জন্মকালে ছিলি তুই গর্তের কুনো ব্যাঙ,
কোনো ব্যথিত বিকেলে ঢুকে পড়েছিলি কুয়োয়,
সাঁতরিয়ে দিয়েছিলি পাড়ি হাঁটুজল কাদার সাগর,
থপথপ শব্দ তুলে তোর চোখের সামনে দিয়ে চলে গেছে
সৌখিন বাঁকা চোখের নেশা, দুলদুলে অমৃত ইথারে
ইলিশের ঝকমকে আঁশের মতো ছড়িয়েছে হৃদয়ের বৈদ্যুতিক আলো;—
তোর বিষন্ন মুখের দিকে তাকানোর ফুরসত হয়নি তার কোনোকালেই,
তোর ঘোঁত ঘোঁত আওয়াজ তাকে ত্যক্ত-বিরক্ত করেছে।
মাতৃজঠরে মনোযোগ দিয়ে তুই দেখেছিস
ভিখারি বিশ্বের ক্রোধ ও সংগ্রাম,
আঘাতকারির পদলেহনে কাটানো হাজার বছর;
দুআনি সিকি আধুলির লোভে তোর বাবা আজ উন্নয়ন অংশিদার,
শান্তি রক্ষার সরদার।
শুকনো কাঠের মতো তোর মামার হাড় ফেটে চৌচির হলে
ভাবিসনে তুই নাক ঘসে পাবি বারুদের স্বাদ,
ন্যাংটো হয়ে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাক না তুই হাজার বছর;_
চার বোন আর মাকে তোর বাবার সামনে মানে মানে ……………..
তোর ভায়ের পাছায় আগ্রাসি সেনাবাহিনীর লাথি অক্ষয় ক্ষত এঁকে দেবে
শুনবি তুই এ-সব তাজা খবর কারণ
এখন তোর মতো শত শত অমেরুদণ্ডি
ইউরোপে জন্ম দিচ্ছে নতুন নতুন তত্ত্ব,
তুই কি জানিস তোর গোষ্ঠির দুপায়ের মাঝখানে কত শত ক্ষত,
হাতে পরলে কত শত হ্যান্ডকাপ আর বাঁধলে বুকে বোমা
আর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্যাঁদানি ক’হাজার বার খেলে
তোর মায়েদের মুক্তি মেলে।
এমন দিনে কাকে তুই কি বলবি বল?
এমন দিনে কারে বলা যায়?
দেখে নে খাবার টেবিলে ভাগে পাওয়া
চমৎকার ফলমূলের অবারিত সমারোহ আছে কি না,
ঘোরানো সিঁড়ির দেয়ালে ঝুলছে কি না পিকাসোর ছবি?
পারবি প্রতি লোমকূপে জড়িয়ে রাখতে তুই
লোনাজলে ভেজা পোষাক আশাক,
থামাতে পারবি তোর অবিবেকিক্রিয়া?
চিত্রের ইতিহাস: কবিতায় ব্যবহৃত অংকিত চিত্রটি এমব্রোগিও লরেনজেটির (১২৯০-১৩৪৮) আঁকা চিত্র ‘খারাপ সরকারের রূপক’ (Allegory of Bad Government)। শিল্পী চিত্রটি আঁকেন ১৩৩৮-১৩৪০ সালের মধ্যে। এখানে চিত্রটিকে উপরে ও নিচে কিছুটা ছেঁটে ব্যবহার করা হয়েছে।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।