যুদ্ধ হচ্ছে রাষ্ট্র, সরকার, সমাজ, জাতি, শ্রেণি ও আধাসামরিক গ্রুপগুলোর মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত

যুদ্ধ (ইংরেজি: War) হচ্ছে রাষ্ট্র, সরকার, সমাজ, জাতি, শ্রেণি, রাজনৈতিক দল এবং অনানুষ্ঠানিক আধাসামরিক গ্রুপ, যেমন ভাড়াটে, বিদ্রোহী এবং মিলিশিয়াদের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাতের একটি অবস্থা। এটি নিয়মিত বা অনিয়মিত সামরিক বাহিনী ব্যবহার করে চরম সহিংসতা, আগ্রাসন, ধ্বংস এবং মৃত্যুহার দ্বারা সাধারণত চিহ্নিত হয়। যুদ্ধ তৎপরতা (ইংরেজি: Warfare) যুদ্ধের বিভিন্ন ধরণ বা অধিকাংশ ক্ষেত্রে যুদ্ধের সাধারণ ক্রিয়াকলাপ এবং বৈশিষ্ট্যসমূহকে নির্দেশ করে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যয়নে বলা হয়, যখন কূটনীতি এবং অন্যান্য সমস্ত উপায় ব্যর্থ হয় তখন একটি রাষ্ট্র যুদ্ধের মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করার চেষ্টা করে। অন্ততঃপক্ষে আত্মরক্ষার জন্য অর্থাৎ দেশের ভূখণ্ড এবং জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য প্রত্যেক দেশের শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করার যে অধিকার আছে তা আজও স্বীকৃত। সাধারণতঃ দুইটি রাষ্ট্রের সরকার যখন সামরিক শক্তি প্রয়ােগ করে তাদের বিরােধ মিটাবার চেষ্টা করে সেই অবস্থাকেই আমরা যুদ্ধ বলে থাকি। যুদ্ধ হলো আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সেই অবস্থা যেখানে দুই বা ততোধিক বিবাদমান রাষ্ট্রকে সামরিক বল প্রয়ােগের মাধ্যমে তাদের পরস্পরের বিরােধ মিটিয়ে নেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়।[১]

যুদ্ধকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একটি বিশেষ রূপ হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে। একটি রাষ্ট্র নিজের বৈদেশিক নীতিকে সার্থক করে তােলার জন্য বিভিন্ন উপায়ে, — যেমন কূটনৈতিক আলােচনা ও চুক্তি, বাণিজ্য সম্পর্ক, অর্থনৈতিক সাহায্য ইত্যাদি, — অন্য রাষ্ট্রের সাথে বিশেষ ধরনের সম্পর্ক স্থাপন করতে চেষ্টা করে। সামরিক শক্তি প্রয়ােগ করে যখন একটি রাষ্ট্র অন্য একটি রাষ্ট্রের সাথে তার প্রয়োজন মতো সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা করে তখন সেই পদ্ধতিকে আমরা যুদ্ধ বলি। কার্ল ভন ক্লজউইৎজের (ইংরেজি: Carl von Clausewitz) ভাষায় “war is nothing but a continuation of political intercourse with an admixture of other means.”[২]

যুদ্ধের পাণ্ডিত্যপূর্ণ অধ্যয়নকে কখনও কখনও যুদ্ধবিদ্যা বা (ইংরেজি: Polemology); বলা হয়। গ্রীক শব্দ polemos থেকে শব্দটির উৎপত্তি, polemos শব্দের অর্থ “যুদ্ধ” এবং “-logy” শব্দের অর্থ “অধ্যয়ন”। রাজনীতি এবং যুদ্ধের সম্পর্ক অনুধাবন করার জন্য আমাদের এই দুটির পারস্পরিক সম্পর্ক জানা দরকার। যুদ্ধ কখন প্রয়োজন হয়ে পড়ে সে প্রশ্নেরও উত্তর খুঁজে বের করা দরকার।

