আমি ভীষণ ভালোবাসতাম আমার মা-কে
— কখনও মুখ ফুটে বলি নি।
টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে
কখনও কখনও কিনে আনতাম কমলালেবু
— শুয়ে শুয়ে মা-র চোখে জলে ভ’রে উঠত।
আমার ভালোবাসার কথা
মা-কে কখনও আমি মুখ ফোটে বলতে পারি নি।
হে দেশ, হে আমার জনন—
কেমন ক’রে তোমাকে আমি বলি!
যে মাটিতে ভর দিয়ে আমি উঠে দাঁড়িয়েছি-
আমার দু-হাতের
দশ আঙুলে
তার স্মৃতি।
আমি যা কিছু স্পর্শ করি
সেখানেই,
হে জননী,
তুমি।
আমার হৃদয়বীণা
তোমারই হাতে বাজে।
হে জননী,
আমরা ভয় পাই নি।
যারা তোমার মাটিতে নিষ্ঠুর থাবা বাড়িয়েছে
আমরা তাদের ঘাড় ধ’রে
সীমান্ত পার করে দেব।
আমরা জীবনকে নিজের মতো ক’রে
সাজাচ্ছিলাম—
আমরা সাজাতে থাকব।
হে জননী,
আমরা ভয় পাই নি।
যজ্ঞে বিঘ্ন ঘটেছে ব’লে
আমরা বিরক্ত।
মুখ বন্ধ করে,
অক্লান্ত হাতে—
হে জননী,
আমরা ভালোবাসার কথা বলে যাব।।
সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯ – ৮ জুলাই ২০০৩) ছিলেন বিশ শতকের উল্লেখযোগ্য বাঙালি বামপন্থী কবি ও গদ্যকার। তিনি কবি হিসেবে খ্যাতিমান হলেও ছড়া, প্রতিবেদন, ভ্রমণসাহিত্য, অর্থনীতিমূলক রচনা, অনুবাদ, কবিতা সম্পর্কিত আলোচনা, উপন্যাস, জীবনী, শিশু ও কিশোর সাহিত্য ইত্যাদি রচনাতেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন। সম্পাদনা করেছেন একাধিক গ্রন্থ এবং বহু দেশি-বিদেশি কবিতা বাংলায় অনুবাদও করেছেন। “প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য় এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা” বা “ফুল ফুটুক না ফুটুক/আজ বসন্ত” প্রভৃতি তাঁর অমর পঙক্তি বাংলায় আজ প্রবাদতুল্য।