কানাডা পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী শোষণমূলক লুটেরা গণবিরোধী প্রজাতন্ত্র

কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া কমনওয়েলথর অন্তর্ভুক্ত পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী শোষণমূলক পরপীড়ক প্রজাপীড়ক লুটেরা গণবিরোধী প্রজাতন্ত্র। হাজার হাজার কিলোমিটারের ব্যবধান সত্ত্বেও উত্তর গোলার্ধের কানাডা এবং দক্ষিণ গোলার্ধের অস্ট্রেলীয় কমনওয়েলথ ইতিহাস, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির দিক থেকে বহুলাংশে অভিন্ন। কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া এই উভয় দেশই প্রাক্তন ব্রিটিশ উপনিবেশ এবং বহিরাগত ইউরোপীয়রাই এগুলির উন্নতি ও জনসংখ্যা গঠন করেছে। আজও দেশ দুটি ব্রিটেনের প্রাক্তন উপনিবেশ নিয়ে গঠিত কমনওয়েলথের সদস্য। প্রাক্তন ব্রিটিশ ডমিনিয়ন (ইংলণ্ডের রাণীকে নামিক প্রধান রেখে স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্র) কানাডা ও অস্ট্রেলীয় কমনওয়েলথ বহুকাল থেকেই অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ব্যাপারে স্বাধীন ছিল। এরা উভয়ই অত্যুন্নত পুঁজিবাদী অর্থনীতির দেশ।[১]

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ইউরােপের নানা দেশ যেখানে লক্ষাধিক সৈন্যের সমাবেশ করতে ব্যস্ত সেখানে মাত্র ৩ হাজার সৈন্য নিয়ে তাদের বাহিনী গঠন করেছিল কানাডা। একটি সমুদ্র বন্দর ও ডকইয়ার্ডের নিরাপত্তায় নিয়ােজিত সৈন্যরাই ছিল তাদের মূল ভরসা। তবে বিশ্বযুদ্ধের আলামত পেয়ে তারা নতুন করে বাহিনী তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর ফল হিসেবেই ১৯১৪ সালের অক্টোবর নাগাদ কানাডার সৈন্য বাহিনীতে সদস্য সংখ্যা ৩ থেকে বেড়ে গিয়ে ৩০ হাজারে উন্নীত হয়। তবে এর আরাে এক বছর পর ১৯১৫ সালে ই েরণাঙ্গনে গিয়ে যােগদান করে কানাডার বাহিনী। তবে লে. জেনারেল উইলিয়াম অ্যান্ডার্সনের নেতৃত্বাধীন এই বাহিনী পেশাদার জার্মানদের সামনে দাঁড়িয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি। মাত্র। দু’সপ্তাহের লড়াইয়েই ৫ হাজারের বেশি সৈন্যের হতাহতের মধ্য দিয়ে অনেকটা দুর্বল হয়ে যায় কানাডা। তবে এই দুর্বলতা কাটিয়ে ক্রমশ লড়াইয়ে ফিরে আসে কানাডার বাহিনী। ১৯১৬ সালের দিকে ফ্রান্সের রণাঙ্গনে প্রেরিত বাহিনী প্রথমবারের মত সফলতার মুখ দেখে। ১৯১৭ সালের দিকে জেনারেল জুলিয়ান বায়ানগের বাহিনী ভিমি রিজের দখল নিতে খুব বেশি সময় নেয়নি। জেনারেল আর্থার কুরি বায়ানগের স্থলাভিষিক্ত হলেও কানাডীয় বাহিনীর সাফল্য অব্যাহত থাকে।[২]

আরো পড়ুন:  সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনে কিউবা এবং ফিদেল ক্যাস্ত্রোর প্রভাব প্রসঙ্গে