যুদ্ধ তৎপরতার ধরন

যুদ্ধ তৎপরতা সাধারণভাবে যুদ্ধ বা যুদ্ধগুলোর বিভিন্ন ধরণের সাধারণ ক্রিয়াকলাপ এবং বৈশিষ্ট্যকে বোঝায়। সেই অর্থে যুদ্ধের ধরন আছে বহু রকমের। স্নায়ুযুদ্ধ, উপনিবেশিক যুদ্ধ, সমুত্থান, সীমান্ত যুদ্ধ, ফল্ট লাইন যুদ্ধ, আগ্রাসন, বদলি যুদ্ধ, ব্যাপ্তি যুদ্ধ, ধর্মীয় যুদ্ধ, অঘোষিত যুদ্ধ, সমগ্র যুদ্ধ, বিশ্বযুদ্ধ, পারমাণবিক যুদ্ধ ইত্যাদি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধ।

যুদ্ধ তৎপরতার ধরনের ভেতরে রয়েছে রক্ষণাত্মক যুদ্ধ তৎপরতা, আক্রমণাত্মক যুদ্ধ তৎপরতা, প্রচলিত যুদ্ধ তৎপরতা, অর্থনৈতিক যুদ্ধ তৎপরতা, অনিয়মিত যুদ্ধ তৎপরতা, যৌথ যুদ্ধ তৎপরতা, রণকৌশলী যুদ্ধ তৎপরতা, নেটওয়ার্ক কেন্দ্রিক যুদ্ধ তৎপরতা, রাজনৈতিক যুদ্ধ তৎপরতা, সন্ত্রাসবাদ, অপ্রচলিত যুদ্ধ তৎপরতা, স্থল যুদ্ধ তৎপরতা, পর্বত যুদ্ধ তৎপরতা, পরিখা যুদ্ধ তৎপরতা, টানেলের যুদ্ধ তৎপরতা, শহুরে যুদ্ধ তৎপরতা, নৌযুদ্ধ তৎপরতা, আকাশ যুদ্ধ তৎপরতা প্রভৃতি। যুগ ভিত্তিক যুদ্ধ তৎপরতার ভেতরে আছে প্রাগৈতিহাসিক যুদ্ধ তৎপরতা, প্রাচীন যুদ্ধ তৎপরতা, সামন্তযুগীয় যুদ্ধ তৎপরতা, শিল্পবৈপ্লবিক যুদ্ধ তৎপরতা প্রভৃতি।

আরো পড়ুন:  গণ যুদ্ধ

মূল নিবন্ধ: যুদ্ধ ও যুদ্ধ তৎপরতার ধরন

যুদ্ধের কারণ ও যুদ্ধ বিশ্লেষণের তত্ত্ব

যুদ্ধের মার্কসবাদী তত্ত্ব

যুদ্ধের মার্কসবাদী তত্ত্বটি যুদ্ধের কারণকে আপাত-আধা-অর্থনৈতিক হিসেবে উল্লেখ করে। এতে বলা হয়েছে যে সমস্ত আধুনিক যুদ্ধ বড় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মধ্যে সম্পদ এবং বাজারের জন্য প্রতিযোগিতার কারণে ঘটেছিল; এবং মার্কসবাদী তত্ত্ব আরো দাবি করে যে এই যুদ্ধগুলি মুক্তবাজার এবং শ্রেণিব্যবস্থার একটি প্রাকৃতিক ফলাফল। মার্কসবাদী তত্ত্বের একটি অংশ হলো একবার বিশ্ব বিপ্লব ঘটার ফলে মুক্ত বাজার এবং শ্রেণি ব্যবস্থা উৎপাটিত করা গেলে যুদ্ধ অদৃশ্য হয়ে যাবে।

মূল নিবন্ধ: যুদ্ধের মার্কসবাদী তত্ত্ব

একটি প্রশ্ন আসতে পারে, পারমাণবিক যুদ্ধ বা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লাগবে কী না? আসলে পারমাণবিক যুদ্ধ বা আরেকটি বিশ্বযুদ্ধ সাম্রাজ্যবাদীরা আর সহজে লাগাবে না। যুদ্ধের অভিজ্ঞতা বুর্জোয়া এবং সাম্রাজ্যবাদীদের শিখিয়েছে যে, যুদ্ধ বাঁধলেই সমাজতন্ত্র অভিমুখী দল কোথাও না কোথাও ক্ষমতায় আসে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পর পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ এলাকা সমাজতন্ত্রের অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। সর্বশেষ সিরিয়া গৃহযুদ্ধে রোজাভা তার উদাহরণ। তবে ছোটখাট যুদ্ধ এবং হাঙ্গামা বুর্জোয়া এবং সাম্রাজ্যবাদীরা সর্বদাই জিইয়ে রাখবে। পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি-ধামকিটা জাতীয়তাবাদী গর্দভদের কয়েকদিন জোসে রাখতে ওরা কাজে লাগায়। ছোটখাট যুদ্ধকে এখন সাম্রাজ্যবাদীরা আর দশটা পণ্যের মতোই ব্যবসায়ীক পণ্য বানিয়ে ফেলেছে। সবচেয়ে বড় পরাজয়ের ভয়ে এরা বড় যুদ্ধ লাগায় না আর।

