ভূমিকা: পাতি টগর বা টগর (বৈজ্ঞানিক নাম: Tabernaemontana divaricata) হচ্ছে Apocynaceae পরিবারের Tabernaemontana গণের গুল্ম। এটি অনেকে প্রতিষ্ঠানে বা গৃহের শোভাবর্ধনের জন্য লাগিয়ে থাকে।
বর্ণনা: টগর দেখতে সরু, ঝোপালো আকৃতির গুল্ম, দ্ব্যাগ্র শাখা বিন্যাসিত। বাকল ধূসর-সাদা, মসুরাকার। পত্র প্রতিমুখ, মসৃণ, পত্রবৃন্ত অনূর্ধ্ব ১.৫ সেমি লম্বা, পত্রফলক ৫-১২ x ২-৩ সেমি, উপবৃত্তাকার, আয়তাকার, দীর্ঘাগ্র, বীরুৎ সদৃশ, দূরস্থ পার্শ্ব শিরাসমূহ সরু, ৫-৬ জোড়া। সাইম পুষ্পদন্ডবিশিষ্ট, দ্ব্যাগ শাখা বিন্যাসিত প্রান্তীয় বা কাক্ষিক সমভূমঞ্জরী।
টগরের ফুল সাদা হয়। বৃতি খন্ড ডিম্বাকার-আয়তাকার, স্থূলাগ্র। দলমণ্ডল সাদা, নল প্রায় ২ সেমি লম্বা, সংকীর্ণভাবে বেলনাকার, খন্ডসমূহ দৈর্ঘ্যে নলের তুলনায় বৃহত্তর, বিষমাকারে ডিম্বাকার, মুকুল অবস্থায় বাম দিকে অধিক্রমনিত।
পুংকেশর অন্তর্ভূক্ত, পরাগধানী অর্ধ-বৃন্তক, দীর্ঘায়। গর্ভপত্র ২টি, স্বতন্ত্র, গর্ভমুণ্ড দ্বি-কোষ্ঠী। ফলিক্যাল দূরাপসারী, অনূর্ধ্ব ৮ সেমি লম্বা, মাংসল, অভ্যন্তরে কমলা-লাল। বীজ কিছুমাত্রায় বহুসংখ্যক, গুচ্ছরোম বিহীন।
ফুল ও ফল ধারণ: টগরের ফুল মে থেকে জানুয়ারি মাসে ফোটে।[১]
ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ২২, ৩৩. [২]
আবাসস্থল ও চাষাবাদ: বাগান এবং পাহাড়ি অঞ্চল এই গাছ জন্মে থাকে তবে বাগানে লাগানো হয় শোভাবর্ধনের জন্য। বীজ এবং কাণ্ড ও মূলের কাটিং দ্বারা নতুন চারা করা হয়।
বিস্তৃতি: ভুটান, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, মায়ানমার এবং থাইল্যাণ্ড । বাংলাদেশে ইহা দেশের সর্বত্র পাওয়া যায়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্বের দিক: বীজের চারপাশের লাল আঁশালো অংশ রঙ তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। (Deb, 1983)। প্রধানত পিত্ত দুষ্টতায় ও পক্ষাঘাতে এর শিকড় ব্যবস্থাপত্র হিসেবে দেয়া হয়। দাঁতের যন্ত্রণায় ইহার শিকড় চর্বণ হিসেবে ব্যথার উপশমে ব্যবহৃত হয়। (Benthall, 1933)। তরুক্ষীর প্রদাহের উপশমে ব্যবহৃত হয়। রস মাথায় ঘসে চোখের ব্যথার উপশমে ব্যবহৃত হয় (Sanjal, 1924)।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: পুষ্পগুলো বিশেষত বিভিন্ন ধর্মীয়গোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয় (Rahman et al., 2000)।।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) টগর প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে টগর সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।[৩]
তথ্যসূত্র:
১. এম আতিকুর রহমান (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ২১১-২১২। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
২. Kumar, V. and Subramaniam,, B. 1986 Chromosome Atlas of Flowering Plants of the Indian Subcontinent. Vol.1. Dicotyledons Botanical Survey of India, Calcutta. 464 pp.
৩. এম আতিকুর রহমান প্রাগুক্ত, প. ২১১-২১২।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Forest and Kim Starr
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।