কাঁচা সফেদায় (বৈজ্ঞানিক নাম: Manilkara zapota) দুধের মতো এক প্রকার আঠা বেরোয় এবং সেটিতে সামান্য ট্যানিন আছে। পাকা ফল স্বাদে মধুর, তৃপ্তিদায়ক, অধিক পরিমাণে শর্করা সমৃদ্ধ। গাছের ছাল বলকারক ও জ্বরনাশক। বীজ মূত্রকারক ও মৃদু বিরেচক।
রোগ প্রতিকারে এই সুমিষ্ট ফলটিকে কিভাবে ব্যবহার করবেন। মনে রাখবেন— সুপক্ব ও সুমিষ্ট ফলই ব্যবহার্য, কাঁচা ফল খাবেন না। মধুমেহ (Diabetes mellitus) রোগে যাঁরা ভুগছেন, তাঁরা লোভের বশবর্তী হয়ে ভুলেও সপেটা খাবেন না।
সফেদা-এর ভেষজ ব্যবহার
১. অপুষ্টিতে: শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে কিনা, সেটা লক্ষ করার দায়িত্ব বাপ-মায়ের উপরই অধিক বর্তায়। বাবা মা যদি চাকরি বা বাইরের কাজ বেশী করেন, দীর্ঘ সময় বাইরে কাটান তাহলে সন্তান বাইরের খাবার, ভাজা পোড়া ইত্যাদি খেয়ে থাকে, এতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা সকলের অজান্তে অপুষ্টির শিকার হতে থাকে। এছাড়া ক্রমাগত দারিদ্র্য এবং খাদ্য সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞানের অভাববশতঃ অপুষ্টি দেখা দেয়। এই অপুষ্টির ফল কিন্তু মারাত্মক। এজন্য বৎসরে কত শিশু অন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তার হিসেব সঠিকভাবে কোন দিনই পাওয়া যাবে না। সুতরাং সাবধান হয়ে যাওয়া ভাল। খুব শিশু হলে পাকা সফেদা ৫০ গ্রাম, তারপর বাড়তে বাড়তে বয়স্কদের ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম মাত্রায় খাওয়া উচিত। ভালভাবে উপরের পাতলা ছাল ছাড়িয়ে, ভেতরের বীজ বাদ দিয়ে খেতে হবে। সকালের দিকে একবার এবং এভাবে বৈকালের দিকে একবার খেলে আরো ভাল। বেশ কিছুদিন খেতে হবে, তবে মাঝে মাঝে খেয়ে রাখলেই হলো, আর কোন ভয় থাকে না। খাওয়ার পর পরিমাণমত ঠাণ্ডা জল খাবেন।
২. অত্যধিক পরিশ্রমজনিত ক্লান্তিতে: সামর্থ্যের অধিক পরিশ্রম হলে, রোদে ঘোরাফেরা বেশি করলে হঠাৎ হঠাৎ ক্লান্তি আসাটা একেবারেই স্বাভাবিক। এই সময় পাকা সফেদার (ছাল বীজ বাদে) সরবত এক গ্লাস খেলে ১০। ১৫ মিনিটের মধ্যেই ক্লান্তি চলে যায়। এক্ষেত্রে সফেদা ১০০-১৫০ গ্রাম, জল পরিমাণমতো নিয়ে চটকে, তাতে সামান্য লবণ মিশিয়ে গ্লাসখানিক করতে হবে। এরপর সামান্য একটু ঠাণ্ডা জল খেয়ে নেওয়া উচিত।
৩. হৃদ্দৌর্বল্যে/রোগান্তিক দুর্বলতায়: সামান্যতে বুক ধড়ফড় করে, ব্লাড প্রেসার ও নাড়ীর গতি সর্বদা নিম্নমুখী, তার উপর কোন প্রকার রোগভোগ হলে সেটা যায় দ্বিগুণ বেড়ে। এমতাবস্থায় পাকা সফেদা উত্তম দাওয়াই। প্রতিদিন বিকালের দিকে উপরিউক্ত পদ্ধতিতে প্রস্তুত সফেদা সরবত এক গ্লাস ক’রে খেতে পারেন, নতুবা ঐ সপেটার সরবত না করেও খেতে পারেন। যেটা ভাল লাগবে, সেটাই খাবেন, এক একদিন এক এক রকমে খেলেও কোন ক্ষতি নেই। এভাবে মাসখানিক খেলে অবস্থা আয়ত্তের মধ্যে চলে আসে।
