সমরবাদ (ইংরেজি: Militarism) হচ্ছে সরকার বা জনগণের বিশ্বাস বা আকাঙ্ক্ষা যে একটি রাষ্ট্রের উচিত একটি শক্তিশালী সামরিক ক্ষমতা বজায় রাখা এবং জাতীয় স্বার্থ এবং/ বা মূল্যবোধকে প্রসারিত করার জন্য আক্রমণাত্মকভাবে এটি ব্যবহার করা।[১] এটি সামরিক ও একটি পেশাদার সামরিক শ্রেণির আদর্শের মহিমা কীর্তন করে এবং “রাষ্ট্রের প্রশাসন বা নীতিতে সশস্ত্র বাহিনীর প্রাধান্য”কে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে।
সমরবাদ ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে সাম্রাজ্যবাদী বা বিস্তারবাদী মতাদর্শের এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠেছে সাম্রাজ্যবাদ। প্রসিদ্ধ সমরবাদী রাষ্ট্রগুলোর উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে প্রাচীন অ্যাসিরিয় সাম্রাজ্য, গ্রীক শহর স্পার্টা, রোমান সাম্রাজ্য, অ্যাজটেক জাতি, মঙ্গোল সাম্রাজ্য, প্রুসিয়া রাজতন্ত্র, হাবসবার্গ / হাবসবার্গ-লোরেন রাজত্ব, অটোমান সাম্রাজ্য, জাপানের সাম্রাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নাজি জার্মানি, বেনিতো মুসোলিনির শাসনের সময়ের ইতালিয় সাম্রাজ্য, জার্মান সাম্রাজ্য, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এবং নেপোলিয়নের অধীনে প্রথম ফরাসী সাম্রাজ্য।
মার্কসবাদী চিন্তানায়কগণ বলেছেন, যুদ্ধ হচ্ছে রাজনীতির ধারাবাহিক রূপ, এই অর্থে যুদ্ধ হচ্ছে রাজনীতি এবং যুদ্ধ নিজেই রাজনৈতিক প্রকৃতির কার্যকলাপ। প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে এমন একটা যুদ্ধ ঘটেনি যার কোনাে রাজনৈতিক প্রকৃতি ছিল না।
কিন্তু সমরবাদীরা এভাবে বােঝে না। রাজনীতিই যে নির্ধারক–সামরিক কাজ নয়, এই লেনিনবাদী-মাওবাদী লাইনকে সমরবাদীরা বাস্তবে উল্টে ফেলে। এই ধারা একতরফাভাবে শুধু সামরিক কাজকেই ঊর্ধ্বে তুলে ধরে–সামরিকভাবেই সব সমস্যার সমাধান করতে চায়।
কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে সমরবাদ হচ্ছে বুর্জোয়া সামরিক ধারারই ছাপ বা প্রতিফলন। এটা সর্বহারা শ্রেণির সামরিক বিজ্ঞান আত্মস্থ করতে পারে না। বরং স্থাপন করে বুর্জোয়া সমরবিদ্যা ও সমর সংস্কৃতি।
ভারতে সমরবাদ
ভারতের সন্ত্রাসী শাসকগোষ্ঠী, মূলত কংগ্রেস ও বিজেপির সন্ত্রাসবাদীরা ভারতকে একটি সমরবাদী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ১৯৪৭ সালে নয়া উপনিবেশবাদী যুগে ভারতের প্রবেশের পর থেকে, কাশ্মীর বিরোধ এবং অন্যান্য ইস্যু নিয়ে প্রতিবেশী পাকিস্তানের সাথে উত্তেজনা ভারতের সন্ত্রাসী সরকারগুলো সামরিক প্রস্তুতির উপর জোর দেয়। ১৯৬২-এর চীন-ভারত যুদ্ধের পরে, ভারত নাটকীয়ভাবে তার সামরিক শক্তি বাড়িয়ে তোলে, যা ভারতকে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ভারত-সোভিয়েত অক্ষ শক্তিকে বিজয়ী হতে সক্ষম করেছিল।
১৯৯৯ সালের পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষার পরে ভারত পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী বিশ্বের তৃতীয় এশীয় দেশ হয়ে ওঠে। কাশ্মীরি সমুত্থান (The Kashmiri insurgency) এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কারগিল যুদ্ধসহ সাম্প্রতিক ঘটনাবলী, ভারত সরকারকে সামরিক বিস্তারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে সহায়তা করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারতীয় বর্বর বিজেপি সরকার সমস্ত শাখা জুড়ে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি করেছে এবং দ্রুত আধুনিকীকরণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আলোকচিত্রের ইতিহাস: ভারতে ২৬ জানুয়ারি ২০২০ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে বিমানসেনাদের কুচকাওয়াজের এই ছবিটি তুলেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কেউ একজন।
তথ্যসূত্র
১. Militarism, New Oxford American Dictionary (2007)
২. রায়হান আকবর, রাজনীতির ভাষা পরিচয়, আন্দোলন প্রকাশনা, ঢাকা, জুন ২০২০, পৃষ্ঠা ২৫।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।