এছাড়া যুদ্ধ যত দ্রুত জনগণকে শিক্ষিত করে তোলে তা অন্য কিছু দিতে সহজে দিতে পারে না। যুদ্ধের সময় সকল পক্ষই অর্থনৈতিক স্বার্থ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এছাড়া যুদ্ধ বাধলে মানুষের ভয় কেটে যায়। শত্রু মিত্র চেনা সহজ হয়। তখন অস্ত্রও সহজলভ্য হয়। যুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ বাড়ে, ফলে বিদ্রোহ বাড়ে।

আরেকটি বস্তুগত শর্ত আপনাদের চোখে পড়বে, সেটি হচ্ছে জনসংখ্যা বৃদ্ধি। পৃথিবীতে মানুষের পরিমাণ ৭০০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে, এই বিপুল জনসংখ্যা বৃদ্ধি মানুষের গড় গুণগত মানকেও নিচে নামিয়েছে। এছাড়া বুর্জোয়া এবং সাম্রাজ্যবাদীরা দেখেছে মানুষকে যন্ত্রের মতো কাজে লাগালে সাম্রাজ্যবাদী কর্পোরেটদের মুনাফা বাড়ে ত্বরিত গতিতে। মনোবিজ্ঞান বিষয়ক লেখাপড়া সাম্রাজ্যবাদীদের সাহায্য করেছে, বিশেষ করে সাপেক্ষ প্রতিবর্ত [Conditioned reflex]। কীভাবে মানুষকে যন্ত্রের মতো খাটানো যায় তা নিয়ে জাপান-ইউরোপ-মার্কিনীরা গবেষণা চালিয়েছে গত এক শতাব্দী জুড়ে। জাপানিরা এই ক্ষেত্রে সফল হয়েছে শতভাগ। জাপানিরা যন্ত্রের মতো কাজ করতে পছন্দ করে, কাজ করতে করতে স্বাভাবিক চিন্তা প্রক্রিয়া হারিয়ে ফেলে এবং একসময় আত্মহত্যা করে। অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী দেশও আত্মহত্যায় পিছিয়ে নেই।

গড়ে এক লক্ষ মানুষের ভেতরে জাপানে আত্মহত্যার হার ১৯১৪ সালে ছিল ১৯৫। রাশিয়া ছিলো সবচেয়ে বেশিতে যার হার ২১৮। ফ্রান্সে এই হার ১৫১, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৩৪, জার্মানিতে ১২৬ কানাডায় ১১৩ ইংল্যান্ডে ৭৫ এবং ইতালিতে ৭২। এই পরিসংখ্যান চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে উচ্চ কারখানায়িত দেশগুলোর মানুষের গড় মান মোটামুটি নির্বোধের স্তরে নামাতে পেরেছে সাম্রাজ্যবাদীরা।[৩] ফলে একুশ শতকে মানুষ এখন একেকটা মেশিন। এই অভিজ্ঞতা গোটা দুনিয়াতেই নতুন।

আরো পড়ুন:  অর্থনৈতিক যুদ্ধতত্ত্ব যুদ্ধকে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার ক্রমবিকাশ হিসাবে দেখে

