গলির মোড়ে বেলা যে পড়ে এলো
পুরানো সুর ফেরিওয়ালার ডাকে,
দূরে বেতার বিছায় কোন্ মায়া
গ্যাসের আলো-জ্বালা এ দিনশেষে।
কাছেই পথে জলের কলে, সখা
কলসি কাঁখে চলছি মৃদু চালে
হঠাৎ গ্রাম হৃদয়ে দিল হানা
পড়লো মনে, খাসা জীবন সেথা—
সারা দুপুর দীঘির কালো জলে
গভীর বন দুধারে ফেলে ছায়া
ছিপে সে-ছায়া মাথায় করো যদি
পেতেও পারো কাৎলা মাছ, প্রিয়।
কিংবা দোঁহে উদার বাঁধা ঘাটে
অঙ্গে দেবো গেরুয়া বাস টেনে
দেখবে কেউ নখ, বা কেউ জটা
কানাকড়িও কুঁড়েয় যাবে ফেলে।
পাশান-কায়া, হায়রে, রাজধানী
মাশুল বিনা স্বদেশ দাও ছেড়ে;
তেজারতির মতন কিছু পুঁজি
সঙ্গে দাও, পাবে দ্বিগুন ফিরে।
ছাদের পারে হেথাও চাঁদ ওঠে—
দ্বারের ফাঁকে দেখতে পাই যেন
আসছে লাঠি উঁচিয়ে পেশোয়ারী
ব্যাকুল খিল সজোরে দিই মেলে।
ইহার মাঝে কখন প্রিয়তম
উধাও; লোকলোচন উঁকি মারে—
সবার মাঝে একলা ফিরি আমি
—লেকের কোলে মরণ যেন ভালো।
বুঝেছি কাঁদা হেথায় বৃথা; তাই
কাছেই পথে জলের কলে, সখা
কলসি কাঁখে চলছি মৃদু চালে
গলির মোড়ে বেলা যে পড়ে এলো।।
সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯ – ৮ জুলাই ২০০৩) ছিলেন বিশ শতকের উল্লেখযোগ্য বাঙালি বামপন্থী কবি ও গদ্যকার। তিনি কবি হিসেবে খ্যাতিমান হলেও ছড়া, প্রতিবেদন, ভ্রমণসাহিত্য, অর্থনীতিমূলক রচনা, অনুবাদ, কবিতা সম্পর্কিত আলোচনা, উপন্যাস, জীবনী, শিশু ও কিশোর সাহিত্য ইত্যাদি রচনাতেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন। সম্পাদনা করেছেন একাধিক গ্রন্থ এবং বহু দেশি-বিদেশি কবিতা বাংলায় অনুবাদও করেছেন। “প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য় এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা” বা “ফুল ফুটুক না ফুটুক/আজ বসন্ত” প্রভৃতি তাঁর অমর পঙক্তি বাংলায় আজ প্রবাদতুল্য।