১
বাবা বলেন, যখন হবার
আপনিই হয়,
আসল ব্যাপার
সময়।
বাবা বলেন, সবার আগে
জানা দরকার
স্রোতে লাগে
কখন জোয়ার,
কখনই বা ভাটা।
বাবা বলেন, এমনি ক’রে
সারা রাস্তা ধৈর্য ধ’রে
মড়া টপকে
মড়া টপকে
মড়া টপকে হাঁটা।
বাবারা যা বলেন তা কি ঠিক ?
এও ভারি আশ্চর্য,
গা বাঁচাবার নাম দিয়েছেন সহ্য।
বাবাদের ধিক্
বাবাদের ধিক্
বাবাদের ধিক্।
২
আমাদের প্রাণভোমরাগুলো বড় বড় খোলের মধ্যে ভ’রে
সরু সুতোয় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে;
আমরা অপেক্ষা করে আছি
মাথায় ওপর বহ্নিমান হয়ে আকাশ কখন ভেঙে পড়বে।
এখন যে যতই সাফাই গাক
হাত-ধোয়া নোংরা জল আমাদের চোখের ওপর দিয়ে।
গড়িয়ে গড়িয়ে চলেছে।
বইতে পা লেগে গেলে আমরা কপালে হাত ছোঁয়াতাম,
গায়ে পা ঠেকলেও এখন আমরা প্রণাম করি না ;
এমন কাউকেই আমরা দেখছি না।
যার সামনে হাতজোড় ক’রে দাঁড়াতে পারি।
সরু করে বানাচ্ছি প্যান্ট
যাতে হাঁটু গেড়ে বসতে না হয়,
যাতে সারা দুনিয়াকে আমরা ভালো করে পা দেখাতে পারি।
আর শক্রর চোখকে ফাঁকি দেব বলেই
আমাদের জামায় ফুল-লতা-পাতা কাটার ফৌজী ব্যবস্থা।
কেউ আমাদের আদর করে ভোলাতে এলে
আমরা কাঠপুতুলের মতো ঠিকরে উঠি।
কানাকে কানা বলতে, খোঁড়াকে খোঁড়া বলতে
আমাদের মুখে একটুও আটকায় না।
ভদ্রতার মুখোশগুলো আমর৷ আঁস্তাকুড়ে ফেলে দিয়েছি,
কাউকেই আমরা নকল করতে চাই না।
যা বলবার আমরা জোর গলায় বলি,
শব্দ আমাদের ব্রহ্ম।
বাঁধা রাস্তায় পেটোর পর পেটো চমকাতে-চমকাতে
আমরা হাঁক দিই।
আমাদের আওয়াজে বাসুকি নড়ে উঠুক।।
সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯ – ৮ জুলাই ২০০৩) ছিলেন বিশ শতকের উল্লেখযোগ্য বাঙালি বামপন্থী কবি ও গদ্যকার। তিনি কবি হিসেবে খ্যাতিমান হলেও ছড়া, প্রতিবেদন, ভ্রমণসাহিত্য, অর্থনীতিমূলক রচনা, অনুবাদ, কবিতা সম্পর্কিত আলোচনা, উপন্যাস, জীবনী, শিশু ও কিশোর সাহিত্য ইত্যাদি রচনাতেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন। সম্পাদনা করেছেন একাধিক গ্রন্থ এবং বহু দেশি-বিদেশি কবিতা বাংলায় অনুবাদও করেছেন। “প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য় এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা” বা “ফুল ফুটুক না ফুটুক/আজ বসন্ত” প্রভৃতি তাঁর অমর পঙক্তি বাংলায় আজ প্রবাদতুল্য।