ভূমিকা: অনন্তমূল (বৈজ্ঞানিক নাম: Hemidesmus indicus) হচ্ছে এ্যাপোনেসিয়াসিস পরিবারের হেমিডেসমাস গণের এক প্রকারের গুল্ম। এই প্রজাতিটি দক্ষিণ এশিয়ায় জন্মায়।
অনন্তমূল-এর বর্ণনা :
অনন্তমূল সুগন্ধী মূল বিশিষ্ট, মাটিতে লুটিয়ে থাকে বা সামান্য প্যাঁচানো বহুবর্ষজীবী ছোট গুল্ম বিশেষ। ভাঙলে দুধের মতো ক্ষীর বের হয়। এদের কাণ্ড ও শাখা সরু, প্রস্থচ্ছেদ গোলাকার ও মসৃণ। পাতা কিছুটা সবৃন্তক, পত্রবৃন্ত অনূর্ধ্ব ৫ মিমি লম্বা, রোমশ, উপরের পার্শ্ব খাঁজকৃত, পত্রফলক উপবৃত্তাকার বা ডিম্বাকার-আয়তাকার, শীর্ষ সূক্ষ্মভাবে তীক্ষ্মাগ্র, নিম্নাংশ গোলাকার, মসৃণ। সাইম অর্ধ- বৃত্তক, প্রতিমুখ, রোমশ, বহু-পুষ্পী, পুষ্পদন্ড পুষ্পবৃত্তিকার চেয়ে খর্বতর, পুষ্পবৃত্তিকা অনূর্ধ্ব ৩ মিমি লম্বা। পুষ্প মঞ্জরীপত্রযুক্ত।
বৃতি খন্ড ডিম্বাকার-বল্লমাকার, প্রায় ২×১ মিমি, প্রান্ত সিলিয়াযুক্ত। দলমণ্ডল খন্ড ডিম্বাকার-বল্লমাকার, প্রায় ৩-৪ × ২ মিমি, মসৃণ। কিরীটীয় শল্ক অতি ক্ষুদ্র, মাংসল। গর্ভমুণ্ড ৫-কোণী, চ্যাপ্টা মুকুট বিশিষ্ট। ফল ফলিক্যাল, ২টি, প্রায় ১০-১২ × ০.৫-০.৭ সেমি, সমান্তরালভাবে দূরাপসারী, প্রস্থচ্ছেদ গোলাকার, সরু, শীর্ষের দিকে ক্রম সরু, মসৃণ। বীজ এক গুচ্ছ সাদা রোম বিশিষ্ট কাল, উপবৃত্তাকার-আয়তাকার, প্রায় ৭×২ মিমি, চ্যাপ্টা।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ২২ (Fedorov, 1969) ।
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
অনন্তমূল ছায়াযুক্ত আর্দ্র স্থানে জন্মে। বিশেষত শুষ্ক বনবিথিকার নীচ দেখা যায়। ফুল ও ফল ধারণ সময়কাল জুলাই-ডিসেম্বর মাস। বীজ ও কাল্লীয় মূল দ্বারা বংশ বিস্তার হয়।
বিস্তৃতি :
ভারত, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, পাকিস্তান এবং শ্রীলংকা। বাংলাদেশে ইহা সহজপ্রাপ। নয় এবং দেশের মধ্যবর্তী এবং দক্ষিণ অংশের শুষ্ক বনাঞ্চলসমূহে পাওয়া যায়।
উপকারিতা:
গাছের মূল রক্ত শোধনকারী, মূত্রবর্ধক, বলকারক এবং ঘর্মকারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মূলের নির্যাস অরুচি, হজম ক্রিয়ায় গোলযোগ, জ্বর, চর্মরোগ, সিফিলিস, শ্বেতপ্রদও এবং দীর্ঘমেয়াদী কাশি নিরাময়ের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় (Jain, 1981)।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার :
মূল থেকে তৈরী এক ধরনের পেষ্ট নির্দিষ্ট শোথরোগ, বাত ও ফুসকুড়িতে দেয়া হয়। ভারতে সম্পূর্ণ উদ্ভিদটি জ্বরের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় এবং আসল সারসেপারিলা, যা Smilax এর গাছ থেকে পাওয়া যায় তার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে স্থানীয় লোকজন গাছের কাণ্ড বাঁধাইকারক উপাদান হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ০৬ষ্ঠ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০ অনন্তমূল প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, দাবানল ও বনভূমিতল পরিষ্কারের কারণে বাংলাদেশের এটি সংকটাপন্ন। বাংলাদেশে অনন্তমূল সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. এম আতিকুর রহমান (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ০৬ষ্ঠ, পৃষ্ঠা ২৫৩-২৫৪। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।