শঙ্খচিল — সুদূর সমুদ্দুর প্রশান্তের বুকে হিরোশিমা দ্বীপের আমি শঙ্খচিল

শঙ্খচিল বা সুদূর সমুদ্দুর প্রশান্তের বুকে হিরোশিমা দ্বীপের আমি শঙ্খচিল হচ্ছে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের রচিত একটি আধুনিক বাংলা গণসংগীত। গানটি বৃহৎ আকারের ৪০ লাইনের একটি বাংলা গণসংগীত। গানটি সুর করেছিলেন হেমাঙ্গ বিশ্বাস নিজেই এবং তিনিই গেয়েছিলেন। গানটি হেমাঙ্গ বিশ্বাস ১৯৬৪ সালে রচনা করেন। গানটি মাস সিঙ্গার্সের পক্ষে চন্দন সেন প্রকাশিত প্রথম প্রকাশ সেপ্টেম্বর ১৯৮০ হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গান নির্বাচিত গানের সংকলন গ্রন্থের ১৬-১৭ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত রয়েছে।

জাপানের হিরোশিমায় ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট মার্কিন পারমাণবিক বোমা বর্ষণের বিধ্বংসী চিত্র হেমাঙ্গ বিশ্বাস এঁকেছেন গানটিতে এবং এই অনাচারের বিরুদ্ধে কী করতে হবে তারও পথ দেখিয়েছেন। তিনি মোটামুটিভাবে দূর্গা রাগের পর্দাগুলিকে আশ্রয় করে গানের বিভিন্ন অংশের মুডগুলিকে ধরেছেন বিশ্বশ্রেষ্ঠ সিম্ফনীকারদের দক্ষতায়। গানটি দ্রুত লয়ে হটাত উঠানামা করে গণসংগীতের সুরে গাওয়া হয়েছে।

গানটি হেমাঙ্গ বিশ্বাসের একটি বহুল পরিচিত গণসংগীত এবং এই গানটিতে একটি শঙ্খচিলের জীবনসংগ্রাম ও বেঁচে থাকার আকুতিকে মানুষের রূপকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা হয়েছে। গানটিতে যদিও জাপান আক্রমণের বিরুদ্ধে কথা বলা হয়েছে, কিন্তু সেই শঙ্খচিল নিজেকে ভিয়েতমিনের লড়াকু সৈনিক হিসেবে ঘোষণা করবে। বাস্তবে কিন্তু জাপানী জনগণ কোনো মুক্তি সংগ্রামে অংশ নেয় না। জাপান একটি সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র, এবং জাপানি জনগণ লড়াইয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ব্যর্থ থেকে গেছে। গানটির কথা ও গানটিকে রোদ্দুরে ডট কম আপনাদের কাছে উপস্থাপন করতে পেরে আনন্দিত।

‘শঙ্খচিল’ গানের কথা

সুদূর সমুদ্দুর প্রশান্তের বুকে
হিরোশিমা দ্বীপের আমি শঙ্খচিল
আমার দু’ডানায় ঢেউয়ের দোলা
আমার দু’চোখে নীল শুধু নীল;

সাগরের জলে সিনানের শেষে প্রবালের সিঁড়ি বেয়ে
মৎস্যগন্ধা মেয়ে
ঝিনুক নূপুরে রুণু ঝুনু ঝুনু
যেতো সে সাগরিকা
ঝিলিক মিলিক নাচিয়ে গলায় মুক্তার মালিকা।
পূর্বাচলের প্রাঙ্গনে
সাগরিকার অঙ্গনে
দিগবধুরা খেলেরে—–
সমুদ্রহিল্লোলে তার দোলে হৃদয় দোলে
শঙ্খচিলের সঙ্গীতে তার স্বপন দুয়ার খোলে
দারুচিনি বনের পাখায় সোহাগ চামর দোলে
দোলে হৃদয় দোলে—- ।

আরো পড়ুন:  আমার শান্তির গৃহ, সুখের স্বপনরে.... দরদী কে দিল ভাঙিয়া, মন কান্দেরে পদ্মার

হঠাৎ সেদিন শুভ্রশরৎ সকালে
মায়াবী রোদের রূপালী ঝালর ছিন্নভিন্ন ক’রে
কোন বিষাক্ত বাসুকীর ফণা দিগন্ত দিল ঢেকে।
প্রলয়ংকর নিঃশ্বাসে তার ধ্বংস ছড়াল দিক্ বিদিক
আণবিক সে, দানবিক সে মৃত্যু-নৃত্য নেচে
ধ্বংস-নৃত্য নেচে।
দারুণ আগুন দহনজ্বালায় দগ্ধ ভস্মিভূতা—-
প্রশান্তদুহিতা।

প্রশান্তদুহিতা, মরমিয়া মিতা কোথা সাগরিকা গো
বাতাসে ঝুরিছে বাদল ঝিরঝির আকাশে ঝুরিছে তারা
দিগবধূরা গুমরি গুমরি কাঁদিছে সঙ্গীহারা
বেলাভূমি বুকে আছড়ি ঢেউ কাঁদে, কোথা সাগরিকা গো।

আমার অঙ্গীকার, আমার এ অঙ্গীকার
আক্রান্ত প্রশান্তের অশান্তবিহঙ্গ দুরন্তদুর্নিবার।
ঝড়ের নিশানা আমার দু’ডানা চিরউড্ডীন, অক্লান্ত
প্রশান্ত হতে অতলান্ত
প্রতিরোধ, প্রতিশোধ, চিরক্ষমাহীন চিরক্ষমাহীন।
আমার শান্তিগানে বিদ্রোহবাণ আনে
আফ্রোএশিয়া আমেরিকায়
আমার ডানায় তোলে আঁধিয়া আকাশতলে
ঝনন ঝনন মরুঝঞ্ঝা সাহারায়,
নদনদী প্রান্তরে অরণ্য অন্তরে, পাহাড় গহ্বরে
রক্তে আদায় করি রক্তের ঋণ
আমি ভিয়েতমিন আমিই ভিয়েতমিন আমি ভিয়েতমিন।

হেমাঙ্গ বিশ্বাসের শঙ্খচিল গানটি ইউটিউবে শুনুন তারই কণ্ঠে

আমি শঙ্খচিল

Leave a Comment

error: Content is protected !!