শুরুতে দুর্বল হিসেবে পরিচিত এই কানাডীয় সৈন্যরাই যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এসে একের পর এক সাফল্য লাভ করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন প্রায় ৬ লাখ কানাডার নাগরিক যুদ্ধে যােগদান করে যার মধ্যে ৪ লাখ ১৮ হাজার কানাডীয় নাগরিক কাজ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এক্সপিডিশনারি ফোর্স হিসেবে। এই সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ তাদের অনেকেই লাভ করে ভিক্টোরিয়া ক্রসসহ আরাে অনেক পুরস্কার। তবে কানাডিয়ান এক্সপিডিশনারি ফোর্স তথা সিইএফের প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার সৈন্য এ যুদ্ধে হতাহত হয়েছিল। অনেক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে নিহত কানাডীয় সৈন্যের সংখ্যা কম করে হলেও ৫৬ হাজার ছাড়িয়েছিল তখন। এর বাইরে ব্রিটিশ বিমান বাহিনীতে নিযুক্ত কানাডিয়ান সৈন্যের সংখ্যাও নেহায়েত কম ছিল ।[২]

কানাডা

শিল্পোৎপাদের মোট পরিমাণের হিসাবে পজিবাদী দেশগুলির মধ্যে কানাডা সপ্তম স্থানের অধিকারী। উৎপাদন ঘনীভবনের মাত্রা ও পুঁজি কেন্দ্রীকরণ সহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়নের স্তর এবং মূল শিল্প ও কৃষিপণ্য উৎপাদনের পরিমাণের দিক থেকে কানাডা প্রধান শক্তিগুলির কাছাকাছি পৌঁছেছে।[১]

এসঙ্গে সে পশ্চিমা দেশের, বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর খুবই নির্ভরশীল। সারা ইউরোপের সমান আয়তনের বিশাল বিস্তার এবং খনিজ সম্ভারের প্রাচুর্যের কল্যাণে কানাডার অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিস্থিতি খুবই অনুকূল।

তুন্দ্রাভূমির অন্তর্গত কানাডার একাংশ অর্থনৈতিক দিক থেকে দুপ্রবেশ্য, কিন্তু দেশের দক্ষিণাংশের ভৌত ও আবহ পরিস্থিতি এর সম্পর্কে সহায়ক। কানাডার শিল্প-কৃষি সমাহারে স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবহারকারী ভারী। শিল্পের স্থানই প্রধান। অত্যুৎপাদী কৃষি তার অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ এবং এরই কল্যাণে সে পুঁজিবাদী বিশ্বের একটি বৃহত্তম গম উৎপাদক দেশ।

কানাডা উন্নত নিষ্কাশন শিল্পের মালিক। লৌহের আকরিক ও বিরল ধাতু নিষ্কাশনে সে অনেক দেশের তুলনায়ই অগ্রগামী। পুঁজিবাদী বিশ্বে নিকেল ও দস্তা উৎপাদনে সে প্রথম এবং ইউরেনিয়াম, কোবাল্ট ও মলিবডেনাম উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে।

ধাতব আকরিকগুলির একভাগ স্থানীয় কারখানায় সমৃদ্ধিকৃত হয় এবং বাকিটা কানাডা আমদানি করে থাকে। তার বার্ষিক ধাতু উৎপাদনের হিসাব: এক কোটি টনের বেশি লৌহ, প্রায় ১৫ কোটি টন ইস্পাত, প্রচুর অ্যালুমিনিয়াম, তামা, দস্তা, সীসা এবং অঢেল নিকেল ও অন্যান্য স্ট্রাটেজিক ধাতু। দেশের বার্ষিক তৈল ও গ্যাস উৎপাদন যথাক্রমে ৭.২ কোটি টন ও ৯০০০ কোটি ঘনমিটারের বেশি।

আরো পড়ুন:  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ

কানাডা বছরে প্রায় ৩৬,০০০ কোটি কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। অঙ্কটি ব্রিটেনে উৎপন্ন বিদ্যুতের প্রায় সমান। এই বিদ্যুতের প্রায় ৮০ শতাংশই জলবিদ্যুৎ স্টেশন থেকে উৎপন্ন। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিদ্যুৎশিল্পে তাপবিদ্যুৎ স্টেশনের অংশভাগ বৃদ্ধির প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম খনি থাকায় কানাডা নিজস্ব পারমাণবিক শক্তি ইঞ্জিনিয়রিং গড়ে তুলছে। ডগলাস পয়েন্টের বিরাট পারমাণবিক বিদ্যুৎ স্টেশনটি ছাড়াও টরন্টো অঞ্চলে আরও শক্তিশালী একটি স্টেশন নির্মিত হচ্ছে।

