চিতাবাঘ বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাংলাদেশে প্রাপ্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে এটি সুদর্শন এবং প্রাপ্ত ৮ প্রজাতির বিড়ালদের ভেতরে দ্বিতীয় বৃহত্তম। তবে বাংলাদেশে মাঝে মধ্যে যদিও কোথাও চিতাবাঘ দেখার কথা শোনা যায় সেগুলো মূলত চিতাবিড়াল। আর যদি দুএকটি সত্যিই দেখা যায় তবে সসেগুলো অবশ্যই পরিযায়ী। পথ ভুলে পাসের দেশ থেকে এসেছে। চিতা বাঘ সামান্য ঝোপঝাড়ের মধ্যে লুকিয়ে পড়তে দক্ষ। চিতা বাঘদের একসময় বাংলাদেশের গ্রামীণ বনেও দেখা। শুনে অবাক হতে হয় যে, এনায়েত মওলা নামের জনৈক ব্যক্তি ১৯৫০ সালের দিকে দুটো চিতা বাঘ মারেন মিরপুর আর বর্তমান উত্তরা এলাকায়।
ভাওয়াল ও মধুপুরের জঙ্গল একসময় ছিল চিতা বাঘের স্বর্গরাজ্য। বায়জীদ খান পন্নীর বই বাঘ-বন-বন্দুক-এ বইয়েও মধুপুর এলাকায় চিতা বাঘ শিকারের কাহিনি আছে। মাইকেল ডি কস্তা নামের একজনের বইয়ে ভাওয়াল–মধুপুর এলাকায় রীতিমতো পাখির মতো চিতা শিকারের কাহিনি পড়ে অবাক না হয়ে উপায় থাকে না। দাপ্তরিকভাবে মধুপুর জঙ্গলের শেষ চিতা বাঘ দেখেন জলছত্র মিশনের ফাদার ইউজিন। সেটা ১৯৬০ সালের আশপাশের কোনো এক সময়ের ঘটনা। তবে এটাই মধুপুর জঙ্গলের শেষ চিতা বাঘ, এই দিব্বি কেউ দিতে পারবে না।
বাংলাদেশে গত ২০১১-১২ সালে অন্তত সাতটি চিতাবাঘ মেরেছে বাংলাদেশের মানুষ এবং এই সংক্রান্ত একটি খবর আমি ২৯ মার্চ ২০১২ তারিখে প্রাণকাকলিতে প্রকাশ করি। সবচেয়ে ভয়ংকর খবর প্রকাশ করে আজকের বরিশাল নামের একটি সাইট যারা ২ এপ্রিল, ২০১৪-তে লেখে নলছিটি উপজেলার এক চিংড়ি ঘেরে প্রতি রাতেই চিতাবাঘ হত্যা করা হচ্ছে এবং এযাবত সেখানে দুটি বাঘ মারা পড়েছে।[২] এছাড়া একটি চিতাবাঘকে গত ২৮ মার্চ, ২০১২ তারিখে বাংলাদেশের পঞ্চগড়ের মানুষ মেরে ফেলে। একটি বাঘ খাদ্যের খোঁজে লোকালয়ে এলে লোকজন চিৎকার শুরু করে এবং ভীত হয়ে বাঘটিকে আক্রমণ করে। ঘটনাটি ঘটে বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলার কাজলদিঘি-কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের ডলুয়াপাড়া গ্রামে। মনে করা হচ্ছে বাঘটি ভারতের জংগল থেকে এসেছিলো। এছাড়াও আরো অনেক জায়গায় মাঝেমধ্যেই চিতাবাঘকে লোকজন হত্যা করে যার খবর মাঝেমাঝেই পত্রপত্রিকায় প্রকাশ পায়। যেমন ২০১১ সালে ৪টি চিতাবাঘ হত্যা করে বাংলাদেশের লোকেরা। ১২ জুলাই, ২০১১ তারিখে সিলেটে দুটি চিতাবাঘকে মারে সেখানকার লোকজন। একই বছরের ৮ অক্টোবর লালমনিরহাটে একটি এবং ২০১১ সালের নভেম্বরে মাদারিপুরের কালকিনিতে অপর চিতাবাঘটিকে লোকেরা হত্যা করে। অন্য এক খবরে জানা যায় ৩০ ডিসেম্বর, ২০০৯ তারিখেও বাংলাদেশের নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার চাঁদখানা বাহাগিলী বাশুলিয়াপাড়া গ্রামে একটি চিতাবাঘ মারা পড়েছিলো।[৩] এটা খুবই দুঃখজনক যে বাংলাদেশের বন বিভাগ এই মহাবিপন্ন প্রাণীটিকে রক্ষার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। এছাড়াও ১৮ মার্চ, ২০১০-এ বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া গ্রামে একটি চিতাবাঘকে টেটাবিদ্ধ করে হত্যা করে গ্রামবাসী।
