শ্যামল গুপ্ত (৩ ডিসেম্বর ১৯২২ – ২৮ জুলাই ২০১০) ছিলেন আধুনিক বাংলা রোমান্টিক গানের গীতিকার। তার জন্ম ১৯২২ সালের ৩ ডিসেম্বর কলকাতায়। পৈতৃক আবাস ছিল বিহারের জামালপুরে। বাস্তুভিটা অবশ্য ২৪ পরগনার হালিশহরে। তাঁর অনেকগুলো জনপ্রিয় গানের কথা রোদ্দুরে ডট কম দিতে পেরে আনন্দিত।
আমি, এত যে তোমায় ভালোবেসেছি; তবু, মনে হয় …
আমি, এত যে তোমায় ভালোবেসেছি।
তবু, মনে হয় এ যেন গো কিছু নয়
কেন, আরো ভালোবেসে যেতে পারে না হৃদয়।।
তোমার কাজল চোখে যে- গভীর ছায়া কেপে উঠে ওই
তোমার অধরে ওগো যে- হাসির মধু মায়া ফোটে ওই
তারা এই অভিমান বোঝে না আমার
বলে, তুমি তো আমায় ভালোবেসেছ
শুধু, আমার গোপন ব্যাথা কেঁদে কেঁদে কয়।।
তুমি তো জান না ওগো তোমার প্রাণের ওই
সুরের কাছে —
আমার গানের বানী আহত পাখির মত
লুটায়ে আছে।
তবু এ মাধবী রাতে আমায় যে- মালা তুমি পরালে
যে- মাধুরী দিয়ে মোর শূন্য জীবন তুমি ভরালে
তারা এ- দিনতাটুকু দেখে না আমার
বলে, তুমি তো আমায় ভালোবেসেছো
শুধু আমার গোপন ব্যাথা কেঁদে কেঁদে কয়।।
গানটি ইউটিউবে শুনতে ক্লিক করুন
- আমি, এত যে তোমায় ভালোবেসেছি; তবু, মনে হয় …
- ও আমার মন যমুনার অঙ্গে অঙ্গে ভাব তরঙ্গে কতই খেলা
- একটি নতুন গান শুনবে ব’লে কান পেতে রয়েছে আকাশ
- কতদিন দেখা হয়নি দুজনে জানি না কেমন আছ,
- হৃদয়ে মোর রক্ত ঝরে, ব্যথায় দুটি নয়ন ভরে, শিল্পী আমি,
- চন্দন পালঙ্কে শুয়ে একা একা কি হবে
- যে আঁখিতে এত হাসি লুকানো, কুলে কুলে কেন তার আঁখি-ধার,
- এই বসন্ত জানালে বিদায়, ওগো জীবনের অলস বেলায়
- তুমি সুন্দর যদি নাহি হও তাই বল কি বা যায় আসে
- ললিত লবঙ্গলতা দোলে মলয়সমীরে, এলনা কৃষ্ণ কেন
- আরও একটুখানি কাছে থাকো না আরও কিছু কথা বলো না
- আমি নিরালায় বসে বেঁধেছি আমার স্মরণ দিন
- যেথা রামধনু উঠে হেসে আর ফুল ফোটে ভালবেসে
- আমার হৃদয় নিয়ে আর কতকাল বল কাছে এসে দূরে দূরে থাকবে
ও আমার মন যমুনার অঙ্গে অঙ্গে ভাব তরঙ্গে কতই খেলা
ও আমার মন যমুনার অঙ্গে অঙ্গে
ভাব তরঙ্গে কতই খেলা,
বধূ কি তীরে বসেই মধুর হেসে
দেখবে শুধুই সারাবেলা?
