ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Francolinus গণে তিন প্রজাতির তিতির পাওয়া যায় সেগুলো হলো ১. কালা তিতির, Black Francolin, Francolinus francolinus ও ২. বাদা তিতির, Swamp Francolin, Francolinus gularis, এবং ৩. মেটে তিতির, Grey Francolin, Francolinus chinensis. এখানে আমাদের আলোচ্য পাখি বাদা তিতির বা জলার তিতির।
বর্ণনা: বাদা তিতির হৃষ্টপুষ্ট বাদামি জলচর পাখি (দৈর্ঘ্য ৩৭ সেমি, ওজন ৫০০ গ্রাম, ডানা ১৭.৫ সেমি, ঠোঁট ২.২ সেমি, পা ৬.৫ সেমি, লেজ ১১.৫ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথার চাঁদি ও ঘাড় বাদামি; হালকা পীত বর্ণের পিঠে বাদামি ডোরা ও লালচে-বাদামি পট্টি থাকে; হালকা পীত রঙের ভ্রু-রেখা ও গালের ডোরার মধ্যে থাকে মলিন বাদামি চক্ষু-রেখা; লেজটা তামাটে, লেজের প্রান্ত ফিকে; গলা ও ঘাড়ের উপরের অংশ কমলা এবং দেহতলের শেষাংশ প্রশস্ত সাদা ডোরাসহ বাদামি; চোখ গাঢ় লাল অথবা বাদামি ও চোখের পাতা হালকা খয়েরি-সবুজ; সাদা আগাসহ পাটকিলে ঠোঁট; পা ও পায়ের পাতা কমলা-হলুদ কিংবা অনুজ্জ্বল লাল। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা অভিন্ন, তবে শুধু পুরুষপাখির পায়ে গজালের মত খাড়া নখর আছে।
স্বভাব: বাদা তিতির সাধারণত লম্বা ঘাস, নল অথবা জলাশয় ও নদীর কিনারার ঝোপ এবং পার্শ্ববর্তী শস্যখেতে বিচরণ করে; জোড়ায় কিংবা ৫-১৫টির অগোছালো দলে দেখা যায়। এরা প্রধানত ঊষা ও গোধূলিতে জলজ তৃণভূমি ও প্লাবনভূমিতে আস্তে আস্তে ঘুরে খাবার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে বীজ, শস্যদানা ও অন্যান্য শস্য; তা ছাড়া পোকামাকড়ও খেয়ে থাকে। এর মাজে মধ্যে কর্কশ গলার ডাকে: চুক্রিরু, চুকিরু, চুকিরু; ভয় পেলে ডাকে: কিউ-কেয়ার..; এবং তীক্ষ্ম কণ্ঠে ‘গান’ গায়: চুলি-চুলি-চুলি …। ফেব্রুয়ারি-মে মাসের প্রজনন মৌসুমে এরা সচরাচর নলতলে কিংবা বনে বা জলাশয়ের ধারে গাছের নিচে ঘন ঝোপঝাড়ের মধ্যে নরম লতাপাতার স্তুপ করে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো উজ্জ্বল ফিকে ও হালকা পীত বর্ণের; মাঝে মাঝে লালচে ফুসকুড়ির মত দাগ থাকে; সংখ্যায় ৪-৬টি; মাপ ৩.৯ – ৩.০ সেমি। স্ত্রীপাখি একাই ডিমে তা দেয়।
বিস্তৃতি: বাদা তিতির বাংলাদেশের প্রাক্তন আবাসিক পাখি; এক সময় ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের তৃণভূমি ও নলবনে পাওয়া যেত, এখন নেই। ভারত ও নেপালসহ কেবল দক্ষিণ এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: বাদা তিতির বিশ্বে সংকটাপন্ন ও বাংলাদেশে মহাবিপন্ন হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশের ১৯৭৪ সালের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত।
বিবিধ: বাদা তিতিরের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ গলা-অলা খুদে-মুরগি (ইটালিয়ান: francolin = খুদে মুরগি; ল্যাটিন: gularis = গলার)।
আলোকচিত্রের ইতিহাস: বাদা তিতিরের ছবিটি নীলোৎপল মহন্ত (ইংরেজি: Nilutpal Mahanta) তুলেছিলেন এপ্রিল, ২০১৮ সালে যোরহাট, আসাম থেকে।
তথ্যসূত্র:
১. সাজেদা বেগম, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা -০০। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।
I have come across your article “বাদা তিতির“. The photo of the bird used here is an original work by me. I would be more than happy if you give me due credits for this photo in your article.
It was already mentioned in the Caption, but the caption was not showing due to design problem. I’ve mentioned it inside the article. Thanks a lot for your concern.
Thank you Sir for mentioning the credit.