ভূমিকা: টক আতা হচ্ছে এনোনাসি পরিবারের এনোনা গণের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। এই প্রজাতিটি ফল গাছ হিসাবে লাগানো হয়ে থাকে।
বর্ণনা: টক আতা ছোট বৃক্ষ জাতীয়, এদের কাণ্ড মসৃণ ও কচি শাখা সমূহ রোমশ হয়। পত্র সবৃন্তক, পত্রবৃন্তক ৪-১৩ মিমি লম্বা, পত্রফলক ৪.৮-১৬ X ১.৩-৬.৮ সেমি, আয়তাকার-বিডিম্বাকার, সূক্ষ্মাগ্র বা সামান্য দীর্ঘা, উপর পৃষ্ঠ উজ্জ্বল গাঢ় সবুজ ও মসৃণ, তলীয় পৃষ্ঠ অনুজ্জ্বল ও সূক্ষ রোমশ থেকে মসৃণ ।
পুষ্পবিন্যাস পত্রপ্রতিমুখ বা এক্সট্রা-এ্যাক্সিলারি ১-২টি পুষ্প বিশিষ্ট। পুষ্পদণ্ড ২-৫ মিমি লম্বা, কাষ্ঠল পুষ্পবৃন্তিকা ১.৫-২.০ সেমি লম্বা। মঞ্জরীপত্রিকা ব-দ্বীপ সদৃশ, ঘন রোমশ। দলসমূহ স্থুল, বাইরের গুলি ২.৮-৩.৩ X ২.১-২.৫ সেমি, স্পষ্টতঃ ডিম্বাকার, সূক্ষাঘ থেকে দীর্ঘাগ্র, তাম্বুলাকার, প্রান্তস্পর্শী,অধিকতর নিকটবর্তীগুলি ২.৫-২.৮ x ১.৮-২.০ সেমি, ডিম্বাকার, সূলা, কীলকাকার, প্রান্ত-আচ্ছদী, পুষ্পধার শাঙ্কব, রোমশ।
পুংকেশর ৪-৫ সেমি লম্বা, অপ্রশস্তভাবে কীলকাকার, যোজক-শীর্ষ কর্তিতা, পরাগধানী কোষ্ঠ অসম। গর্ভপত্র রৈখিক, স্পষ্টতঃ যমক, গর্ভাশয় লালচে বাদামি রঙের রোমাবৃত, গর্ভদণ্ড খর্ব, গর্ভমুণ্ড কর্তিতা।
ফল ডিম্বাকার একিনেট, ২৫-৩০ x ১৫-২০ সেমি, গাঢ় সবুজ, একিনেট, কণ্টক বক্র, মাংসল, আঁশালো অংশ সাদা রসালো ও সুগন্ধযুক্ত। ফল রসালাে, কাঁচায় সবুজ, পাকলে সােনালি হলুদ। খুব টক, তবে অনেক পাকলে মিষ্টি বাড়ে। এদের ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২০ = ১৪, ১৬ (Fedorov, 1969)।
আবাসস্থল ও চাষাবাদ: সমতল ভূমি এবং ১০০০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতার উঁচু অঞ্চলেও জন্মাতে পারে। বীজ দ্বারা মুকুলোদগম এবং জোড় কলম করে ক্লোনাল পদ্ধতিতেও এই গাছটির বংশ বিস্তার সম্ভব। ফুল ও ফল ধারণ ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাসে। উৎপাদন এলাকা বাণিজ্যিকভাবে এ দেশে চাষ করা যায়। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় এর চাষ ভালাে হয় । টিস্যুকালচারের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা যায়।
বিস্তৃতি: গাছটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আমেরিকায় দেশজ কিন্তু এখন ইহা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় প্রায় সকল দেশেই জন্মাতে পারে। বাংলাদেশে ইহা বসত বাড়ীর বাগনে জন্মানো হয়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্বের দিক: পরিপক্ক ফল আইসক্রীম বা দুধের সাথে মিশিয়ে মজাদার পানীয় ডেসার্ট হিসেবে পরিবেশন করা যায় বা সদ্য খাওয়া যায়। ফল থেকে জেলী, জুস, নেকটার এবং সিরাপ তৈরী করা যায়। চিনির একটি ভাল উৎস এই ফল। ফলের সাদা অংশ জুস, জেলি, ক্যান্ডি এবং আইসক্রিমের সুগন্ধ (ফ্লেভার) তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ।
এদের ঔষধিগুণ আছে, অনেক দেশে ঔষধি বৃক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় বলে অ্যান্টি ক্যান্সার ফল হিসেবে পরিচিত। বলবর্ধক হিসেবে কাজ করে । টক আতা দেহের রােগপ্রতিরােধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এ গাছের নির্যাস টিউমারের বৃদ্ধি শ্লথ করে দেয়।
খাদ্য উপাদান: সম্পূর্ণ ফলের প্রায় ৬৮% হচ্ছে চিনি, ভিটামিন B ০.০৭ মিগ্রা/ ১০০ গ্রাম পাল্প এবং ভিটামিন C ২০ মিগ্রা/ ১০০ গ্রাম পাল্প (Verhij and Coronel, 1992)।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৬ঠ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) টক আতা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে টক আতা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে বাগানে ও বাসা বাড়িতে অধিক আবাদের উৎসাহ করা যেতে পারে।[১]
তথ্যসূত্র:
১. এম এ হাসান (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১৩৪-১৩৫। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Judgefloro
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।