ভুট্টা বিশ্বের উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের শস্য

খাদ্যশস্য

ভুট্টা

বৈজ্ঞানিক নাম: Zea mays mays সমনাম: জানা নেই। ইংরেজী নাম: corn. স্থানীয় নাম: ভুট্টা, মাকই জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য: Plantae বিভাগ: Angiosperms অবিন্যাসিত: Monocots বর্গ: Commelinids পরিবার: Poaceae গণ: Zea প্রজাতি: Zea mays

ভূমিকা:  ভুট্টা  বা মাকই (বৈজ্ঞানিক নাম: Zea mays, ইংরেজি: corn) পোয়াসি পরিবারের Zea গণের তৃণ। সকল পরিবেশে জন্মাতে পারে।

বর্ণনা: ভুট্টা সুদৃঢ়, সহবাসী বর্ষজীবী তৃণ, কাণ্ড একল, ১-২ মিটার লম্বা, পর্বমধ্য মোটা, নিরেট, অশাখ, পর্ব রোমশবিহীন। পত্র অসংখ্য, অভিলিপ্ত, ফলক ভল্লাকার, ২০-৪৫ x ৩-৫ সেমি, গোড়া গোলাকার, প্রান্ত সিলিয়াযুক্ত, উপরের পৃষ্ঠ রোমশ, অনুফলক ঝিল্লিযুক্ত, ৪-৫ মিমি লম্বা, আবরণ ৫-১৫ সেমি লম্বা, গোলাকার, রোমশ। পুং পুষ্পবিন্যাস প্রান্তীয় পেনিকেল, ১০-২৫ সেমি লম্বা, মধ্য মঞ্জরী অক্ষ রোমশ, শাখা ২-২০ বা ৩০ সেমি লম্বা, বৃন্ত। ১.৫-৩.০ মিমি লম্বা, রোমশ। পুং স্পাইকলেট এক জোড়াবদ্ধ, ৬-৮ x ২-৩ মিমি, পার্শ্বীয় চ্যাপ্টা, ২-পুষ্প বিশিষ্ট, উভয় পুষ্পিকা পুং, শূকবিহীন। গ্লুম আয়তাকার বা ডিম্বাকৃতি-ভল্লাকার, নিচের গ্লুম ৬-৮ মিমি লম্বা, ৭-শিরাল, উপরের গ্লুম নিচের গ্লুমের অনুরূপ। নিচের পুষ্পিকা পুং বা বন্ধ্যা, উপরের পুষ্পিকা পুং। লেমা ডিম্বাকৃতি-আয়তাকার বা ভল্লাকার, স্বচ্ছ, ৫-৬ মিমি লম্বা, ২-শিরাল।

পুংকেশর ৩টি, পরাগধানী রৈখিক। স্ত্রী পুষ্প বিন্যাস অসংখ্য তুষে আবৃত। নিচের গ্লুম খাতা, অগ্রভাগ সিলিয়া যুক্ত, উপরের গ্লুম সূক্ষ্মাগ্র বা ২-খন্ডিত, সিলিয়াযুক্ত । নিচের পুস্পিকা শূন্য, উপরের পুষ্পিকা স্ত্রী। লেমা আয়তাকার, ঝিল্লিযুক্ত, গর্ভাশয়কে অভিলিপ্ত । পেলিয়া লেমার চেয়ে লম্বা। পরিপক্ক দানা শক্ত, উজ্জ্বল। ফুল ও ফল ধারণ: এপ্রিল-আগস্ট। ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ৪০ (Fedorov, 1969)।

আবাসস্থল ও চাষাবাদ: সমতল ও পার্বত্য ভূমিতে আবাদ করা হয়। বীজ লাগিয়ে ফসল করা হয়।

