রাজ ঢেকিয়া দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ভেষজ ফার্ন

ফার্ন

রাজ ঢেকিয়া

বৈজ্ঞানিক নাম: Angiopteris evecta (Forst) Hoffm., Comm. Soc. Reg. Gott. 12: 29, t. 5 (1796). সমনাম: Polypodium evectum Forst (1786). ইংরেজি নাম: কিং ফার্ন। স্থানীয় নাম: ঢেকিয়া শাক, রাজ ঢেকিয়া।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae, বিভাগ: Tracheophytes.বর্গ: Marattiales. পরিবার: Marattiaceae. গণ: Angiopteris, প্রজাতি: Angiopteris evecta.

ভূমিকা: রাজ ঢেকিয়া (বৈজ্ঞানিক নাম: Angiopteris evecta) হচ্ছে এশিয়ার ভেষজ উদ্ভিদ। এর পাতা, মূলে নানা ভেষজ গুণ আছে। প্রাকৃতিক পরিবেশে অনায়াসে জন্মাতে পারে।

রাজ ঢেকিয়া-এর বর্ণনা:

অরণ্যের মাটিতে একটি সহজলভ্য স্থলজ ফার্ন। গ্রন্থিক খাড়া, প্রায়শ ৬০ সেমি পুরু।

পত্রদন্ড ১০০-১৭৫ সেমি লম্বা, কখনো কখনো অধিকতর লম্বা, সবুজ, বিক্ষিপ্ত সাদাটে আঁকাবাঁকা ডোরা বা দাগসহ মসৃণ।

পাতা দ্বি-পক্ষল, সাধারণতঃ ২০-৪০ সেমি লম্বা, ২-৪ সেমি চওড়া, পত্রাক্ষ (রাকিস) সবুজ, বিশেষ করে নিচের তলে পাতলাভাবে শঙ্ক অথবা রোমযুক্ত।

পত্রক ১২-১৮ X ২-৪ সেমি, ২-৩ সেমি দূরে দূরে পক্ষক বিশিষ্ট, পক্ষক ৪.৫১৪.০ X ১.৩ সেমি, রেখাকার-আয়তাকার, বৃন্তহীন অথবা সামান্য বৃন্তক, শীর্ষ দীর্ঘাগ্রী, প্রান্ত দন্তর, বিশেষ করে।

শীর্ষের দিকে বয়নবিন্যাস কোমল হতে প্রায় চর্মবৎ, মসৃণ, চকচকে। শিরা সরল অথবা স্বরিত্র। মধ্য শিরার প্রায় কোণে।

উভয় তলে উত্তোলিত, পুনরাবৃত্ত শিরা পাতলা, সরু, সাধারণতঃ সুস্পষ্ট নয়, সোরাস এর অনেক দূরে, প্রান্তের থেকে প্রায় ১ মিমি, সাধারণতঃ ৭-১৪ রেণুস্থলী বিশিষ্ট।

সোরাসগুলি উপ-প্রান্তিক, প্রান্তের প্রায় ১ মিমি দূরে, প্রতি থলেতে ৮-১২টি রেণুস্থলী বিশিষ্ট।

রেণুস্থলীর ক্যাপসুল। একে অপরের কাছাকাছি গোলাকার নকশায় বিন্যস্ত, আকার ৪৫০ X ৪৩০ মাইক্রোমিটার।

রেণু ত্রি-কেন্দ্রিকাযুক্ত, পেরিস্পোর (perispore) বিশিষ্ট, ডিম্বাকার হতে গোলাকার হলুদ হতে বাদামী, ২৩-৩৪ x ১৯-৩০ মাইক্রোমিটার।

ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ৮০, ১৬০ (de Winter and AmorOSO, 2003)।

আবাসস্থল: ছায়াময় নদীর তীর অথবা চড়াই উৎড়াই এর মাটি।

রাজ ঢেকিয়া-এর বিস্তৃতি:

মাদাগাস্কার এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় এশিয়া, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সর্বত্র হতে অস্ট্রেলিয়া এবং পলিনেশিয়া। বাংলাদেশে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট জেলায় এই প্রজাতি পাওয়া যায় (Mirza and Rahman, 1997)।

আরো পড়ুন:  হাড়ভাঙ্গা লতা বাংলাদেশের বনাঞ্চলে জন্মানো ভেষজ প্রজাতি

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

এই প্রজাতির উপপত্রগুলিতে শর্করা থাকে যা কখনো কখনো খাদ্যাভাবের সময় খাওয়া হয় এবং অ্যালকোহল চোলাই করার সময় ব্যবহার করা হয় (de Winter and Amoros0, 2003)।

জাতিতাত্ত্বিক ব্যবহার:

গ্রন্থিকন্দের নিষ্কাশিত ক্বাথ গর্ভপাত এর পর রক্ত বন্ধ করার জন্য ব্যবহৃত হয় এবং সবুজ সীম এর সাথে সিদ্ধ করা গ্রন্থিক বেরিবেরি চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

রক্তক্ষরণে, বিশেষ করে বিষক্রিয়ার কারণে রক্তক্ষরণে। রোগীর চিকিৎসায় গ্রন্থিকন্দ পান এবং আদার সাথে চিবানো হয়।

পাতা এবং গ্রন্থিক কোন কোন দেশে উম্মাদক পানীয় হিসাবে ব্যবহৃত হয় (Uddin et al., 1998a)।

রাজ ঢেকিয়া-এর বংশবিস্তার:

গ্রন্থিক এবং রেণু দ্বারা তবে রেণু দ্বারা। বংশবিস্তার অত্যন্ত ধীরে সম্পন্ন হয়। উপপত্রের উপর অস্থানিক মুকুল দ্বারা অঙ্গজ বংশবিস্তার কখনো কখনো বেশী কার্যকরী।

স্ফীত গোড়া থেকে উদ্ভূত চারা কেটে জৈবস্তুপ বিশিষ্ট দো-আঁশ মাটিতে লাগানো যায়। নতুন উদ্ভিদ গজানোর জন্য উপপত্রের কাটা অংশ লাগানো হয়।

এছাড়াও কাটা দিকটি মিশ্র জৈব সার বিশিষ্ট মাটিতে অথবা ভেজা স্যাতসেঁতে মাটিতে লাগানো যায় (de Winter and AmorOS0, 2003)।

অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের  ৫ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) রাজ ঢেকিয়া প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত।

বাংলাদেশে রাজ ঢেকিয়া সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।

তথ্যসূত্র:

১. মমতাজ মহল মির্জা (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৫ম, পৃষ্ঠা ২৪৫-২৪৬। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Krzysztof Ziarnek, Kenraiz

আরো পড়ুন:  করবী গাছ নানা রোগের ভেষজ চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়

Leave a Comment

error: Content is protected !!