ও রূপের মিথ্যে গরব অমন যদি বিরূপ থাকে,
ও গুণের কি দাম বল লাজেই যদি আগুন ঢাকে,
কবে আর আসবে সময় বাসবে ভাল
ভাসবে ময়ূরপঙ্খী ভেলা।।
কি অত বিচার করা অবিচারের ভয় ক’রে যে
কি অত হিসাব করা বেহিসাবের ভুল ধ’রে যে।
এখনো ডুব না দিলে করবে সিনান হয়গো কবে,
গাগরী ভরার বেলা অবহেলায় সাঙ্গ হবে
মনের ওই সোনা যে হয় আনমনা গো
দিন গোনাতে মাটির ঢেলা।।
একটি নতুন গান শুনবে ব’লে কান পেতে রয়েছে আকাশ
একটি নতুন গান শুনবে ব’লে
কান পেতে রয়েছে আকাশ,
একটি নতুন রাত আনবে ব’লে
ফুলে ফুলে হাসে মধুমাস ॥
সে গানের বুকে তুমি ছন্দ দিয়ো
সে ফুলের বুকে তুমি গন্ধ দিয়ো-
একটি নতুন ঢেউ দুলবে ব’লে
থেমে আছে দখিন বাতাস।।
জীবনের কত রঙ ছড়ানো ছিল।
একটি রঙের মাঝে মিলাতে,
একটি মনের যেন লীলাতে।
তুমি তার মাধুরীতে মগ্ন হবে
তুমি তার মিলনের লগ্ন হবে
একটি নতুন নামে ডাকবে ব’লে
দুটি চোখে হাসির আভাস।।
কতদিন দেখা হয়নি দুজনে জানি না কেমন আছ,
কতদিন দেখা হয়নি দুজনে
জানি না কেমন আছ!
কোথায় আছ যে তাও!
ফাগুনের এই সোনালী হাসির বেলা
পথে পড়ে আছে ঝরা-বকুলের মেলা।
মনে হয় এ যে আমারই কাহিনী
আজ তুমি লিখে যাও।।
বহু খুঁজে খুঁজে এবারে তোমার
ঠিকানা না পেয়ে শেষে
গানের মিনতি তাই তো পাঠাই।
অজানা সুদূর দেশে।
যদি কোনদিন শোনো এ গান আমার কাঁদে
যদি মনে হয় আমি ভেঙে গেছি অবসাদে।
শুধু আঁখি হ’তে দিয়ো এক ফোঁটা জল
যদি কিছু দিতে চাও॥
হৃদয়ে মোর রক্ত ঝরে, ব্যথায় দুটি নয়ন ভরে, শিল্পী আমি,
হৃদয়ে মোর রক্ত ঝরে,
ব্যথায় দুটি নয়ন ভরে,
শিল্পী আমি, আমায় তবু গাইতে হবে গান
পাবার কিছু নেই শুধু মোর দেবার থাকে দান ॥
বসন্ত মোর কেঁদে লুটায় মনের মধুবনে,
না-মেটা সাধ, ভাঙা-আশা, দুখের প্রহর গোনে,
আনন্দে তাও ভরিয়ে দিতে হবে সবার প্রাণ।।
যার প্রেমে হয় শ্যামল ধরা
ফুলের বুকে গন্ধ ভরা
সেই ধরণী ধূসর ক’রে ফুল ঝরায়ে দেবে
যে দিল মোর কণ্ঠ সুধা সেই তা কেড়ে নেবে।
সেদিন আমার রেখে-যাওয়া গানের বাঁশি দেখে
নতুন কোন বাঁশুরিয়ায় নেবে সবাই ডেকে
না-জেনে তার কাছেই জানি শুনবে আমার তান।।
চন্দন পালঙ্কে শুয়ে একা একা কি হবে
চন্দন পালঙ্কে শুয়ে একা একা কি হবে
