নব প্লেটোবাদ হচ্ছে রোমান সাম্রাজ্যের পতনের যুগে প্লেটোর ভাববাদের একটি রূপান্তর

তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ খ্রিষ্টীয় শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্যের পতনের যুগে প্লেটোর ভাববাদের একটি রূপান্তরকে নব প্লেটোবাদ (ইংরেজি: Neoplatonism) বলে অভিহিত করা হয়। এর উদ্ভব প্রথমে ঘটে রোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্গত মিশরে। রোমের প্লটিনাসের উদ্যোগে একটি নব প্লেটোবাদী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্লটিনাস গ্রিসের একজন ভাববাদী দার্শনিক। কিন্তু প্লটিনাসের জন্ম হয়েছে মিসরে এবং তিনি জীবন অতিবাহিত করেছেন রোম নগরে। প্লটিনাসকে নব প্লেটোবাদের প্রতিষ্ঠাতা মনে করা হয়। প্লটিনাসের ব্যাখ্যায় দর্শন অধিকতর রহস্যময় রূপ ধারণ করে।

নব প্লেটোবাদী দর্শনে বস্তুজগৎকে মূল ভাবের একটা রহস্যময় প্রকাশ বলে মনে করা হয়। আসল ভাব বা সত্তার প্রকাশ ঘটে স্তরক্রমে। এই স্তরের একেবারে নিম্নতম পর্যায়ের প্রকাশ হচ্ছে বস্তুজগৎ। বস্তুজগতের উর্ধ্বে হচ্ছে বিশ্ব-আত্মা। বিশ্ব-আত্মাকে অতিক্রম করে আত্মা। আত্মার উপরে হচ্ছে পরম আত্মা বা চরম সত্তা।

প্লটিনাসের মতে সৃষ্টি পরিক্রমার উৎস হচ্ছে এক ঈশ্বর। কিন্তু ঈশ্বর হচ্চে মানুষের অনুধাবন বা বর্ণনার উর্ধে্ব। এই এক উৎস প্রথমে বিশ্বপ্রজ্ঞা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বপ্রজ্ঞা পরে জগতের আত্মা এবং ব্যক্তির আত্মা এবং ব্যক্তির দেহরূপে প্রকাশিত হয়। ব্যক্তির দেহ এবং জগতের বস্তুর কোনো সত্য অস্তিত্ব নেই। মানুষের কামনা হবে দেহের ভোগ, বাসনা, আকর্ষণ অতিক্রম করে দেহ হতে আত্মায় এবং আত্মা হতে বিশ্বপ্রজ্ঞায় আরোহণ করে পরিশেষে এক পরমাত্মায় বিলীন হয়ে যাওয়া।

প্লেটোর মূল দর্শনে ভাবকে ঈশ্বর হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয় নি। কিন্তু নব প্লেটোবাদে প্লেটোর ‘ভাব’ ঈশ্বরে পর্যবসিত হয়ে নব প্লেটোবাদকে এক প্রকার ধার্মিক রহস্যবাদে পরিণত করে। মধ্যযুগের খ্রিষ্টীয় দর্শনের বিকাশে নব প্লেটোবাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এথেন্স নগরীতে প্রোক্লাস সর্বশেষ যে নব প্লেটোবাদী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গঠন করেছিলেন তা ৫২৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল।

তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ২৯২-২৯৩।

আরো পড়ুন:  ফ্রান্সিস হারবার্ট ব্রাডলে ছিলেন ঊনবিংশ ও বিংশ শতকের ব্রিটিশ ভাববাদী দার্শনিক

Leave a Comment

error: Content is protected !!