উলট চন্ডাল আলংকারিক ও ভেষজ গুণ সম্পন্ন আরোহী বীরুৎ

বীরুৎ

উলট চন্ডাল

বৈজ্ঞানিক নাম: Gloriosa superba L., Sp. Pl.: 305 (1753). ইংরেজি নাম: সুপার্ব লিলি, মালাকার গ্লোরি লিলি, ক্লাইম্বিং লিলি। স্থানীয় নাম: উলট চন্ডাল, বিশ্লানগুলি, বিলাম বুলি, অগ্নিশিখা, কালিহারি।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms. অবিন্যাসিত: Monocots. বর্গ: Liliales. পরিবার: Colchicaceae. গণ: Gloriosa  প্রজাতির নাম: loriosa superba

ভূমিকা: উলট চন্ডাল, বিশ্লানগুলি, বিলাম বুলি, অগ্নিশিখা বা কালিহারি (বৈজ্ঞানিক নাম Gloriosa superba ইংরেজি: সুপার্ব লিলি, মালাকার গ্লোরি লিলি, ক্লাইম্বিং লিলি) কলচিকাসি পরিবারের,  গ্লোরিয়াসা গণের একটি বিরুৎ।

এটি উষ্ণ দেশসমূহের প্রজাতি। লাল ফুল বিশিষ্ট উলট চন্ডাল বেশ আকর্ষণীয়। বাগানের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য লাগানো হয়। এই নানা ভেষজ গুণও আছে।

উলট চন্ডাল-এর বর্ণনা:

উলট চন্ডাল আরোহী বীরুৎ। ভূনিম্নস্থ মূলাকার কান্ড বহুবর্ষজীবী, শক্ত, সাদা, রসালো, পাতলা বাদামী পর্দায় আবৃত, পরিপক্ক মূলাকার কান্ড ১৫-৩০ × ২.৫-৩.৮ সেমি, প্রতি প্রান্ত সূচকৃতি, দ্ব্যাগ্রশাখান্বিত। বায়বীয় কান্ড সবুজ, রোমশ বিহীন, প্রায় ১ মিটার বা ততোধিক লম্বা।

পত্র অবৃন্তক, ৭.৫-১৫.০ × ০.২-৪.৫ সেমি, ছড়ানো বা প্রতিমুখ, বল্লমাকার, দীর্ঘা, শীর্ষ সর্পিলাকার পত্র আকর্ষে সমাপ্ত, মূলীয় অংশ তাম্বুলাকার, শিরা বিন্যাস সমান্তরাল।

উলট চন্ডালের ফুল বড় হয়। দৈর্ঘ্য ৩.৭ ও প্রস্থ ৮.০ সেমি, অক্ষীয়, একল, বৃন্ত ৬.৭-৯,৭ সেমি লম্বা, সংনমিত। পুষ্পপুট খন্ড ৬.৩ × ০.৮-১.৩ সেমি, রৈখিক বল্লমাকার, প্রান্ত কুঞ্চিত, প্রথমে সবুজ পরে হলুদ থেকে কমলা বর্ণ এবং শেষে গাঢ় লাল।

উলট চন্ডাল ফুলের পুংকেশর ৬ টি, পুংদন্ড ৩-৫ সেমি লম্বা, ছড়ানো, পরাগধানী ১.৩ সেমি লম্বা, সর্বমুখ, পরাগরেণু ডিম্বাকার, হলুদ।

গর্ভকেশর ৩গর্ভপত্রী, গর্ভাশয় অধিগৰ্ভ, ৩-প্রকোষ্ঠী, অমরাবিন্যাস অক্ষীয়, গভর্দন্ড ৫.৩ সেমি লম্বা, গর্ভমুণ্ড সাধারণত ৩ খন্ডিত।

ক্যাপসুল ৫.৫ x ২.০ সেমি, রৈখিক দীর্ঘায়ত, প্রথমে সবুজ পরিণত অবস্থায় গাঢ় লাল, পটী বিদারী।

বীজ অর্ধ গোলাকার, গাঢ় লাল, ০.৬x ০.৫ সেমি।[১] ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২২, ৮৮, ৯০ (Bose and Yadab, 1989)।

আরো পড়ুন:  নারকাটা সপুষ্পক আরোহী লতা

বংশ বিস্তার ও চাষাবাদ:

