[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Pelargopsis amauroptera সমনাম: Halcyon amauroptera Pearson, 1841 বাংলা নাম: খয়রাপাখ মাছরাঙা, ইংরেজি নাম: Brown-winged Kingfisher. জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য Kingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Dalcelonidae গণ/Genus: Pelargopsis, Gloger, 1842; প্রজাতি/Species: Pelargopsis amauroptera (Pearson, 1841)[/otw_shortcode_info_box]
ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Pelargopsis গণে বাংলাদেশে রয়েছে এর ২টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে ৩টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রজাতি দুটি হচ্ছে ১. খয়রাপাখ মাছরাঙা ও ২. মেঘহও মাছরাঙা। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে খয়রাপাখ মাছরাঙা।
বর্ণনা: খয়রাপাখ মাছরাঙা প্রকাণ্ড লাল ঠোঁট ও বাদামি ডানার মাছ শিকারি। এদের দৈর্ঘ্য ৩৬ সেমি, ডানা ১৫ সেমি, ঠোঁট ৭.৬ সেমি, পা ২ সেমি, লেজ ৯.২ সেমি। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা ও ঘাড় বাদামি-কমলা; কাঁধ-ঢাকনি ও ডানা কালচে বাদামি; পিঠ ও কোমর নীল; প্রান্ত-পালক ডানার বাকি অংশের চেয়ে গাঢ় বাদামি; গলা, বুক পেট ও অবসারণী একই রকম বাদামি-কমলা। এর চোখ বাদামি ও চোখের পাতা ইট-লাল; পা ও পায়ের পাতা লাল; ঠোঁটের গোড়া থেকে চোখ পর্যন্ত কালচে বাদামি টান চলে গেছে; ঠোঁট লাল, ঘন কালচে-বাদামি আগা। ছেলে ও মেয়েপাখির চেহারা অভিন্ন। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ অতি কমলা এবং কাঁধ-ঢাকনির কিনারা ও ডানার পালক-ঢাকনি ফ্যাকাসে; ঘাড়ে কালো ডোরা ও দেহতল কালো।
স্বভাব: খয়রাপাখ মাছরাঙা জোয়ার-ভাঁটায় সিক্ত নালা ও প্যারাবনের প্রবহমাননদীতে বিচরণ করে; একা বা জোড়ায় ঘুরে বেড়ায়। উঁচু ডাল থেকে পানিতে ঝাঁপদিয়ে এরা শিকার ধরে খায়; খাদ্যতালিকায় রয়েছে কাকড়া, সরীসৃপ ও মাছ।ওড়ার সময় এরা পানির অল্প ওপর দিয়ে চলে, কিন্তু বসার আগে উপরে উঠে উঁচুডালের দিকে যায়। ওড়ে ওঠার সময়, বিশেষ করে বাধ্য হয়ে উঠতে হলে, এরা খুবজোরে শব্দ করে ডাকে: কা-কা-কা-কা..। অন্য সময় করুণ সুরে শিস্ দিয়ে ডাকে:চৌ-চৌ-চৌ-..। মার্চ-এপ্রিল মাসের প্রজনন ঋতুতে খাড়া পাড়ে ৩০-৬০ সেমি.দীর্ঘ ও ১০ সেমি. চওড়া সুড়ঙ্গ কেটে বাসা বানিয়ে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলোসাদা ও গোল;সংখ্যায় ৪টি; মাপ ৩.৪×২.৮সেমি।
বিস্তৃতি: খয়রাপাখ মাছরাঙা বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি। বরিশাল ও খুলনা বিভাগের প্যারাবনে পাওয়া যায়। ভারতের সুন্দরবন অংশসহ বঙ্গোপসাগরের উপকূল থেকে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড এবং উত্তর-পশ্চিম মালয়েশিয়া পর্যন্ত এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: খয়রাপাখ মাছরাঙা বিশ্বে প্রায়-বিপদগ্রস্ত বলে বিবেচিত। প্রজাতিটি তার পরিসীমা জুড়ে মোটামুটি দৃশ্যমান বলে মনে করা হয়। দক্ষিণাঞ্চলীয় মায়ানমারের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপপুঞ্জের ম্যানগ্রোভ অঞ্চলে কমপক্ষে ২৪০০ টিরও বেশি টিকে আছে। প্রবণতা হিসেবে আইইউসিএন উল্লেখ করেছে যে, প্রজাতিগুলির পরিসীমা জুড়ে ক্রমবর্ধমান ম্যানগ্রোভ বনগুলির ধ্বংসলীলা ও অবনতির ফলে আংশিকভাবে দ্রুত এদের সংখ্যা কমেছে বলে সন্দেহ করা হয়। বিগত দিনে যেহেতু এদের সংখ্যা কমার প্রবণতা দেখা গেছে তাই আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে প্রায়-বিপদগ্রস্ত (Near Threatened NT) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ১৯৭৪[১] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৩]
বিবিধ: খয়রাপাখ মাছরাঙার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ কালোডানা সিন্ধুসারস (গ্রীক: pelargos = সারস, opsis = চেহারা, amauros = কালচে, pteros = ডানাওয়ালা)।
তথ্যসূত্র:
১. মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও এম. কামরুজ্জামান, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা – ৭৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।
২. “Pelargopsis amauroptera“, http://www.iucnredlist.org/details/22683213/0, The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৫৪।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।