যুদ্ধের নৈতিকতা

যুদ্ধের নৈতিকতা হাজার হাজার বছর ধরে বিতর্কের বিষয়। আমরা জানি, সমাজ আপনা থেকেই এগোয় না। সমাজের প্রগতিতে ন্যায়যুদ্ধের বিশেষ ভূমিকা আছে। প্রগতিশীল যুদ্ধগুলোর দিকে চোখ ফেরালে দেখা যাবে কিভাবে যুদ্ধ, বিদ্রোহ ও বিপ্লবগুলো সমাজকে এগিয়ে নিয়েছে। যুদ্ধের সংগে প্রগতির সম্পর্কটি বেশ পুরোনো। যেমন মনে করা যাক ইউরোপীয় রেনেসাঁর উদ্ভব। রেনেসাঁ আরম্ভের মূল সূত্রটি লুকিয়ে আছে ক্রুসেডে খ্রিস্টানদের পরাজয়ে। ইউরোপের লাখ লাখ মানুষের জীবনহানিই তাঁদেরকে জ্ঞান ও বিজ্ঞানের দিকে ভাবতে বাধ্য করে, ওরা বুঝে যায় জ্ঞান আর বিজ্ঞান দিয়েই পরাজিত করা সম্ভব শত্রুকে। মূলত বিদ্রোহ, বিপ্লব এবং যুদ্ধগুলোই মানুষকে অতি দ্রুত শেখাতে পারে। বিপ্লব শিক্ষা দেয় ত্বরিত গতিতে[৪], লেনিনের এই কথাটি ফেলনা নয়। যারা কেবল খাপছাড়াভাবে যুদ্ধের ধ্বংস ও হত্যাকাণ্ডগুলো দেখেন তারা যুদ্ধের বিভিন্ন দিক দেখেন না, বিশেষভাবে তারা প্রগতিশীল ন্যায়যুদ্ধগুলোর ভূমিকা খেয়াল করেন না। সামাজিক অগ্রগতি দেখতে হলে এই প্রশ্নটির উত্তর খুঁজে বের করা জরুরি যে কেন আদিম গোষ্ঠীবদ্ধ যুগ, দাস যুগ, সামন্ত যুগ ও পুঁজিবাদী যুগের ভেতরে পরেরটি আগেরটির চেয়ে উন্নত। উদাহরণ হিসেবে দেখা যাক, আদিম যুগে দুটি গোষ্ঠীর পারস্পরিক আক্রমণের পর পরাজিত পক্ষের কী হতো? পরাজিতদের খেয়ে ফেলা হতো। এটা বর্বরতা। দাস যুগে এসে পরাজিতরা বাঁচার অধিকার পেলো, এটা সামাজিক অগ্রগতি।[৫] এরকম প্রতিটা সমাজের নানারকম অগ্রগতি আছে।

যুদ্ধ প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যে গত ৩০০০ বছর ধরেই চলেছে। যুদ্ধে মানুষের হত্যা ও ধ্বংস এক অনিবার্য বিষয় যেমন, তেমনি যুদ্ধ সৃষ্টিও কম করেনি। ইউরোপে কোটি কোটি মানুষের হত্যা তার সাম্প্রতিক উদাহরণ। প্রাচ্য স্বৈরাচার কতই না ভাবে মানুষকে হত্যা করেছে। ভারতে নারীদের কয়দিন আগেও জ্যান্ত পোড়াতো। কাপালিকেরা মানুষকে বলি দিতো; আর রাজারা ও তাদের হারেম আর খোজাদের করুন কাহিনী, যুদ্ধের সামনে পড়ে হাজার হাজার গ্রামীণ স্বাধীন কৃষক নিশ্চিহ্ন হবার ইতিহাস অনেকেরই জানা। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের এই যে যুদ্ধের ইতিহাস, তাকে মানুষের ইতিহাস হিসেবেই দেখতে হবে, তার সাফল্য ব্যর্থতা, অগ্রগতি পশ্চাৎগমনসহ।