কন্দ ও বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার। বন্য উদ্ভিদরূপে উঁচু ভূখন্ড, পাহাড়ী অঞ্চলে জন্মে। বাহারি বীরুৎ রূপে বাগানে চাষাবাদ হয়।

গ্রীষ্ম ও বর্ষায় ফুল ফোটে। শরৎকালে গাছ শুকাতে থাকে এবং শীতকালে মারা যায়।

গ্রীষ্মে শুকনো মাংসল গুচ্ছ থেকে নতুন চারা জন্মে। ফুল ও ফল ধারণ জুলাই থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে।[২]

উলট চন্ডাল-এর বিস্তৃতি:

পৃথিবীর উষ্ণ অঞ্চল-আফ্রিকা (উষ্ণাঞ্চল), ভারত (হিমালয় ও আসাম), শ্রীলংকা, মায়ানমার, ভিয়েতনাম, মালয় পেনিনসুলা। বাংলাদেশের গাজীপুর, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় জন্মে।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও ভেষজ গুণ:

কলসিসিন নামক ক্ষারীয় পদার্থ থাকার জন্য এর মূল পেটের পীড়ায় উপকারী। মূল থেকে প্রান্ত শ্বেতসার গনোরিয়া রোগ নিরাময়ের জন্য খাওয়া হয়।

কন্দাল মূল সঙ্কোচক, কাশরোগ উপসমকারী, অর্শ্বরোগের রক্তস্রাব কমাতে ও তৃষ্ণা নিবারণে এটি ব্যবহৃত হয়।

পুলটিস তৈরি করে বাতের ব্যথায় ও কন্দমূল ব্যবহার করা হয়।

মূলের ক্ষার সুপারবাইন ও কলসিসিন তিক্ত, তাই অতিমাত্রায় এর ব্যবহার বিষাক্ত কিন্তু অল্প মাত্র (৫-১০ গ্রেইন) রেচকরূপে ব্যবহার্য।

জাতিতাত্বিক ব্যবহার:

উলট চন্ডালের রয়েছে নানা ভেষজ গুণ। কলসিসিন নামক ক্ষারীয় পদার্থ থাকার জন্য এর মূল পেটের পীড়ায় উপকারী। মূল থেকে প্রান্ত শ্বেতসার গনোরিয়া রোগ নিরাময়ের জন্য খাওয়া হয়।

কন্দাল মূল সঙ্কোচক, কাশরোগ উপসমকারী, অর্শ্বরোগের রক্তস্রাব কমাতে ও তৃষ্ণা নিবারণে এটি ব্যবহৃত হয়।

মূলের ক্ষার সুপারবাইন ও কলসিসিন তিক্ত, তাই অতিমাত্রায় এর ব্যবহার বিষাক্ত কিন্তু অল্প মাত্র (৫-১০ গ্রেইন) রেচকরূপে ব্যবহার্য। পুলটিস তৈরি করে বাতের ব্যথায় ও কন্দমূল ব্যবহার করা হয়।

রাসায়নিক উপাদান:

কন্দ, ফুল ও বীজে কলচিসিন ও গ্লোরিওসিন অ্যালকালয়েড, ফিনোলিক, লুটিওলিন ও বিটা সাইটোস্টেলল রয়েছে।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১১তম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০)  উলট চন্ডাল প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এই প্রজাতিটির শোষণ ক্ষমতা বেশি এবং বাংলাদেশে এটি সংরক্ষণ নির্ভর হিসেবে বিবেচিত।

আরো পড়ুন:  জয়তি সারা দুনিয়ার শোভাবর্ধক আলংকারিক ফুল

বাংলাদেশে উলট চন্ডাল সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটি স্ব-স্থান ও স্ব-স্থানের বাইরে সংরক্ষণ জরুরি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ উদ্যানে অনেক গাছ সংরক্ষণ করা হয়েছে।[১]

তথ্যসূত্র:

১.   এম এ হাসান  (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১১তম (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৬৪-৩৬৫। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

২. দ্বিজেন শর্মা লেখক; বাংলা একাডেমী ; ফুলগুলি যেন কথা; মে ১৯৮৮; পৃষ্ঠা- ৬৪, আইএসবিএন ৯৮৪-০৭-৪৪১২-৭

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Captain-tucker

Leave a Comment

error: Content is protected !!