জীবনে তোমায় যদি পেলাম না
শ্বেত পাথরের রাজপ্রাসাদে
থেকে আর কি হবে
জীবনে তোমায় যদি পেলাম না।।
নহবত সানাই বাজাক
মণিহার কন্ঠ সাজাক
আজ আমার ফুলে ছোঁয়া
চতুর্দোলা যাব বা না যাক
আগুনের ফুলকি ঝরা
আতশবাজির উৎসবে।।
শুনিযে জয়ধ্বনি চারিদিকে
কাঁদে এই শূন্য হিয়া হাহাকারে
আতরের গন্ধ ভরাক
আজ আমার বরণ ডালা
হাজার দিকে আলো ছড়াক
সোনার এই মুকুট পরে
অভিষেকের গৌরবে।।
যে আঁখিতে এত হাসি লুকানো, কুলে কুলে কেন তার আঁখি-ধার,
যে আঁখিতে এত হাসি লুকানো
কুলে কুলে কেন তার আঁখি-ধার,
যে মনের আছে এত মাধুরী,
সে কেন বয়েছে চলে ব্যথা ভার ৷
দীপের শিখায় এত আলো যে
তবু কেন কাজলে যে কালো সে।
একেলার ভালোলাগায় কি আসে
কেঁদে কেঁদে হতে চায় দু জনার।
সাগর কখনো চেয়ে দেখে না
বুকে তার কী রতন রয়েছে,
কাঙালের মত ফিরে ফিরে সে,
ফিরে ফিরে অবহেলা সয়েছে ৷
প্রেম যদি ভরে এত সুধা গো
তবু কেন হৃদয়ের ক্ষুধা গো।
যে মেঘের রয়েছে এত মমতা,
কেন তার বিদ্যুতে এত হাহাকার।।
এই বসন্ত জানালে বিদায়, ওগো জীবনের অলস বেলায়
এই বসন্ত জানালে বিদায়, ওগো জীবনের অলস বেলায়
কোনো নিরালা ক্ষণে বলো আর মনে হবে কি গো আমায়।।
আর কোনোদিন, ভুলে থাকা স্মরণের বীণ
জানি নাকো বাজাবে কিনা তুমি মোর সুরের মায়ায়।।
জানি এ তো দুরাশা আমার—-
কত গান শুনে ভালো লেগেছে তোমার,
তার মাঝে এ গানের দাম বলো কতটুকু আর?
জাগে তবু সাধ, ক্ষমা করো মোর এই অপরাধ ;
আজ বুকে কি ব্যথা কাঁদে পারি না তো বোঝাতে তোমায়
তুমি সুন্দর যদি নাহি হও তাই বল কি বা যায় আসে
তুমি সুন্দর যদি নাহি হও
তাই বল কি বা যায় আসে
প্রিয়ার কি রূপ সেই জানে, সেই জানে
ওগো যে কখনো ভালোবাসে।।
শত মনোহার হলে তবু হায়
নীরব বীনারে কেবা দেখে যায়
কাঁদে যদি সুর সমবেদনায়।
আঁখি তবে জলে ভাসে।।
জানিতে চাহিনা তুমি কি যে
শুধু তোমার তুমিরে জানি।
আমার নয়নে প্রতিমা হয়েছো
তাই তুমি ওগো রানী।
কেন তবু এ যে মোহ ভাব হায়
জান না তোমারই করুণা কনায়
কাঙ্গাল হৃদয় ভরে গেছে মোর।
যেদিন দাঁড়ালে পাশে।।
ললিত লবঙ্গলতা দোলে মলয়সমীরে, এলনা কৃষ্ণ কেন
ললিত লবঙ্গলতা দোলে মলয়সমীরে,
এলনা কৃষ্ণ কেন কোকিল কূজিত কুঞ্জ-কুটীরে?
