সুগন্ধি ফুলের মধ্যে জুই জাতীয় ফুলগুলি অন্যতম। ইহাদের মৃদুমন্দ সুমিষ্ট গন্ধের জন্য এই জাতীয় ফুলের কদর বেশি। জুঁই ফুলের পাপড়ি হতে সুগন্ধি তৈল নিষ্কাশন করে বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রীতে ব্যবহার করা হয়। সেই জন্য, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে জুই ফুলের চাষ খুব লাভজনক। এক হেক্টর জমিতে জুই ফুল চাষের জন্য খরচ পড়ে প্রায় ১০,০০০ টাকা। কিন্তু এই খরচ করে আয় হয় প্রায় ২০ হাজারের মতো।
জুঁইয়ের প্রজাতি
১. জেসমিন ওরিকুলেটাম—ইহার সিঙ্গল ও ডবল ফুলের দুইটি জাত আছে।
২. জেসমিন গ্র্যানডিফ্লোরাম ইহা চামেলী নামে পরিচিত ও সুগন্ধযুক্ত।
৩. জেসমিন অগাস্টিফোলিয়াম-‘মল্লিকা’ নামে পরিচিত। ফুল মৃদু সুগন্ধযুক্ত।
৪. জেসমিন ওডারেটাম—সুগন্ধযুক্ত ছোট ফুল।
৫. জেসমিন পেনিকুলেটাম-সুগন্ধযুক্ত ছোট ফুল ।
৬. জেসমিন ফ্লোরিডাম- সোনালী রঙের সুগন্ধযুক্ত ফুল।
৭. জেসমিন আরবোরিসেন্স-ইহা ‘নব মল্লিকা’ নামে পরিচিত।
৮. জেসমিন পিউবিন্সেস- ইহা ‘কুন্দ নামে পরিচিত ও সুগন্ধযুক্ত।
৯. জেসমিন স্যামব্যাক- ইহা ‘বেলা’ বা ‘বেলফুল’ নামে পরিচিত।
১০. জেসমিন হিউমাইল- সোনালী রঙের চামেলী। সুমধুর গন্ধবিশিষ্ট ফুল হয়।
জমি প্রস্তুত
১. মোল্ডবোর্ড লাঙ্গল বা কোদাল দ্বারা প্রাথমিক কর্ষণের পর দেশী লাঙ্গল দ্বারা লম্বা ও আড়াআড়িভাবে ২/৩ বার কর্ষণ করে মই দিয়ে জমি সমতল করে চারা রোপণের জন্য প্রস্তুত করতে হবে।
২. তারপর, সারি হতে ৯০ সেঃ মিঃ ও গাছ হতে গাছের দূরত্ব ৬০ সেঃ মিঃ রেখে ৪৫X ৪৫x৩০ সেঃ মিঃ আকারের গর্ত খনন করতে হবে।
৩. প্রতি গর্তে ১০ থেকে ১৫ কেজি গোবর সার ও এক কেজি কাঠের ছাই প্রয়োগ করে মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে দিতে হবে ।
চারা রোপণ
সাধারণতঃ জুলাই মাসে চারা রোপণ করা হয়। কাটিং বা শাখা-কলম, দাবা-কলম (দুটি) অথবা মাতৃ উদ্ভিদ হতে শিকড়সহ পৃথক চারা বংশ বিস্তারের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই চারা প্রতিটি গর্তে ৮-১০ সেঃ মিঃ গভীরতায় সোজাভাবে রোপণ করতে হবে।
পরিচর্যা
১. বর্ষাকালে জলসেচনের বিশেষ প্রয়োজন হয় না। শুধু মাঝে মাঝে কোদাল দিয়ে কোপাইয়া মাটি আলগা করে দিতে হবে এবং আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। শীতকালে ও গ্রীষ্মকালে নিয়মিত সেচ দিতে হবে।
২. জুই গাছে মাকড় এবং পত্রভুক পোকার উপদ্রব দেখা যায়। এই কীট-শত্রুগুলি দমনের জন্য কেলথেন ১৮ ই. সি.-র।
গাছ ছাঁটাই
গাছ ছাঁটাইয়ের উপর ফুল উৎপাদন নির্ভর করে। জানুয়ারী মাসের মাঝামাঝি গাছ ছাঁটাই করতে হবে। ছাটায়ের ১৫ দিন আগে হতে জমিতে জলসেচ বন্ধ করতে হবে। মাটি হতে ৭৫-৯০ সেঃ মিঃ উচ্চতা পর্যন্ত রেখে পুরাতন শাখাগুলির বাড়তি অংশ ঘঁটিয়া দিতে হবে। তারপর, প্রতি গাছের পুরাতন পাতাগুলিও হুঁটিয়া ফেলতে হবে। ছাঁটাইয়ের এক সপ্তাহ পরে প্রতিটি গাছের গোড়া হতে মাটি সরিয়ে সার প্রয়োগ করে সেচ দিতে হবে।
সার প্রয়োগ
জুই গাছের বর্ধনশীল নরম কান্ড ও শাখায় পুষ্প মুকুল আসে বলে এদের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট সার প্রয়োগ করা দরকার। গাছ ছাঁটাইয়ের পর জানুয়ারী মাসে একবার ও জুলাই মাসে আর একবার সার প্রয়োগ করতে হয়। প্রতিবারে গাছ পিছু খামারের সার ১৫ কেজি অ্যামোনিয়াম সালফেট ৩০০ গ্রাম, সিঙ্গল সুপার ফসফেট ৭৫০ গ্রাম এবং মিউরিয়েট অফ পটাশ ২০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। গাছের চারিধারে অগভীর মাদায় এই সার প্রয়োগ করে মাটি চাপা দিতে হবে।
জলসেচন
ফুলের বড় কুঁড়ি উৎপাদনের জন্য নিয়মিত সেচের আবশ্যক। জানুয়ারী মাসে সার প্রয়োগের পর হতে প্রতি ৪ দিন অন্তর সেচ প্রয়োগ করলে বড় বড় কুঁড়ি হয় এবং ফুলের উৎপাদনও বেশী হয়। সেচের অভাব হলে, কুঁড়ি ছোট হইয়া যায় অথবা শুকাইয়া নষ্ট হইয়া যায়।
ফুল সংগ্রহ
সাধারণত বসন্তকালের শুরু হতে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাঝি সময় হতে বিভিন্ন জাতের জুই গাছে ফুল ফুটিতে আরম্ভ করে এবং বর্ষার প্রারম্ভ পর্যন্ত ফুল ফোটা চলতে থাকে । বাজারে বিক্রয় করতে হলে, সন্ধ্যার আগে প্রস্ফুটিত পুষ্পগুচ্ছ চয়ন করে কলাপাতার মোড়কে স্থানীয় বাজারে পাঠানো হয় অথবা পরদিন সকালে দূরের বাজারে প্রেরণ করা হয়। ফুলের পাপড়ি হতে বান তৈল নিষ্কাশনের জন্য সদ্য ফোটা ফুল কারখানায় পাঠানো হয়।
তথ্যসূত্র:
১. সিরাজুল করিম আধুনিক পদ্ধতিতে ফুলের চাষ প্রথম প্রকাশ ২০০১ ঢাকা, গতিধারা, পৃষ্ঠা ১৩০-১৩১। আইএসবিএন 984-461-128-7
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।