বিস্তৃতি: বিশ্বের উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে জন্মে। বাংলাদেশের সর্বত্র চাষাবাদ হয়।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: ভূট্টা মানুষের অন্যমত প্রধান খাদ্য, এছাড়া গবাদি পশুর খাদ্য বিভিন্ন শিল্পজাতদ্রব্য তৈরিতেও এর গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার রয়েছে (Purseglove, 1968)। মঞ্জরীপত্র সিগারেট এবং চুরুট জড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হয়। শস্যের কান্ড ও পত্র পশুকে খাওয়ানো হয় (Bor, 1960)। শস্যের ক্বাথ অর্শরোগ নিরাময়ের জন্য ‘হিপবাথ’-এ ব্যবহার করা হয়। মূত্রনালির পীড়া ও যকৃতের সমস্যায় গর্ভমুন্ডের ব্যবহার প্রচলিত আছে (Kirtikar et al., 1935)।[১]

আরো পড়ুন:  বাঁশের পুষ্পায়ন বা বাঁশের ফুল হচ্ছে একটি প্রাকৃতিক ঘটনা যখন সব বাঁশে ফুল ধরে

ভুট্টার ব্যবহার:

পিত্তের প্রকোপ কমিয়ে দেয় ভুট্টা মক্কা অথাৎ ভুট্টা। আজকাল বাঙালিরাও আগুনে সেঁকা ভুট্টার সুস্বাদের সঙ্গে পরিচিত। এখন টিফিন হিসেবে সেঁকা কচি ভুট্টা খেতে সকলেই ভালবাসেন। একটা খেলেই বেশ পেট ভরে যায় এবং খাদ্য হিসেবেও তেলে ঘিয়ে জবজবে করে ভাজা অন্য খাবারের চেয়ে পুষ্টিকর। ক্ষেত থেকে পেড়ে আনা ভুট্টা সেঁকা নুন, গোলমরিচ ও পাতিলেবুর রস মাখিয়ে খেলে যেন এই কৃত্রিম শহরের পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিক থেকে মনে মনে খানিকটা মাটির কাছাকাছি চলে যাওয়া যায় ।ভুট্টার দানা শুকনো খোলায় ভাজলে যে খই হয় সেইটেই পপকর্ন নামে পরিচিত।

ভুট্টা মধুর, কটু, কষায় ও রুক্ষ। কফ ও পিত্তের প্রকোপ কমিয়ে দেয়। খাওয়ার রুচি বৃদ্ধি করে, মল রোধ করে এবং অত্যন্ত শীতল ।

মক্কা বা ভুট্টার আটার টিকড় (লেচি পোড়ানো) রুক্ষ, দুর্জর (সহজে হজম হয় না) এবং অত্যন্ত বায়ুকারক । ভুট্টার দানা বের করে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে অল্প ছাই মধুর সঙ্গে মিশিয়ে চাটলে বমি বন্ধ হয়ে যায়।

ভুট্টা পোড়া, ভুট্টার খই (পপকর্ন বা ভুট্টার রুটি ছাড়াও আজকাল নানা রকমভাবে সপ, তরকারি, ভাজা ইত্যাদি তৈরি করে ও ভূট্টা খাওয়া হয়। ভুট্টা খাওয়ার ঝোঁক ও ভুট্টা খাওয়ার প্রবণতা দুই-ই আজকাল বেড়ে গেছে।

ভুট্টার জাতিতাত্বিক ব্যবহার: ভারতের লোধা আদিবাসী সম্প্রদায় মৃগীরোগে মূল ও চর্মরোগে পুংপুষ্পের লেই ব্যবহার করে থাকে ( র. Jain, 1998)।[২]

অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১২তম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) ভুট্টা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের সংকটের কারণ দেখা হয়েছে আবাদে অনাগ্রহ এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে প্রজাতিটি সর্বপ্রকার উপজাতকে জীবিত জিন ব্যাংকে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।[১]

তথ্যসূত্র:

১. এস নাসির উদ্দিন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১২ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৩৮। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

আরো পড়ুন:  জোয়ার বা জওয়ার বিশ্বব্যাপী চাষাবাদকৃত খাদ্যশস্য

২. সাধনা মুখোপাধ্যায়: সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাকসবজি মশলাপাতি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, নতুন সংস্করণ ২০০৯-২০১০, পৃষ্ঠা,২৭।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Abhijit Kar Gupta

Leave a Comment

error: Content is protected !!