রজমা লতা-এর পাঁচটি ভেষজ গুণাগুণ

কোথাও কোথাও রজমার (Phaseolus vulgaris) কচি পাতার স্যালাড খাওয়ার রেওয়াজ আছে। পাতায় যথেষ্ট পরিমাণে ক্যারোটিন, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নিকোটিনিক এসিড, ফলিক এসিড বিদ্যমান। একাধারে আহার ও ঔষধি গুণসম্পন্ন হওয়ায় আমাদের জীবনে রাজমার ভূমিকা বিশাল। কাঁচা ফল ও শুকনো বীজকে কিভাবে ভেষজ হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

রজমা লতা-এর ভেষজ ব্যবহার

১. অপুষ্টিতে: পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের শুধু ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা নয়, বিশাল সংখ্যায় প্রাপ্তবয়স্কেরাও আজ অপুষ্টির শিকার। উপযুক্ত প্রোটিন, কাৰ্বহাইড্রেটস মিনারেলস্ (খনিজ পদার্থ) সমৃদ্ধ খাদ্যের অভাব, খাদ্য সংগ্রহ ও তা প্রস্তুত করার জন্য বিজ্ঞান-নির্ভর জ্ঞানের অপ্রতুলতা এবং সর্বোপরি মানবতাহীন নিলর্জ্জ আগ্রাসনবাদ বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলির কাছে আজ অভিশাপস্বরূপ। তাছাড়া আমাদের মানসিকতায় টিন রাখা খাবারে পাশ্চাত্য ভূত এমন চেপে বসে আছে যে, মার দুধটাও টেনে খেতে শিশুরও যেন মন চায় না।

প্রথমতঃ কাঁচা সিম সবজি পরিমাণমত খেতে হবে। বিশেষ করে বাচ্চাদেরকে খাওয়াবেন। যাঁদের গাছ করার জায়গা নেই, তাঁরা ৪। ৫টি মাটির বড় বড় টবে বীনের গাছ করলে বৎসরের অনেকগুলো দিনই একটি উৎকৃষ্ট সবুজ সবজির স্বাদ অনায়াসে পেতে পারবেন। তাছাড়া বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। দাম অবশ্য অন্যান্য সবজি অপেক্ষা অধিক। দ্বিতীয়তঃ বীনের বীজ বালি খোলায় ভেজে খোসা ছাড়িয়ে চূর্ণ ক’রে সেই চূর্ণ ১–৫ গ্রাম মাত্রায় (বয়সানুপাতে মাত্রা ঠিক করে নিতে হবে) দিনে ২ বার জলসহ কিংবা দুধসহ কিছুদিন খাওয়াতে হবে। এর দ্বারা কিছুদিনের মধ্যে অপুষ্টিটা চলে যায় ।

২. স্তন্যাল্পতায়: অপুষ্টি, মানসিক অবসাদ, এছাড়া ছোট-বড় রোগ প্রভৃতির কারণে বুকের দুধে স্বল্পতা দেখা দিলে শিশুর জীবনটাতে কষ্টের আগমন হয়। রোগজনিত কারণ থাকলে তার চিকিৎসা চালাতে হবে এবং সেইসঙ্গে রাজমার ব্যবহার করতে পারলে মায়ের দুধ বাড়বে। শুকনো বীজ ৮। ১০ গ্রাম নিয়ে আধভাঙ্গা করে কাপ তিনেক জলে সিদ্ধ করার পর আন্দাজ কাপখানিক থাকতে নামিয়ে ছেঁকে সেটিকে সকালের দিকে খেতে হবে। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিকালের দিকে আর একবার এভাবে খেতে পারেন। এছাড়া ভাজা বীজের চূর্ণ ৫ গ্রাম মাত্রায় দুধসহ দিনে দু’বার খেলেও চলতে পারে। তাছাড়া পাওয়া গেলে বীনের তরকারি অতি অবশ্যই খাবেন।

আরো পড়ুন:  লাল সোনাইল দক্ষিণ এশিয়ায় জন্মানো ভেষজ বৃক্ষ

৩. শুক্রাল্পতায়: এজন্য নানা সমস্যায় পড়তে হয়। শরীরে এটির স্বল্পতা জীবনকে যে কতটা অন্তঃসারশূন্য করে দিতে পারে, তা ভুক্তভোগী ছাড়া কেই-বা বুঝবে না। তাই প্রথম থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করা ভাল। বালিতে ভাজা খোসা ছাড়ানো রাজমার বীজকে টুকরো টুকরো করে ৮। ১০ গ্রাম নিয়ে তার সঙ্গে দুধ এক কাপ, জল ৩ কাপ ও চিনি ২। ৩ চা-চামচ মিশিয়ে ফোটাতে ফোটাতে আন্দাজ কাপখানিক থাকতে নামিয়ে ভালভাবে ঘেঁটে হালকা গরম অবস্থায় প্রত্যহ বিকালের দিকে পান করতে হবে। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই উন্মাদনা উপলব্ধি হবেই। তবে এভাবে কমপক্ষে মাস দুই-তিন ব্যবহার করা উচিত। তারপর সপ্তাহে ২ দিন খেলেই চলবে।

৪. হৃদ্দৌর্বল্যে: ভাজা বীজ চূর্ণ ৫ গ্রাম মাত্রায় দিনে ২ বার দুধসহ খেতে হবে। হৃদয়ের যেকোন রোগে অন্যান্য চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে এটিকে কাঁচা অবস্থায় পথ্য হিসেবে ব্যবহার করা উচিত। তাছাড়া ভাজা বীজ চূর্ণ কিংবা সিদ্ধ করে খেতে পারেনা ।

৫. সর্দির ধাতে: ভাজা বীজ চূর্ণ ৮ । ১০ গ্রাম নিয়ে বার্লির মতো রান্না ক’রে প্রতার ২ বার করে কয়েকদিন খেলে রেহাই পাবার সম্ভাবনা থাকে। তারপরে খাওয়ার পর একবার ক’রে বেশ কিছুদিন খেলে এটির ধাত থেকে থাকবে।

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্র:

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ১১২-১১৩।

Leave a Comment

error: Content is protected !!