অনেক লোক মনে করেন মধু খেয়ে দীর্ঘ জীবন লাভ করা যায়। একজন স্বাস্থ্যবান দীর্ঘজীবীর কাছে তাঁর সুস্থ ও দীর্ঘজীবনের রহস্য জানতে চাওয়া তিনি বলেছিলেন, আমার অক্ষুন্ন দৈহিক শক্তির একমাত্র কারণ আমি প্রতিটি এক চা চামচ পরিমাণ মধু গরম জলে ফুটাইয়া পান করি।’ ভারতে প্রাচীন কাল থেকেই মধুকে উত্তম খাদ্য বলে মনে করা হয়েছে। হিন্দিতে একটা লোকোক্তি আছে ‘সর্দি কাশি মাথার বেদনার হাত থেকে নিষ্কৃতি পেতে/ ভুলে যেও না আদার রস মধু মিশিয়ে খেতে।
মধু খেলে মানুষ নিরোগ, বলবান ও দীর্ঘজীবী হয়। আয়ুর্বেদ মত অনুসারে আট রকমের মধু আছে। এর মধ্যে কোনো মধুটি তৈরি করে বড় বড় মৌমাছি (মাক্ষিক মধু), কোনোটি বা ছোট মৌমাছি, কোনোটি বা তৈরি করে ভোমরা (ভ্রমর মধু), কোনোটি বা ফুল থেকে আপনিই ঝরে পড়ে (মকরন্দ)।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, মধু শীতল, রুক্ষ, লঘুপাক, অগ্নি বল ও মেধাজনক (খিদে বাড়ায়, বল বৃদ্ধি করে, মেধা বৃদ্ধি করে), মলরোধক, চক্ষু পরিষ্কারক, ভগ্ন সংযোজক (ভাঙা জোড়া দিতে সাহায্য করে), ব্রণ রোধক, স্বরবর্ধক, স্রোতবিশোধক, শুক্রন্তনকারক বা শুক্রবর্ধক। কাশি, শ্বাস, হিক্কা, জ্বর, পেটের অসুখ, বমি, তৃষ্ণা, কৃমি, বিষদোষ ও কফ, বাত, পিত্ত (ত্রিদোষ) নাশক বা এগুলোর উপশম করে।
রোগ সারাতে মধুর ব্যবহার :
মধু খুব পুষ্টিকর এবং সব রকম চোখের রোগে উপকারী। নতুন মধুর মধ্যে একটু শ্লেষ্ম সৃষ্টি করলেও যাঁরা রোগা তাঁরা খেলে একটু মোটা হবেন। পুরানো মধু খেলে আবার যাঁরা মোটা তাঁরা রোগা হবেন (কৃশতাকারক)। এ ছাড়াও কুষ্ঠ, অর্শ, রক্তপিত্ত, প্রমেহ, ক্লান্তি, পিপাসা, বমি, মলবদ্ধতা, দাহ ও ক্ষয়রোগ উপশম করে। মধুর অনেক অসুখ সারিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা আছে। বয়স্কদের সকালের জল, খাবার লাল আটার রুটি ও গরম দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে তা যেমন তৃপ্তিকর তেমনই পুষ্টিকর, কোষ্ঠ, রক্ত পরিষ্কারক, বলকর ও স্বাস্থ্যকর।
সুস্থ থাকতে মধুর প্রয়োগ:
১. সর্দি সারায়: চায়ের সঙ্গে আদা ও মধুর রস মিশিয়ে খেলে সর্দি ও শ্লেষ্ম রোগের উপশম হয়।
২. শরীরের ক্ষত সারাতে: শরীরের বাইরের কোনো অংশের ক্ষততে মধুর প্রলেপ লাগালে অনেক সময় মলমের চেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
৩. পাকস্থলীর সমস্যা দূর করে: জলের সঙ্গে অল্প মধুর মিশ্রণ খেলে পাকস্থলীর ক্ষত সারে।
৪. হাঁপানি দূর করে: হাঁপানির মৃদু আক্রমণ এবং শ্বাসের স্বল্পতায় অনেক সময় মধু খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৫. গলার সমস্যা ও কন্ঠের কোমলতা: জলসহ মধুর কুল্লি করলে গায়কদের গলার স্বর বৃদ্ধি পায় এবং অনেকের মতে এটা টনিকের মতো কাজ করে। গরম জলের সঙ্গে মধুর কুল্লি করলে গলগণ্ড রোগের উপকার হয়। মধুর সঙ্গে জল মিশিয়ে কুলি (গার্গল) করলে যাঁদের টনসি গেছে তাঁরা উপকার পাবেন।
৬. চোখের সমস্যা দূর করতে: চোখের অসুখেও মধুর উপকার অনেক।