মানুফ্যাকচারিং শিল্পের একটি অত্যুন্নত শাখা হিসাবে ইঞ্জিনিয়ারিং এখন মোটরগাড়ি, ডিজেল-বিজলিচালিত রেলগাড়ি ও বিমাননির্মাণে বিশেষীকৃত। কানাডার শিপইয়ার্ডগুলি বাণিজ্যিক ও যুদ্ধ জাহাজ তৈরি করে। তার বিদ্যুৎ-ইঞ্জিনিয়রিং, ইলেকট্রনিক্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের অন্যান্য শাখাও যথেষ্ট উন্নত।

কানাডার তৈলশোধনাগারগুলির সামর্থ্য ৯ কোটি টনে পৌছেছে এবং রাসায়নিক ও তৈল-রাসায়নিক শিল্পগুলিতে পলিমার ও আকরিক সার উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কানাডার শিল্পক্ষেত্রে কাষ্ঠ, দারুশিল্প ও কাগজ শিল্প বিশিষ্ট স্থান অধিকার করেছে। বছরে ১১৪ কোটি ঘন-মিটারের বেশি কাঠ কাটা সহ এদেশে মোট ৮০-৯০ লক্ষ টন কাগজ তৈরি হয়। সে প্রচুর পরিমাণ কাগজ, কার্ডবোর্ড ও অন্যান্য কাষ্ঠজাত সামগ্রী রপ্তানি করে।

কৃষিসামগ্রী কানাডার অন্যতম প্রধান রপ্তানিদ্রব্য এর মধ্যে গমের স্থান। (বার্ষিক উৎপাদন ২৬ কোটি টনের বেশি) প্রধান। কৃষি-উৎপাদের অর্ধেকের বেশিই পশুপালন থেকে আহৃত।  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তলগ্ন কানাডার দক্ষিণ অঞ্চলই সর্বাধিক কৃষি ও শিল্প সমৃদ্ধ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পপ্রধান পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত কানাডার কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল গ্রেট লেকের উপকূল বরাবর আরও পূর্বে বিস্তৃত। অন্টারিও ও কুইবেক প্রদেশের দক্ষিণে দেশের জনসংখ্যা ও শিল্পসামর্থ্যের দুই-তৃতীয়াংশ কেন্দ্রিত। তৈরিপণ্যের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মন্ট্রিল ও টরোন্টতেই উৎপন্ন হয়ে থাকে। অন্যান্য শিল্পপ্রধান শহরের মধ্যে মোটরগাড়ি শিল্পের কেন্দ্র উইণ্ডসর ও পারমাণবিক শিল্পের কেন্দ্র ব্লাইন্ড রিভার উল্লেখ্য।

লেক সুপিরিয়র অবধি বিস্তত কানাডার দক্ষিণের বিশাল প্রান্তরভূমি দেশের প্রধান গমক্ষেত। মানিটবা, সাসকাতচিয়ান ও আলবার্টা প্রদেশগুলির দক্ষিণই দেশের শস্যভাণ্ডার, পশুপালনের বহৎ এলাকা এবং রপ্তানিযোগ্য কৃষিজাত সামগ্রী উৎপাদনের প্রধান উৎস।

আরো পড়ুন:  আমেরিকার সভ্যতা হচ্ছে অধিবাসীদের নিজেদের গঠিত সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা

তথ্যসূত্রঃ

১. কনস্তানতিন স্পিদচেঙ্কো, অনুবাদ: দ্বিজেন শর্মা: বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভূগোল, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, বাংলা অনুবাদ ১৯৮২, পৃ: ২১২-২১৪।
২. মো. আদনান আরিফ সালিম, আধুনিক বিশ্বের ইতিহাস, [Pdf]. বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, জানুয়ারি ২০১৯. সানজিদা মুস্তাফিজ ও সুমা কর্মকার. সম্পা. পৃষ্ঠা ৩৩-৩৪; Retrieved from http://www.ebookbou.edu.bd/wp/OS/hsc4_2.php#hsc2855

Leave a Comment

error: Content is protected !!