সর্বশেষ এক খবরে দেখা যাচ্ছে যে দামুড়হুদায় গ্রামবাসী পিটিয়ে মারল চিতাবাঘ। দামুড়হুদা উপজেলার প্রতাপপুরে গ্রামবাসীর পিটুনিতে একটি চিতাবাঘের মৃত্যু হয়েছে। ১২ নভেম্বর, ২০১৭ তারিখের দৈনিক যুগান্তরের খবরে লেখা হয়েছে ‘শুক্রবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার কুড়–লগাছি ইউনিয়নের প্রতাপপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসী জানায়, বেশকিছু দিন থেকে একটি বন্য চিতাবাঘ প্রতাপপুর গ্রামের কয়েকজনের গরু-ছাগলসহ বেশকিছু মানুষের ওপর দফায় দফায় আক্রমণের চেষ্টা চালায়। আক্রমণ থেকে বাঁচতে গ্রামের কিছু যুবক লাঠিসোটা নিয়ে ধাওয়া করে বাঘটিকে হত্য করে। বাঘটি প্রায় ৩ ফুট লম্বা এবং ৩২ কেজি ওজন। গ্রামের প্রবীণদের অভিমত এটি প্রকৃত চিতাবাঘ’।[৪]
২২ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে সর্বশেষ চিতাবাঘ হত্যা ঘটে পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলায়। উক্ত উপজেলার ঝলই শালশিরি ইউনিয়নের বসুনিয়াপাড়ায় একটি বাঘ তাড়া খেয়ে ওই এলাকার একটি ঝোপের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছিল। শনিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বন বিভাগের কর্মকর্তারা বাঘটিকে বাগে আনতে পারছিলেন না। রাত সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাঘটি হঠাৎ বের হয়ে দৌড় দিলে স্থানীয়রা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বাঘটি হত্যা করে।[৫]
ছবির ইতিহাস: ব্যবহৃত ছবিটি প্রথম আলোতে ২৯ মার্চ, ২০১২ তারিখে ৫ম পৃষ্ঠায় ছাপা হয়। যদিও খবরটি ইন্টারনেট সংস্করণে প্রকাশিত হয়নি। ছবিটি নেয়া হয়েছে eprothom-alo থেকে। এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ খবর অন্য কোনো পত্রিকাগুলোতে গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হয়নি।
তথ্যসূত্র
১. নামহীন, দৈনিক কালের কণ্ঠ, বাঘের ভাই এখনো আছে চিতা বাঘ, ২৫ জুলাই, ২০১৫, লেখার লিংক http://www.kalerkantho.com/print-edition/oboshore/2015/07/25/248191
২. আজকের বরিশাল, ২ এপ্রিল ২০১৪, খবরের লিংক http://www.ajkerbarisal.com/jhalakathi-news/3588-2012-04-02-17-43-28
৩. তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ (রংপুর) ও সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি | পিটিয়ে চিতাবাঘ হত্যা, দৈনিক প্রথম আলো, তারিখ: ৩০-১২-২০০৯ লিংক http://archive.prothom-alo.com/detail/news/30204
৪. দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি, দৈনিক যুগান্তর, ১২ নভেম্বর, ২০১৭, দামুড়হুদায় গ্রামবাসী পিটিয়ে মারল চিতাবাঘ, খবরের লিংক, https://www.jugantor.com/bangla-face/2017/11/12/171093/
৫. পঞ্চগড় প্রতিনিধি, দৈনিক কালের কণ্ঠ, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮ পঞ্চগড়ের বোদায় পিটিয়ে চিতাবাঘ হত্যা http://www.kalerkantho.com/online/country-news/2018/12/23/717800
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।
পড়ে অনেক ভাল লাগল। চিতাবাঘদের সম্পর্কে এমন বিচিত্র রকমের তথ্য জানতে ভাল লাগে। নতুন নতুন তথ্য নিয়ে আরও পোস্ট চাই।