কদবেল গ্রীষ্মকালীন অঞ্চলের সুস্বাদু ও জনপ্রিয় ফল

ফল

কদবেল

বৈজ্ঞানিক নাম: Limonia acidissima L., Sp. Pi. ed. 2.: 554 (1762). সমনাম: Schinus limonia L. (1753), Feronia elephantum Corr. (1800), Feronia limonia (L.) Swingle (1914). ইংরেজি নাম: Wood Apple, Elephant Apple, Curd Fruit, Monkey Fruit. স্থানীয় নাম: কয়েথবেল, কদবেল।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae বিভাগ: Angiosperms অবিন্যাসিত: Edicots বর্গ: Sapindales পরিবার: Rutaceae গণ: Limonia প্রজাতি: Limonia acidissima

ভূমিকা: কদবেল বা কৎ বেল বা কয়েথবেল (বৈজ্ঞানিক নাম: Limonia acidissima ইংরেজি: Wood Apple, Elephant Apple, Curd Fruit, Monkey Fruit) হচ্ছে রুটেসি পরিবারের লিমোনিয়া গণের বৃক্ষ। ফল হিসেবে অনেকের কাছে প্রিয়।

কদবেলের গণের বিবরণ:

কদবেল কন্টকিত বৃক্ষ। এদের পত্র একান্তর, সচূড়পক্ষল, পত্রক ৫-৭টি, সাধারণত প্রতিমুখ, পত্রবৃন্ত পক্ষযুক্ত। পুষ্পবিন্যাস শীর্ষক বা পার্শ্বীয় হালকা প্যানিকল বা রেসিম।

পুষ্প মিশ্রবাসী। বৃতি ৫-দস্তুর, ছোট, চ্যাপ্টা, ক্ষণস্থায়ী। পাপড়ি ৫টি, কদাচিৎ ৪৬টি, ছড়ানো, প্রান্ত-আচ্ছাদী।

পুংকেশর ১০-১২টি, খাটো চাকতির বহির্ভাগে প্রবেশিত, পুংদন্ড চ্যাপ্টা, পাশে এবং সম্মুখে লোমশ, শীর্ষ তুরপুনাকার, পরাগধানী হৃৎপিন্ডাকার বা রেখাকার-আয়তাকার।

গর্ভাশয় আয়তাকার, ৫-৬ কোষী, শেষ পর্যন্ত ১-কোষী, গর্ভদন্ড অনুপস্থিত, গর্ভমুন্ড আয়তাকার, মুষলাকার, ক্ষণস্থায়ী, ডিম্বক অসংখ্য, বহুপ্রান্তীয় অমরার উপর বহু সারি সমাকীর্ণ।

কদবেলের বর্ননা:

কদবেল মধ্যম-আকৃতির, অর্ধ-পত্রঝরা বৃক্ষ, ১২ মিটার পর্যন্ত উঁচু, কাক্ষিক তীক্ষ্ম কন্টকযুক্ত, কন্টক ৪ সেমি পর্যন্ত লম্বা, সমস্ত অংশ মসৃণ।

পত্র একান্তর, সচূড়পক্ষল, ১২ সেমি পর্যন্ত লম্বা, পত্রবৃন্ত এবং পত্রকঅক্ষ সরু পক্ষযুক্ত, পত্রক ৫-৭টি, প্রতিমুখ, বিডিম্বাকার, ২.৫-৩.৫ x ১-২ সেমি, প্রায় বৃন্তহীন, চর্মবৎ, গোড়া কীলকাকার যার শীর্ষ ভোঁতা, শীর্ষ ভোঁতা দম্ভর, অখন্ডিত বা প্রান্ত বরাবর গ্রন্থিযুক্ত হালকা দস্তুর।

পুষ্পবিন্যাস কাক্ষিক বা শীর্ষক, অনেক পুক প্যানিকল বা রেসিম। পুষ্প ছোট, উভলিঙ্গ, ফিকে লাল বা সবুজাভ-সাদা, বৃতি ৫-দপ্তর, দন্তক খন্ড ছোট, বদ্বীপ আকার, অণুরোমশ, শীর্ষের নিকট সিলিয়াযুক্ত।

