘষে মেজেও যায় না, এ সমস্যা সমাধানের উপায় বটের শুঙ্গ, অর্থাৎ ফল বেরোবার আগে এটা হয়, আর মসুরির ডাল একসঙ্গে বেঁটে মুখে লেপে দিতে হবে; তবে দাস্ত পরিষ্কার যেন হয় সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে।
১১. হাড় মচকে যাওয়ায়: বটের ছাল বেঁটে অল্প গরম করে প্রলেপ দিয়ে উপর ও নিচে একটু শান্ত জিনিস চাপা দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। কয়েকদিন একনাগাড়ে বেঁধে রাখলে ঐ মচকানোটা ঠিক হয়ে যাবে।
১২. দন্তশুল: বটের আঠা লাগালে উপশম হয়।
১৩. পতিত স্তনে: বটাবরোহ বা বটের ঝুরি অগ্রভাগের কাঁচ অংশটা জলে বেঁটে চন্দনের মত করে স্তনে লাগালে শৈথিল্য কমে যায়।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রচার্য: ‘চিরঞ্জীব বনৌষধি‘ খন্ড ২, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৪, পৃষ্ঠা,৫১-৫৬।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: J.M.Garg
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।