ভূমিকা: নটে শাক (বৈজ্ঞানিক নাম: Amaranthus viridis) হচ্ছে উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলের উদ্ভিদ। এর পাতা, মূলে নানা ভেষজ গুণ আছে। এছাড়াও শাক হিসাবে খাওয়া হয়।
নটে শাক-এর বর্ণনা:
একবর্ষজীবী, ঋজু বা ঊর্ধ্বগ, ক্ষুদ্র, সরু বীরুৎ, ৭০-৮০ সেমি উঁচু, বিরলভাবে শাখান্বিত বা প্রায়শ নিম্নাংশের কাছে ধনুকসদৃশ শাখাযুক্ত, কাণ্ড সরু, ব্যাস ৫ মিমি পর্যন্ত, মসৃণ বা সূক্ষভাবে রোমশ, লালচে সবুজ।
পত্র ১.৫-৩.০ X ১-২ সেমি, ডিম্বাকার বা উপবৃত্তাকার, দীর্ঘ সবৃন্তক, পত্রবৃন্ত ১০ সেমি পর্যন্ত লম্বা, নিম্নাংশ কর্তিতা, শীর্ষ স্থূলাগ্র বা সখাঁজ, মসৃণ।
পুষ্পবিন্যাস প্রান্তীয় বা উধ্বাংশের পত্রে কাক্ষিক, অপ্রকৃত স্পাইক একল বা বিরলভাবে শাখান্বিত যৌগিক মঞ্জরী গঠন করে।
পুষ্প ঘন গুচ্ছিত, প্রায় ৭ মিমি ব্যাসবিশিষ্ট, অতি ক্ষুদ্র, সবুজ, মঞ্জরীপত্র ও মঞ্জরীপত্রিকা সদৃশ, পুষ্পপুট অপেক্ষা খর্ব, স্পষ্টতঃ ডিম্বাকার, উদগ্রশিখর, শুষ্ক ঝিল্লিসদৃশ, ০.৫-১.০ মিমি দীর্ঘ।
পুষ্পপুট ৩টি, দৃঢ়, প্রান্ত-আচ্ছাদী, সবুজ তরীদল দ্বারা ঝিল্লিময়, সূক্ষ্মাগ্র, ১.৩-১.৬ মিমি লম্বা, সবুজ পুষ্পপুটাংশ শুষ্ক ঝিল্লিসদৃশ, প্রান্তযুক্ত, ১.০-১.৫ মিমি লম্বা।
পুংকেশর ৩টি, পুংদন্ড মুক্ত, পরাগধানী আয়তাকার, ২-কোষী। গর্ভদণ্ড ২-৩টি, ০.৩ মিমি লম্বা, গর্ভমুণ্ড ২-৩টি, সুতাগ্র।
ফল অবিদারী, দৃঢ়ভাবে কুঞ্চিত, দৃঢ় পুষ্পপুট ও মঞ্জরীপত্রের চেয়ে দীর্ঘায়িত উপবৃত্তীয় অ্যাকিন জাতীয়, ১.৩-১.৯ মিমি দীর্ঘ, ফ্যাকাশে হলুদাভ-বাদামি।
বীজ উত্তেল, চাকতি সদৃশ, চাপা, বাদামি-কালো, উজ্জ্বল, সূক্ষভাবে জালিকাকর, ০.৯-১.২ x ০.৮-১.০ মিমি ।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ৩৪ (FedorOV, 1969)।
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
জল সংবদ্ধ এলাকা, পতিত বা অকর্ষিত জমি ও রাস্তার পার্শ্ব ব্যতীত ব্যাপক বিস্তৃতি লক্ষ্যনীয়। ফুল ও ফল ধারণ কাল বর্ষার শেষ হতে মধ্য গ্রীষ্মকাল। বংশ বিস্তার হয় বীজ দ্বারা।
বিস্তৃতি:
সমগ্র ভারত, শ্রীলংকা ও পৃথিবীর অন্যান্য গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও উষ্ণতর দেশে বিস্তৃত। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র এই প্রজাতিটি পাওয়া যায়।
নটে শাক-এর অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
এই গণের অন্যান্য উদ্ভিদের মতো এর পাতা পালং শাকের ন্যায় বা সবুজ পুষ্টিকর শাক হিসেবে খাওয়া হয় (Townsend, | 198O)।
এটি স্নিগ্ধকারক, মূত্রবর্ধক ঔষধ ও সর্প দংশনের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় (Kirtikar et al., 1935)। জাতিতাত্বিক ব্যবহার: কচি বিটপ ও পাতা সবজি হিসেবে খাওয়া হয়।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৬ষ্ঠ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) নটে শাক প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশে নটে শাক সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. এ বি এম রবিউল ইসলাম (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৬ষ্ঠ, পৃষ্ঠা ১০০। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।