নাফ নদী (Naf River) বাংলাদেশের দক্ষিণ প্রান্তে বাংলাদেশ-মায়ানমারের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী নদীটি বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত। এটি বাংলাদেশ-মায়ানমারের সীমানা নির্ধারণকারী পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের নদী হিসেবে পরিচিত। নদীটির দৈর্ঘ্য ৬৩ কিলোমিটার, স্থান বিশেষে ১.৬১ কিমি হতে ৩.২২ কিমি হয়ে থাকে এবং নদীর গড় প্রশস্ততা ১৩৬৪ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা “পাউবো” কর্তৃক নাফ নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের নদী নং ০৭। এটি কক্সবাজার জেলার দক্ষিণ পূর্ব কোনা দিয়ে প্রবাহিত। এর পানি তাই লবনাক্ত। এর পশ্চিম পাড়ে বাংলাদেশের টেকনাফ উপজেলা এবং পূর্ব পাড়ে বার্মার আরাকান প্রদেশের আকিয়াব অবস্থিত। ঐতিহাসিকভাবে শাহপরী দ্বীপ নাফ নদীর মুখে অবস্থিত এবং বর্মি-ইংরেজ যুদ্ধসমূহের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রবাহঃ নাফ নদী মায়ানমারের উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল হতে উৎপত্তি লাভ করে কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ক্রমশ দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়েছে। মায়ানমার হতে আগত আরো একটি জলধারা নাফ নদীর মূল প্রবাহের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। নদীটি উখিয়া এবং টেকনাফ পেরিয়ে সাবরং পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। এই নদীর পূর্ব তীরে মায়ানমারের আকিয়াব শহর এবং পশ্চিম তীরে বাংলাদেশের টেকনাফ শহর অবস্থিত। নাফ নদীর গড় গভীরতা ৩৯ মিটার বা ১২৮ ফুট এবং সর্বোচ্চ গভীরতা ১২০ মিটার বা ৪০০ ফুট। এ নদী জোয়ারভাটার প্রভাবে প্রভাবিত এবং নদীতে সারাবছর নৌযান চলাচল করে।
অন্যান্য তথ্য: নাফ নদীর প্রবাহের প্রকৃতি বারোমাসি, নদীটি বন্যাপ্রবণ এবং নদীটি জোয়ারভাটা প্রভাবিত। নদীর অববাহিকার প্রকল্প হচ্ছে পোল্ডার ৬৭, পোল্ডার ৬৭-এ, পোল্ডার ৬৭-বি এবং পোল্ডার ৬৮। এই নদীর তীরে টেকনাফ পৌরসভা, বালুখালিবাজার এবং ওয়াইঙ্কনবাজার অবস্থিত। নদীর ডানতীরে ৫৭.৫০ কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ এবং ১০৫ মিটার ব্যাংক রিভেটমেন্ট আছে।
তথ্যসূত্র
১. মোহাম্মদ রাজ্জাক, মানিক (ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। “পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের নদী”। বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি (প্রথম সংস্করণ)। ঢাকা: কথাপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ২৮৬। আইএসবিএন 984-70120-0436-4
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।