ওইতিহাসিক স্বপ্নপ্রাণ

শহরের চোখ দেখে কাদা মাখা অসুখি সব মুখ

কংকালের মতো দেহে চটা উঠা বিচ্ছিরি অসুখ

আয়না ও রেটিনায় এবড়ো থেবড়ো ছায়ামূর্তি

পাথরের নিচে সাজানো আছে পুরোনো সব রীতি,

নড়ে চড়ে গল্প করে অন্যের উপর ঢলে পড়ে চিত্তহীন ফুর্তি

বর্ণান্ধ কালো সাদায় অভ্যস্ত সব অর্ধমৃত প্রাণ

ফলবাগানে তারা কখনোই করেনি পূর্ণচন্দ্র স্নান

বিমূর্ত চিত্রের মতো হারিয়েছে বৈশিষ্ট স্বরূপ

ত্রিকোণাকার আয়তাকার বর্গাকার গোলাকার রূপ

বদলে গেছে তারা সব ইতিহাসের ক্ষমাহীন চাপে

ডাক্তারেরা তাই গজ ফিতে দিয়ে বয়সের পোড়াদেহ মাপে।

 

মায়ের হাতে গড়া সন্তানের সহজাত জিভে

মাতৃদুগ্ধের পচনে মায়ের সংগে নিভিবে

ক্ষণিকের জন্মদণ্ড পূর্ণ জন্ম দিবে কিছু ব্যর্থ পিতা

অসফল সন্তানদের কতিপয় ব্যঙ্গ কবিতা

হস্তরেখা পড়ে খুঁজবে তারা জ্ঞানের মলমূত্র

ভাগ্যরেখা রাশিচক্র তাবিজের অসীম শক্তিমন্ত্র

পরপারের বৈতরণীর জল খেলা করে তাদের সঙসারে

স্বৈরাচার অনুপ্রবেশ করে জলকবুতরের পাখায় ভর করে 

ফুটপাতে বিক্রি হয় সর্বরোগ মহৌষধি নতুন কায়দা

জোড়াতালি দিয়ে চলা কানাগলির চটকানো উত্তরাধুনিক ময়দা।

 

রাজপথে নেমে দেখ স্বস্বার্থে কেউ কেউ লিমুজিন হাঁকায়

প্রাচীন গল্পের মতো কেউ শুধু পায়ে হেঁটে হাঁড়ি চেটে পেটকে বাঁচায়;

আর কিছু বেকার তরুণ শিল্পের উদ্যানে বেঁচে থাকে গানে গানে,  

লোডশেডিঙের রাতে অন্ধকার হাতড়িয়ে মুক্তো তুলে আনে,  

অশান্ত প্রতিচ্ছবি পাহাড়ের আঁকে কবি লেজার রশ্মিতে

শান্ত কবিতা আওড়ায় পদ্মা যমুনার ক্লান্ত কথার ছবিতে

আবৃত্তির মোহনায় ওড়ে মায়ের মুখ, মাঠখেত বন তেপান্তর

আকাশের ভ্রুনাচা সৌখিন কল্পনার উন্মুক্ত বন্দর;

সেসবের কোণে কোণে দৃষ্টির মিষ্টি নেশা আছে

সিদুঁরে মেঘ দেখেও ঘরপোড়া মানুষের মণিমালা পূর্ণ

অমল দিনরাত উদযাপনের আদিগন্ত রেশ আছে।

সেইসব রাতদিনে কারাগারে ঝুলেছে নায়কের ফাঁসির দড়ি

টিকটিক বেজেছে কল্পনায় সুকান্তের সময়ের ঘড়ি

তার কোলে মাথা রেখে হেসেছে উত্তর প্রজন্মের হাসি

সমবেত হয়েছে শেখাতে ঘৃণা কিছু শাড়ি নালাকাশী

উজান ও ভাটিতে একঝাঁক মুখ যেন প্রবাহমান বাঁশি।

 

চিত্রের ইতিহাস: কবিতায় ব্যবহৃত অংকিত চিত্রটি পল গঁগাঁর (১৮৪৮-১৯০৩) আঁকা চিত্র ‘আমরা কোথা থেকে এসেছি? আমরা কে? আমরা কোথায় যাচ্ছি?’ (D’où venons-nous ? Que sommes-nous ? Où allons-nous ?)। শিল্পী চিত্রটি আঁকেন ১৮৯৭ সালে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!