ভূমিকা: চই বা চুই, চই, চব, চুই ঝাল, চই ঝাল, গজ পিপুল (বৈজ্ঞানিক নাম: Piper retrofractum) হচ্ছে পিপারাসি পরিবারের পিপার গণের বহুবর্ষজীবী সপুষ্পক উদ্ভিদ। এরা অনেকটা ঝোপাকার আরোহী গুল্ম।
বর্ণনা: চুইঝাল ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা, কান্ড শক্ত। পাতা সরল, একান্তর, মসৃণ, দৃঢ় চর্মবৎ, ডিম্বাকার-দীর্ঘায়ত বা ভল্লাকার, পাদদেশ হৃৎপিণ্ডাকার, স্কুল বা কীলকাকার, শীর্ষ ক্রমসরু বা দীর্ঘাগ্র, পত্রবৃন্ত ০.৫-৩.০ সেমি লম্বা। স্পাইক খাড়া বা ছড়ানো, মঞ্জরীদন্ড ১-২সেমি লম্বা, মঞ্জরীপত্র স্কুল ডিম্বাকার। বৃত্যংশ এবং পাপড়ি অনুপস্থিত। পুং স্পাইক ২.৫-৮.৫ সেমি লম্বা, পুংকেশর ২-৩টি, পুংদন্ড খাটো, স্থায়ী, পরাগধানী স্কুল উপবৃত্তীয়। স্ত্রী স্পাইক ২-৩ সেমি লম্বা, গর্ভাশয় অধিগর্ভ, গর্ভদন্ড খাটো, গর্ভমুণ্ড ২-৩টি, ডিম্বাকার-তীক্ষ্ণাগ্র, নিম্নমুখী বক্র, ডিম্বক একক। ফল ড্রুপ, স্থুল গোলাকার, শক্ত এবং ঝাঁঝালো। বীজ গোলকাকার, অভ্যন্তরভাগ সাদা এবং ময়দা সদৃশ। ফুল ও ফল ধারণ ঘটে প্রায় সারা বৎসরব্যাপী।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২৪ (Kumar and Subramaniam, 1986).
আবাসস্থল ও চাষাবাদ: ছায়াযুক্ত আর্দ্র স্থান। বংশ বিস্তার হয় কর্তিত কান্ডের মাধ্যমে।
বিস্তৃতি: থাইল্যান্ড, ভারত, চীন, মালয়েশিয়া এবং ফিলিপাইন। বাংলাদেশে ইহা যশোহর এবং খুলনা জেলায় বিশেষ করে সাতক্ষীরা-বাগেরহাট অঞ্চলে চাষ হয়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার/গুরুত্ব/ক্ষতিকর দিক: ইহার ফলে বলকারক এবং পাকস্থলীর বায়ুনাশক গুণাবলী বিদ্যমান এবং অর্শরোগে ব্যবহৃত হয়। ইহাতে আরও আছে কৃমিনাশক এবং কাশির মাধ্যমে শ্লেষা নির্গতকারী গুণাবলী এবং এ্যাজমা, ব্রংকাইটিস, প্রদাহ এবং পাইলস এ উপকারী। উদ্ভিদটির অপরিশোধিত নির্যাসে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী গুণাবলী উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায় (Ghani, 2003).
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: ইন্দোনেশিয়াতে এই গাছের পাতার নির্যাস মাউথওয়াশ হিসেবে এবং দন্তশূল উপশমে ব্যবহৃত হয়। ফিলিপাইনে শূলবেদনা উপশমে ইহার শিকড় চিবানো হয় অথবা ইহার ক্বাথ ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের মহিলারা প্রসবের পরে শরীরের ব্যাথা লাঘবে উদ্ভিদটি ব্যবহার করে থাকে।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৯ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) চুই প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, শীঘ্র এদের সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে চুই সংরক্ষণ নির্ভরশীল অবস্থায় আছে। প্রজাতিটি সংরক্ষণের জন্য কোনো প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এবং প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে প্রজাতিটি বর্তমানে সংরক্ষণের জন্য কোনো প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন নেই।[১]
তথ্যসূত্র:
১. এম আহসান হাবীব, (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৯ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৯৭। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।