৪. বার্ধক্যকে সঠিকভাবে ভোগ করতে চাইলে: দেখুন, বার্ধক্য হচ্ছে যেকোন প্রাণীর স্বাভাবিক পরিণতি। এটি কেবল প্রাণীর ক্ষেত্রে নয়, অন্যান্য বহু ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আবার বার্ধক্যকে রং মেখে দূরে সরিয়ে রাখা যেমন সম্ভব নয়, তেমনি নানাবিধ ঔষধ খেয়েও নয়। অবশ্য এজন্য হতাশ হবারও কোন কারণ দেখছি না। বার্ধক্য আসুক, সেই বার্ধক্যকে সুস্থ রেখে ভোগ করতে পারলেই তো সমস্যা মিটে গেল। অবশ্য এক এক বয়সে জীবনকে এক এক ভাবে ভোগ করতে হয়। কৈশোরে কিংবা বার্ধক্যে যৌবনের উপভোগ কামনা করাটাও তো বৃথা। তা সত্ত্বেও আমরা সুস্থ বার্ধক্য যদি কামনা করি, সেটা অন্যায় কিছু হবে না। অতএব যতদিন পাওয়া যায়, ততদিন প্রত্যহ ১০০ গ্রাম করে পাকা সফেদার ছাল ছাড়িয়ে বীজ বাদ দিয়ে প্রয়োজনে পরিমাণমতো লবণ সহযোগে খেতে থাকুন। এসময় সহজপাচ্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করুন। অত্যধিক তেল-ঘি-চর্বি জাতীয় দ্রব্য একবারেই পরিত্যাজ্য। ৫০ পেরিয়ে এভাবে জীবনকে চালিয়ে নিয়ে যেতে চাইলে ৭০ । ৭৫ বছরেও আপনার জুলুস অন্যের নজর কেড়ে নেবে, তখনও চাল-চলন থাকবে রীতিমত সুঠাম।
৫. প্রসবান্তিক দুর্বলতায়: প্রসবের পর দুর্বলতা আসাটা একেবারেই স্বাভাবিক ব্যাপার। এ সময় হিজিবিজি খেলে পেটের দোষ দেখা দিতে পারে। আর একবার পেটের গোলমাল দেখা দিলে আপনার ও আপনার শিশুর কষ্টের সীমা থাকবে না। এ সময় প্রত্যহ দু’একটি ক’রে পাকা সফেদা এবেলা ওবেলা দু’বেলা খেলে কিংবা মাঝে মধ্যে বিকালের দিকে সফেদার সরবত খেতে পারলে দুর্বলতা যেমন আসে না, তেমনি পেটের গোলমালও হয় না। মাসখানিক খেলে উপকার বুঝতে পারবেন।
৬. স্তন্যাল্পতায়: একবার বুকের দুধে টান পড়লে তারপর তাকে নিয়মিত করতে আপনাকে যে কত নিয়মিত ভাবে চিকিৎসা করাতে হবে, সেটা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ জানে না। টিনের দুধই হোক আর গরু-ছাগলেরই দুধ হোক, সবকিছুরই জীবাণুনাশ করতে করতে নিজেরই প্রাণনাশ হবার যোগাড়। অথচ একটু সাবধানতা অবলম্বন ক’রে বুদ্ধি খরচ করলে খরচও বাঁচে, আবার বাচ্চাও প্রকৃতিপ্রদত্ত জীবাণুরহিত পয়োধরা থেকে অমৃত পান ক’রে সুস্থ-সবল দেহলাভ করবে। এক্ষেত্রে ‘মা-কে প্রত্যহ ১০০-১৫০ গ্রাম সফেদা দু’বেলা খেতে হবে প্রসবের পর থেকে ৫ । ৬ মাস। মাঝেমাঝে (একটু বড় হলে) বাচ্চাটাকেও একটু একটু ক’রে সপেটা খেতে দিতে পারেন। অপুষ্টি আসবে না। স্তন্যবর্ধক এমন বহু দ্রব্য আছে, যা খেতেও ভাল লাগে না, আবার তৃপ্তিদায়কও নয়।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্র:
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ১০৭-১০৮।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।