১৯৯০ পরবর্তীকালে স্যামুয়েল পি হান্টিংটনের বই সভ্যতার সংঘর্ষ আবার যুদ্ধগুলো বা সংঘর্ষগুলোকে সামনে এনেছে এবং বিশ্বের শৃঙ্খলাকে নতুন করে গড়ে নিচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদীরা মূলত হান্টিংটনের এই বইকে তাত্ত্বিক ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছে। সাম্প্রতিক এন্থনি প্যাগডেনের Worlds at War: The 2,500-Year Struggle Between East and West বইটার আলোচনাও একই ধরনের। সাম্রাজ্যবাদী মার্কিনীরা এবং তাঁদের দোসর ইউরোপীয় গণশত্রুরা এখন এসব বইয়ের আলোচনা ও প্রচার হরদম চালাচ্ছে। এসব বইয়ে কি আদৌ এমন নতুন তথ্য বলা হচ্ছে তা কি আমরা খুঁজে দেখেছি? এসব বইয়ে নতুন কোনো কথা নেই; এগুলো মূলত সপ্তদশ অষ্টাদশ শতকের চিন্তাধারা। ইউরোপীয়রা এক সময় মনে করত, সভ্যতা এগোয় না, ওটা বৃত্তের মতো ঘোরে, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হয়। ইউরোপীয়রা মনে করত সভ্যতা আলেকজান্দ্রিয়া, এথেন্স, রোম, বাগদাদ, লন্ডন হয়ে এখন ওয়াশিংটনে পৌঁছেছে। যারা Time You Old Gypsy Man কবিতাটি পড়েছেন তারা আমার কথার সত্যতা মনে করতে পারবেন। মূলত ইউরোপীয়রা সমাজের বিকাশের ব্যাখ্যা যতদিন দিতে পারেনি ততদিন এসব কথা খুব গ্রহণ করেছে। সামাজিক বিকাশ ও প্রগতির ইতিহাস, বিশেষ করে ফরাসি বিপ্লব বিশ্লেষণ করে তারা সমাজপ্রগতিকে চিনতে শিখেছিল, যা এখন তারা আবার ভুলে গেছে। মূলত উত্তরাধুনিকতাবাদী চিন্তাধারা[৬] ইউরোপ ও আমেরিকাকে ইতিহাস সংক্রান্ত বা ঐতিহাসিক বস্তুবাদী চিন্তা থেকে হটিয়ে দিয়েছে।

আরো পড়ুন:  জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য জাতিসমূহের দ্বারা পরিচালিত জনগণের যুদ্ধ

যুদ্ধের বিরোধিতা করা যেমন কর্তব্য, তেমনি প্রগতির জন্যে যুদ্ধ করাও কর্তব্য। যতদিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার দোসরেরা দেশে দেশে জনগণের উপর হত্যা নির্যাতন, নিপীড়ন শোষণ চালাবে, ততদিন পৃথিবীতে যুদ্ধ থাকবে। যুদ্ধকে উৎখাত করার জন্যই যুদ্ধ করতে হয়। আর যখন প্রচলিত রাজনীতি সমস্যার সমাধান দিতে পারে না, তখনই যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। আর যুদ্ধ চললেই জনে জনে যোদ্ধা আসে, যুদ্ধ না চললে খাসি কালচারড রাবিন্দ্রিক মধ্যবিত্তই আসবে।

তথ্যসূত্র ও টীকাঃ

১. গৌরীপদ ভট্টাচার্য, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ, কলকাতা, পঞ্চম সংস্করণ ডিসেম্বর ১৯৯১, পৃষ্ঠা ১৬৪।
২. কার্ল ভন ক্লজউইৎজ, On War, Chapter One: What is war?, Point 24.
৩. Otake, Tomoko. “Suicides down, but Japan Still Second Highest among Major Industrialized Nations, Report Says.” The Japan Times News, The Japan Times, Ltd., 30 May 2017, www.japantimes.co.jp/news/2017/05/30/national/social-issues/preventive-efforts-seen-helping-2016-saw-another-decline-suicides-japan-21897/.
৪. কার্ল মার্কস তাঁর ফ্রান্সে শ্রেণিসংগ্রাম গ্রন্থে বলেছিলেন বিপ্লব হলো ইতিহাসের চালিকাশক্তি। লেনিনের এই কথাটি আছে তাঁর ‘গণতন্ত্র’ ও একনায়কত্ব প্রসঙ্গে প্রবন্ধে। প্রবন্ধটি ২৩ ডিসেম্বর ১৯১৮ তে লেনিন লেখেন যা ৩ জানুয়ারি ১৯১৯ তারিখে প্রাভদার ২য় সংখ্যায় প্রকাশিত। প্রবন্ধটির বঙ্গানুবাদ পাবেন লেখকের সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র প্রসঙ্গে, বিদেশী ভাষায় সাহিত্য প্রকাশালয়’ মস্কো, তারিখহীন, পৃষ্ঠা ১০৫-১১০।
৫. ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস, অ্যান্টি দ্যুরিং।
৬. এই বিষয়ে পড়ুন রতন খাসনবীশের গ্রন্থ মার্কসবাদ ও উত্তরাধুনিকতা

রচনাকাল: এপ্রিল-আগস্ট, ২০১৭

Leave a Comment

error: Content is protected !!