৭. শরীরের শক্তি বৃদ্ধি: শিশু ও বৃদ্ধদের পক্ষে আদর্শ শক্তিশালী আহার্য। দুর্বল শিশুকে দু-এক ফোঁটা মধুর সাথে দুধ মিশিয়ে দিনে দুবার। খাওয়ালে তার স্বাস্থ্য ভাল হয় ও শক্তি লাভ করে। এক কাপ দুধে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খেলে শক্তি বৃদ্ধি পায়।
৮. মেদ কমায়: মেদ রোগে অর্থাৎ যাঁরা খুব মোটা হয়ে যাচ্ছেন তাঁদের রোগা করবার জন্যে বা মেদ কমিয়ে দেওয়ার জন্যে মধুর সঙ্গে অল্প জল মিশিয়ে খেলে সুফল পাওয়া যায়।
৯. উচ্চ রক্তচাপ কমাতে: দুই চা চামচ পাতিলেবুর রসের সঙ্গে এক চা চামচ মধু ব্লাড প্রেশারে যাঁরা ভুগছেন তাঁদের উচ্চ রক্তচাপ কমবে।
১০. মুখের ক্ষত দূর করে: মধুর সাথে পানি মিশিয়ে মুখে রেখে কিছুক্ষণ পর কুলি করলে মুখ স্বচ্ছ হয় অর্থাৎ মুখে একটা তাজা ভাব আসে। মুখের ঘা সারে। পিপাসা ইত্যাদি দূর হয়।
১১. মুখের ত্বকের সমস্যা সারাতে: প্রতিদিন সকালে দুই চা চামচ মধু ঠাণ্ডা জলে মিশিয়ে চার-পাঁচ মাস ধরে খেলে চুলকুনি, ফুসকুড়ি, ব্রণ প্রভৃতি ত্বকের রোগ একেবারে মূল থেকে সেরে যায়।
১২. পেটের রোগ সারাতে: সকালবেলা এক কাপ গরম বা ঠাণ্ডা জলে এক চা চামচ এবং রাত্তিরে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে এক চা চামচ মধু খেলে অজীর্ণতা ও কোষ্ঠবদ্ধতা দূর হয়ে যায়।
১৩. পোড়া স্থানে লাগানো: পাতলা পরিষ্কার কাপড় মধুতে ভিজিয়ে শরীরের পুড়ে যাওয়া অংশে রাখলে একটু স্বস্তি পাওয়া যায়।
১৪. বিবিধ: মৌরির জলের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে শাকসবজির গ্যাস বা দূষিত বায়ু বেরিয়ে যায়। মধুর সঙ্গে গুড়ের রস মিশিয়ে খেলে বমি বন্ধ হয়ে আসে। টাটকা মাখনের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে ক্ষয় রোগীর উপকার হয়।
এই রকমভাবে মধুর অজস্র উপকারিতা তো আছেই। বৈজ্ঞানিক মত অনুসারে মধু সহজে হজম হয়, অত্যন্ত হালকা, শরীরের দাহের শান্তি করে, উত্তেজক, পোষক বা পোষণ করে, বলদায়ক ও হৃদ্য অর্থাৎ হৃৎপিণ্ডের পক্ষে উপকারী। নানা রকম অসুখ সারাবার এবং অসুখের বিরুদ্ধে প্রতিরোধশক্তি গড়ে তোলবার ক্ষমতা মধুর আছে।
সুশ্রুতের মতে, মধু হৃদ্য বা হার্টের পক্ষে উপকারী, ভাঙা হাড় জুড়তে সাহায্য করে (ভগ্ন-সংযোজক), বাজীকরণ বা কামশক্তি বাড়িয়ে দেয়, কফ, পিত্ত ও বাত অর্থাৎ ত্রিদোষ নাশক বা নাশ করে।
তথ্যসূত্রঃ
১. সাধনা মুখোপাধ্যায়: সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাকসবজি মশলাপাতি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, নতুন সংস্করণ ২০০৯-২০১০, পৃষ্ঠা,৪০-৪২।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।
আপনার টিপসটি অনেক ভালো লেগেছে। সত্যি আমি টিপসটা জানতে পেরে অনেক খুশি হয়েছি। আশা করছি সামনে আরো মজার কিছু শিখবো। ধন্যবাদ পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
মধুর উপকারিতা খুজতে খুঁজতে এই ওয়েবসাইট থেকে অনেক কিছু জানলাম, আমিও লিখেছি মধুর উপকারিতা নিয়ে।