নাচিছে কলাপ সরস বসন্তে
চুমিছে ধরণী আকাশে দিগন্তে
মদন দহিছে বিরহিণীরে।
অঙ্গের মৃগমদ সৌরভ,
কাঁদিছে হয়ে হত গৌরব।
ভাসিছে নয়নে নয়নানন্দ
চন্দনে চর্চিত পিয়া মুখ চন্দ
আসেনা শ্রবণে মধুমুরলীরে।
আরও একটুখানি কাছে থাকো না আরও কিছু কথা বলো না
আরও একটুখানি কাছে থাকো না
আরও কিছু কথা বলো না
এখনও যা বলা হলো না
আধোলাজে তারে ঢেকে রেখো না।।
দু’টি চোখে ঝরোঝরো জোছনারই স্বপ্ন,
দুরু দুরু হিয়া ঘিরে মাধবীর লগ্ন,
চুপি চুপি হাওয়া বলে, না, না, যেও না ।।
আছে গান, আছে প্রাণ, আছে ভালোবাস
হাসি আর বাঁশি জুড়ে শুধু আলো-আশা।
দু’টি হাতে রিনিঝিনি কাঁকনের ছন্দ,
ভেসে আসে করবীর বনযূথী গন্ধ——
কানে কানে বলি শোনো, না, না, যেও না।।
আমি নিরালায় বসে বেঁধেছি আমার স্মরণ দিন
আমি নিরালায় বসে বেঁধেছি আমার স্মরণ দিন
একি বেদনার মত বেজেছে আবার হারান বীণ।
ফেলে আসা পথে কুহেলী আঁচল সরায়ে
দুচোখে আমার স্বপন কাজল পরায়ে
তুমি বিগত ব্যথায় এ ভাঙ্গা হৃদয় করেছ লীন।
আমি নিরালায় বসে বেঁধেছি আমার স্মরণ দিন
একি বেদনার মত বেজেছে আবার হারান বীণ।
ফগুনে আমার ঘিরেছে আবার হিমেল বায়
আলোর পিছনে লুকানো ছায়া মায়া জড়ায়।।
কবে চলে গেছে সে কথা যখন ভুলেছি
ভুল করে শুধু ভুলের ফসল তুলেছি
তারার মালা না গাঁথার খেলায় শুকাল হে উদাসীন।।
আমি নিরালায় বসে বেঁধেছি আমার স্মরণ দিন।
একি বেদনার মত বেজেছে আবার হারান দিন।
যেথা রামধনু উঠে হেসে আর ফুল ফোটে ভালবেসে
যেথা রামধনু উঠে হেসে
আর ফুল ফোটে ভালবেসে
বল তুমি যাবে কি গো সাথে
এই পথ গেছে সেই দেশে।
যেথা সব তিথি মধু তিথি
মধু মাস জেগে থাকে নিতি।
মন যেন প্রজাপতি হয়ে
পাখা মেলে দিয়ে চলে ভেসে।।
যেথা শুধু আলো শুধু আশা
সারাবেলা করে কানাকানি
চিরচেনা হয়ে পাশে থেকে
হয় মনে মনে জানা জানি
যেথা হাতখানি হাতে বাধা
বেনু বীনা একই সুরে সাধা।
তাই যত কথা বলা বাকি
যায় গান হয়ে তার রেশে।।
আমার হৃদয় নিয়ে আর কতকাল বল কাছে এসে দূরে দূরে থাকবে
আমার হৃদয় নিয়ে আর কতকাল বল কাছে এসে দূরে দূরে থাকবে,
মনের সুরভীটুকু মনেই লুকায়ে তুমি রাখবে।।
চম্পকবনে শোন বাতাসেরা কি যে কয়ে যায়,
এমন প্রহরগুলি অকারণে কেন বয়ে যায়,
লগ্ন ফুরালে তুমি কারে আর কাছে বল ডাকবে।।
তখন হয়ত আমি হারায়ে গিয়েছি কোন সুদূরে
হয়তো কাজল মেঘ ছড়ায়ে ওই রয়েছে আকাশ জুড়ে।
দু’জনার মন যদি দু’জনারে কাছে পেতে চায়,
রাত্রি নামেই যদি নামুক না কি বা আসে যায়?
মনের একটি কথা কত আর তুমি ঢেকে রাখবে?
শ্যামল গুপ্ত (৩ ডিসেম্বর ১৯২২ – ২৮ জুলাই ২০১০) আধুনিক বাংলা গানের গীতিকার। তাঁর রচিত গানের সংখ্যা প্রায় দু হাজার। তার মধ্যে চলচ্চিত্রের জন্য লেখা আড়াইশো-তিনশো গান। প্রকাশিত গীত-সংকলন ‘আধুনিক গান’ (১৯৬৩)। ‘হারমোনিয়াম’ চলচ্চিত্রের গান লেখার জন্য পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দেওয়া পুরস্কার।