টালি-এর বিবরণ:
টালি মাঝারি থেকে বড় আকারের অনুভূমিকভাবে বিস্তৃত ডালপালা বিশিষ্ট চিরসবুজ বৃক্ষ, উচ্চতায় প্রায় ২০ মিটার পর্যন্ত হয়। এদের গুঁড়ি বা কাণ্ড সরল, সোজা এবং গোলাকার। বাকল মসৃণ, গাঢ় বাদামি বর্ণের এবং বাকলে রয়েছে দুধ সাদা কষ। টালির পাতা আয়তাকার, লম্বায় ১৫-৩০ সেন্টিমিটার এবং পাতাগুলো ডালপালার মাথায় গুচ্ছবদ্ধভাবে চক্রাকারে সজ্জিত। কচি পাতাগুলো বাদামি বর্ণের মখমলের মতো মোলায়েম লোমশে আবৃত। পাতার কিনারা মসৃণ এবং আগা সূচালো। টালি বৃক্ষে মার্চ-এপ্রিল মাসে পাতার কক্ষে সাদা বর্ণের ঘ্রাণযুক্ত ফুল ফোটে। এদের ফল বেরি জাতীয়, ডিম্বাকার, লম্বায় প্রায় ৪.০ সেন্টিমিটার,বাদামি বর্ণের মখমলের মতো মোলায়েম লোমশযুক্ত। জুন-জুলাই মাসে ফল পরিপক্ক হয়।প্রতি ফলে ১-২টি করে বীজ থাকে।
ভৌগোলিক বিস্তৃতি:
বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, শ্রীলংকা, চীন, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া,পাপুয়া নিউ গিনি ও অস্ট্রেলিয়া।
বাংলাদেশে অস্তিত্বমূলক অবস্থা:
২০১২ সালের প্রণীত বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে টালি গাছ রক্ষিত উদ্ভিদ (Protected Plant) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশে বিস্তৃতি ও প্রাপ্তিস্থান:
চট্টগ্রাম (দুরুং, হাজারীখিল), পার্বত্য চট্টগ্রাম (কাপ্তাই), কক্সবাজার ও সিলেটের চিরসবুজ বনে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো টালি গাছ কদাচিৎ দেখা যায়।
প্রজনন ও বংশবিস্তার:
সাধারণত বন এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে বীজজাত চারা দিয়ে টালির বংশবিস্তার হয়। জুন-জুলাই মাসে সংগৃহীত পাকা ফল ২-৩ দিন রোদে শুকিয়ে ফল থেকে বীজ বের করা হয়। নার্সারিতে পলিব্যাগে বীজ বপন করে চারা উৎপন্ন করা হয়। চারা গজানো বা অঙ্কুরোদগমের হার শতকরা ৪০-৫০ ভাগ। চারা গজাতে সময় লাগে ১৫-২০ দিন।
টালি-এর গুরুত্ব ও ব্যবহার:
টালি গাছের কাঠ লালচে বাদামি বর্ণের, শক্ত ও স্থিতিস্থাপক। কাঠ দিয়ে নৌকার দাঁড় বা বৈঠা এবং মাস্তুল বা পাল তোলার খুঁটি, প্লাইউড, ফ্লাশ ডোর এবং ব্লাক বোর্ড বানানো হয়। গাছের দুধ সাদা কষ দিয়ে নিম্নমানের রবার জাতীয় দ্রব্যাদি তৈরি করা হয়।
সংরক্ষণের জন্য গৃহীত পদক্ষেপ:
আরণ্যক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট এর সহযোগিতায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ২০১৪ সালে টালির চারা লাগিয়ে প্রজাতিটিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।