রায়ডাক নদী বা ওয়াং ছু বা ওং ছু (ইংরেজি: Raidak River) বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কুড়িগ্রাম জেলার এবং পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫৩ কিলোমিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। নদীটিতে জোয়ার ভাঁটার প্রভাব থাকে না। রায়ডাক নদী মূলত তোরসা নদীর উপনদী তোরসা নদীর বাম তীরে এসে পতিত হয়েছে।
প্রবাহ: রায়ডাক-১ নদীটি নেমে এসেছে ভুটানের ৬৪০০ মিটার উঁচু আকুংচু শৃঙ্গ থেকে। ভুটানে ১৬৩ কিমি এবং জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারে ৯০ কিমি পথ অতিক্রম করে রায়ডাক-১ তােরসায় মিশেছে। ভুটান-ভারত সীমান্তে রায়ডাক তিনটি শাখায় বিভক্ত। পশ্চিমের দু-টি শাখা ধউলা ও রায়ডাক-১ পরে আবার মিশে গেছে, তৃতীয় শাখাটি রায়ডাক-২ নামে পূর্ব দিকে সংকোশ নদীতে মিশেছে।
রায়দাক নদী উত্তরবঙ্গের একটি প্রধান নদী। নদীতে সারা বছর পানি প্রবাহ থাকে, তবে বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। বর্ষায় নদীতে স্রোতধারা বৃদ্ধি পেলে তীরবর্তী এলাকা যেমন বন্যাকবলিত হয়, তেমনি ভাঙনের আলামত পরিদৃষ্ট হয়। শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ কিছুটা কমে যায়। পলির প্রবাহে এ নদীর তলদেশ ক্রমশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে এবং প্রবাহের মাত্রাও অতীতের তুলনায় হ্রাস পাচ্ছে।
এই নদীর তীরে অনেকগুলো চাবাগান আছে। ছিপ্রা বন রায়ডাক নদীর তীরে অবস্থিত। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের তুফানগঞ্জ মহকুমা সদর এই নদীর তীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। এছাড়া চিকলিগুড়ি বাজার, ঢালপাল বাজারসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ জনপদ অবস্থিত। এই নদী অববাহিকায় সেচের জন্য কোনো জল সংরক্ষণ করা হয় না। এই নদীতে কোনো রেগুলেটর নেই বা কোনো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নেই। এই নদীর উপর ভারতের জাতীয় মহাসড়ক ২৭-এর জন্য ১টি ব্রিজ ছাড়াও তুতরি চা বাগান, ছিপড়া ঝুলন্ত ব্রিজ, ধালাঝোরা ব্রিজ, উত্তর রামপুর ব্রিজ, উত্তর পরোকাটায় দুটি রেলসেতু, মধুয়া পরোকাটা ব্রিজ, পূর্ব খালিসামারি ব্রিজ, পূর্ব চিকলিগুরি ব্রিজ ছাড়াও উত্তর চিকলিগুড়িতে পশ্চিমবঙ্গের প্রাদেশিক মহাসড়ক ১৭-এর জন্য রায়ডাক ১ ব্রিজ ছাড়াও অনেকগুলো ব্রিজ আছে।
আলোকচিত্রের ইতিহাস: পশ্চিমবঙ্গের ছিপড়ার কাছে জাতীয় মহাসড়ক এনএইচ ২৭ থেকে তোলা রায়ডাক নদীর প্রবাহপথের এই আলোকচিত্রটি গ্রহণ করেছেন অনুপ সাদি ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে।
তথ্যসূত্র
১. কল্যাণ রুদ্র, বাংলার নদীকথা, সাহিত্য সংসদ, প্রথম প্রকাশ দ্বিতীয় মুদ্রণ, জানুয়ারি ২০১০, কলকাতা, পৃষ্ঠা ৭৬।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।