পাপড়ি ৫টি, ডিম্বাকার-আয়তাকার, প্রায় ৬ x ২ মিমি। পুংদন্ড ১০ বা ১২টি, প্রায় ৪ মিমি লম্বা, গোড়া চ্যাপ্টা, উপরিভাগ তুরপুনাকার, পরাগধানী রেখাকার-আয়তাকার।

গর্ভাশয় গোলাকার, অসম্পূর্ণভাবে ৪-৬ প্রকোষ্ঠী, গর্ভমুন্ড আয়তাকার-মুষলাকার, কোষ স্বল্প সংখ্যক সারিতে অনেক ডিম্বকবিশিষ্ট।

ফল গোলাকার বেরী, ৫-৮ সেমি চওড়া যা সবুজাভ-সাদা বা বাদামী, শক্ত, কাষ্ঠল, আঁশযুক্ত অংশ রসালো, পাকলে চকোলেট রঙের, অনেক-বীজী।

বীজ আয়তাকার, সামান্য চ্যাপ্টা, প্রায় ৫ x ৩ মিমি, বহিস্তৃক বাদামী, রোমশ। ফুল ও ফল ধারণ:  ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাসে এর ফুল ও ফিল ধরার উপযুক্ত সময়। [১]

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ১৮ .[২]

আবাসস্থল ও চাষাবাদ:

খরা অবস্থায় উজ্জ্বল মৃত্তিকা, পর্যায়ক্রমিক বন্যা সহ্য করতে পারে বা সামান্য জলাভূমি। বীজ, মূলের শাখা কলম এবং বাডিং দ্বারা বংশ বিস্তার করে।

বিস্তৃতি:

দক্ষিণ ভারত এবং শ্রীলংকার স্বদেশী। মায়ানমার, পাকিস্তান, ইন্দো – চীন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং আমেরিকায় আবাদী।

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় আবাদী। বেশী দেখা যায় ঢাকা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া এবং অন্যান্য উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলায়।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

ফল ভক্ষণীয় এবং জেলী বা আচার তৈরী করে। ফলের মন্ড বিষাক্ত পোকার এবং সরীসৃপের কামড়ে প্রতিষেধক হিসেবে বহিভাগে প্রয়োগ করা হয় এবং রুক্ষ মেজাজের চিকিৎসায়ও পরামর্শ দেয়া হয়।

মন্ড ব্যবহৃত হয় কাশি, আমাশয় এবং হৃদরোগ নির্মূলে, এবং হাপানি, ক্ষয় রোগ, টিউমার, অপথ্যালমিয়া, শ্বেতপ্রদর এবং ডায়রিয়া রোগে।

পাতা সঙ্কোচক, পাকস্থলীয় বায়ুনাশক এবং হজমে অসুবিধা, পেটফাঁপা, ডায়রিয়া, আমাশয়, বমি, হিক্কা এবং অর্শ রোগে ব্যবহৃত হয় (Ghani, 2003). কাঠ ভালো পালিশ নেয় এবং গৃহনির্মাণ, চাকা এবং কৃষিজ যন্ত্রপাতিতে ব্যবহৃত হয়।

জাতিতাত্বিক ব্যবহার:

শ্রীলংকায় ফলের মন্ড থেকে উড অ্যাপল ক্রীম প্রস্তুত করা হয়। ইন্দো-চীনে কন্টক এবং বাকল কিছু ঔষধ প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়। অতিরিক্ত রক্তস্রাব, যকৃত পীড়া, কামড় এবং হুল ফোটানো এবং অরুচির চিকিৎসায় (Verheij and Coronel, 1992).

অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১oতম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) কদবেল প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত।

বাংলাদেশে কদবেল সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।[৩]

তথ্যসূত্র:

১. এম আমান উল্লাহ (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১o (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১৭৭-১৭৮। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

২. Kumar, V. and Subramaniam,, B. 1986 Chromosome Atlas of Flowering Plants of the Indian Subcontinent. Vol.1. Dicotyledons Botanical Survey of India, Calcutta. 464 pp.  

৩. এম আমান উল্লাহ প্রাগুক্ত, প.  ১৭৭-১৭৮

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Ajtjohnsingh

আরো পড়ুন:  চালতা এশিয়ায় জন্মানো টক জাতীয় জনপ্রিয় ফল

Leave a Comment

error: Content is protected !!