[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Ephippiorhynchus asiaticus সমনাম: Myctaria asiatica Latham, 1790 বাংলা নাম: কালাগলা মানিকজোড়, ইংরেজি নাম/Common name: Black-necked Stork. জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য: Animalia বিভাগ: Chordata শ্রেণী: Aves পরিবার/Family: Ciconiidae গণ/Genus: Ephippiorhynchus; প্রজাতি/Species: Ephippiorhynchus asiaticus (Latham, 1790)[/otw_shortcode_info_box]
ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Ephippiorhynchus এই গণে পৃথিবীতে ২টি প্রজাতির পাখি রয়েছে। বাংলাদেশে রয়েছে তার ১টি প্রজাতি। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম কালাগলা মানিকজোড় বা লোহারজঙ্গ।
বর্ণনা: কালাগলা মানিকজোড় প্রবাল লাল-পা ও কালো ঠোঁটের জলচর পাখি। দৈর্ঘ্য ১৩৫ সেমি, ডানা ৬০ সেমি, ঠোঁট ৩১ সেমি,পা ৩২ সেমি, লেজ ২৭ সেমি। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠের দিক কালো-ও-সাদা; দেহের নিচের দিক সাদা; মাথা, ঘাড়, ডানা-ঢাকনি ও লেজ নীল, বেগুনি এবং সবুজের উজ্জ্বলতাসহ কালো; কাঁধ-ঢাকনি ও দেহের পিছনের অংশ একদম সাদা; সাদা ডানার উভয়পৃষ্ঠে প্রশস্ত কালো ফিতা; বুক, পেট ও লেজতল-ঢাকনি সাদা; লম্বা কালো ঠোঁটের নিচের অংশ উলটো বাঁকানো; গলথলি ও চোখের পাতা অনুজ্জ্বল বেগুনি; এবং লম্বা পা ও পায়ের পাতা প্রবাল-লাল। চোখের রঙ ছাড়া ছেলে ও মেয়েপাখির চেহারা অভিন্ন। চেলের চোখের রঙ বাদামি ও মেয়ের হলুদ।
স্বভাব: কালাগলা মানিকজোড় নিচু এলাকার জলাভূমি,নদী, বিলও প্যারাবনের জলায় বিচরণ করে; সচরাচর একা কিংবা জোড়ায় থাকে। অগভীর পানিতে জলজ উদ্ভিদে খোলা ঠোঁট ঢুকিয়ে খাবার খায়; খাদ্য তালিকায় রয়েছে মাছ, ব্যাঙ, সরীসৃপও চিঙড়ি জাতীয় প্রাণি। বাইন মাছের প্রতি এদের আসক্তি লক্ষ্য করা যায়। সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর মাসে প্রজননকালে ভারতে পতিত বা আবাদি জমির মাঝখানে দাড়িয়ে থাকা বড় গাছের ডালে ডালপালা, খড় ও পাতা দিয়ে বড় বাসা বানিয়ে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৩-৫ টি, মাপ ৭.২×৫.৩সেমি।
বিস্তৃতি: কালাগলা মানিকজোড়কে ২০০৯ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষে বাংলাদেশের প্রাক্তন পরিযায়ী পাখি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
অবস্থা: কালাগলা মানিকজোড় বিশ্বে প্রায়-বিপদগ্রস্ত এবং বাংলাদেশে অপ্রতুল তথ্যশ্রেণিতে রয়েছে। এটি বাংলাদেশের প্রাক্তন পরিযায়ী এবং বাংলাদেশের বিলুপ্ত পাখির তালিকায় রয়েছে। উনিশ শতকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে ছিল; এখননেই । অস্ট্রেলিয়া, নিউগিনি, পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকাও ইন্দোচিনসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়এরবৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
বাংলাদেশে অবস্থা: ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়েও বাংলাদেশে কালাগলা মানিকজোড়ের মোটামুটি বেশ বিচরণ ছিল। বিশেষ করে সুন্দরবন ও আশপাশ অঞ্চলের জলাভূমিতে দেখা যেত বেশি। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম বিভাগেও দেখা যেত তখন। তবে ওই সময়েও এরা বাংলাদেশে ভালো অবস্থানে ছিল না। গায়ের আকর্ষণীয় রঙের কারণে শিকারিদের শ্যেনদৃষ্টি বরাবরই ওদের পেছনে লেগে ছিল। স্পষ্টভাবে বলা যায়, দৈহিক সৌন্দর্যের কারণে পাখিটিকে নির্বিচারে শিকার করা হতো। তাই বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় পাখির তালিকায় কালাগলা মানিকজোড়ের নাম উঠে গেছে। হারিয়ে যেতে বসেছে এই দারুণ পাখিটি।[১]
বাংলাদেশে কালাগলা মানিকজোড়ের ইতিহাস: প্রাণিবিজ্ঞানী সিমসন ১৮৯০ সালে ঢাকা নগরে এ পাখি দেখেছিলেন এবং ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে পাখিটির অস্তিত্ব ছিল। তার ৬২ বছর পর ২০১০ সালের এপ্রিলে হাকালুকি হাওরের নাগোয়া-ধলিয়া বিলে এক জোড়া কালাগলা মানিকজোড় দেখা গেছে। একই সময়ে সুন্দরবনে এ প্রজাতির আরও একটি পাখি দেখা গেছে। এছাড়া হাওরে ধৃত একটি কালাগলা মানিকজোড় পাখি এলাকাবাসীর কবল থেকে উদ্ধার করে বন বিভাগ সেইসময়ে সাফারি পার্কে স্থানান্তরিত করেছে।
বিবিধ: মানিকজোড় (Ciconiidae) পরিবারে পৃথিবীতে সর্বমোট ১৯ প্রজাতির পাখি আছে, যার আট প্রজাতি একদা বাংলাদেশে দেখা যেত। এর মাত্র দুটি প্রজাতি এখন এ-দেশে বাস করে ১. এশিয় শামখোল, ও ২. ছোট মদনটাক।
তথ্যসূত্র:
১. লেখকনামহীন. দৈনিক কালেরকণ্ঠ, “কালাগলা মানিকজোড় দেহসৌন্দর্যই ওদের বড় শত্রু”, ১৯ নভেম্বর, ২০১৩, ইউআরএল: http://www.kalerkantho.com/home/printnews/22645/2013-11-19
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।