তিল সেসামাম গণের একটি তৈল উৎপাদক ঔষধি গুল্ম

তিল (বৈজ্ঞানিক নাম: Sesamum indicum) কাল, লাল, শ্বেত ও ধূসর বর্ণভেদে চারি প্রকার। কোনো কোনো স্থানে এর গাছ এক হাতের অধিক বড় হয় না। আবার কোন কোন স্থানে দুই হাত পরিমাণ উচ্চ হয়। সচরাচর এর ফুল শ্বেতবর্ণ। আর এক প্রকার তিলের ফুল লালবর্ণ হয়। সাদা তিলের পাতা অতিশয় চওড়া ও সবুজ বর্ণ। কৃষ্ণতিল অপেক্ষা সাদা তিল খেতে মিষ্টি এবং তাতে তেলের ভাগ বেশী আছে।

বিস্তৃতি: ভারতের অন্তর্গত সিন্ধুদেশ, বোম্বাই, মাদ্রাজ, হায়দ্রাবাদ, পাঞ্জাব, রাজপূতানা, অযোধ্যা, আসাম, বঙ্গদেশ, বেরার, বহ্মদেশ প্রভৃতি স্থানে প্রচুর পরিমাণে তিলের চাষ হয়।

চাষাবাদ: বৃষ্টি হলে তিলের জমিতে একবার চাষ ও মই দিয়ে দুই চারদিন পরে আবার চাষ ও দুইবার মই দিতে হয়। পুনরায় আবার দুইটি চাষ ও মই দিয়া মাটি বেশ গুড়া হলে বিঘা প্রতি ৩০-৪০ মণ গোবর সার দিয়ে জমিতে রস থাকতে থাকতে তিলের বীজ বপন করতে হয়। তিলের জমি বেশ উচু হওয়া আবশ্যক। পলিযুক্ত জমিতে বা পাথুরিয়া জমিতে তিলের গাছ বেশ ভাল হয়। তিলের জমির মাটিতে চুণ প্রভৃতি থাকিলে বেশ ভাল হয়।

মাঘ মাস তিলের বীজ বোনার প্রকৃত সময়। চৈত্র মাস তিল কাটবার সময়। তিল কেটে একত্রে গাদা দিয়া ৪ থেকে ৫ দিন রাখতে হয় এবং লাঠি দ্বারা ঠেঙ্গাতে হয় তাহলে তিল পাওয়া যায়। আউশ বা কৃষ্ণতিল আগষ্ট কিংবা সেপ্টেম্বর মাসে বপন করিতে হয় এবং জানুয়ারী মাসে পেকে থাকে। আউশ তিলের সাথে কলাই অথবা তুলা বীজ মিশ্রিত করিলে উভয় ফসলই এক জমিতে পাওয়া যায়। তিলের জমিতে চাষ ও মাটি প্রস্তুত করার প্রণালী-আমন তিলের ন্যায়। ঢাকা জেলায় মাঘ মাসের মধ্যভাগে বুনতে হয়। তিলগুলি চৈত্র মাসে কাটতে হয়।

তেল তৈরি: তিল ঝেড়ে ধুলা ও গুড়া পরিষ্কার করতে হয়। পরিষ্কৃত তিলকে ঘানিতে ভাঙ্গলে তৈল হয়। তৈল ভারতবর্ষ হইতে বহু পরিমাণে বিদেশে রপ্তানী হয়। এরপরে তিলের খইল গরুতে খাইলে উহার দুধ বৃদ্ধি হয়। অন্য খইল অপেক্ষা তিলের খইল গরুতে ভাল খায়।

আরো পড়ুন:  তিল গাছ, বীজের ২৫টি ভেষজ ব্যবহার, গুণাগুণ ও উপকারিতা

তেলের ব্যবহার: তিলের তেল ছবি আঁকবার জন্য ব্যবহৃত হয়। ইহা সাবান প্রস্তুত, শরীরে মালিশ, ও জ্বালানের জন্য ব্যবহৃত হয়। বাদামের তৈল ও ঘৃতের সাথে তিল তেল ভেজাল দেয়। বিদেশ হতে যে অলিভ অয়েল আমদানী হয় তাহাতে তিল তৈল মিশ্রিত থাকে। তিল তৈল হইতে অনেক সুগন্ধি তৈল প্রস্তুত হয়, এই তৈলের সহিত গোলাপ, বেল, বকুল, প্রভৃতি পুষ্প মিশ্রিত করিয়া সুগন্ধি তৈল প্রস্তুত করে।

ঔষধার্থে ব্যবহার: তিল থেকে বহু ধরনের ঔষধি উপকারিতা পাওয়া যায়। বেঁটে আঠার মতো করে মাখন মিশিয়ে অর্শস্থানে দিলে রক্তপাত বন্ধ হয়। তিলের তৈল বাত রোগের জন্য উপকারী। তিলর তেলে মাথা শীতল রাখে। বাটা তিল দগ্ধ স্থানে ও টাকে দিলে ভাল হয়। প্রাতঃকালে তিলের ফুল হতে শিশির বা জল খাইলে বা চক্ষে দিলে চক্ষুরোগ আরাম হয়। পাতার রস ৬৭ দিন খেলে রক্ত আমাশয় আরাম হয়। তিল চূর্ণ ১০ গ্রেণ প্রত্যহ ২৪ বার ব্যবহার করিলে বাধক রোগ আরাম হয়।

তথ্যসূত্রঃ

১. ডা: শ্রীযামিণী রঞ্জন মজুমদার: খাদ্যশস্য, মি: বি ছত্তার, কলকাতা, দ্বিতীয় সংস্করণ ১৩৫১, পৃষ্ঠা, ৭৮-৮২।

Leave a Comment

error: Content is protected !!