গাঁদা একটি শীতকালীন মৌসুমি ফুল। গাছ থেকে উঠানোর পর এ ফুল দীর্ঘ সময় ধরে সজীব থাকে। বিধায় কাটা ফুল হিসেবে এর চাহিদা প্রচুর। এ ফুলের অনেক ভেষজ গুণাবলী রয়েছে। শরীরের কাটা ছিড়ায় পাতার রস রক্ত বন্ধ করে এবং ক্ষত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। গাঁদার আদি নিবাস হলো মেক্সিকোতে। ইউরোপ হয়ে এটি আমাদের দেশে এসেছে।
গাঁদা ফুলের জাত:
আমাদের দেশে দুরকম প্রজাতির গাঁদা খুব জনপ্রিয়। প্রথমটি হলো আফ্রিকান গাঁদা। এর ফুল বড় আকারের এবং রঙ হয় হলুদ বা কমলা। দ্বিতীয়টি হলো ফ্রেঞ্চ গাঁদা। এটির ফুল ছোট আকারের। অনেক ফুল এক সাথে ফোটে। লাল রঙও দেখা যায়। অধিকাংশ জাতে পাপড়ির গোড়ায় কালো দাগ থাকে।
সব ধরনের জমিতে গাদার চাষ করা সম্ভব। তবে পানি নিষ্কাশের সুবিধাযুক্ত দোআঁশ মাটি গাঁদা ফুল চাষের জন্য বেশি উপযুক্ত। পর্যাপ্ত সূর্যালোকযুক্ত জমি গাছের বৃদ্ধি ও ফুল উৎপাদনের সহায়ক।
গাঁদা ফুলের বংশবিস্তার:
বীজ ও শাখা কলম থেকে গাঁদার সহজ বংশবিস্তার করা যায়। বীজ থেকে উৎপন্ন। গাছ হতে অবশ্য জাতের বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ফুল পাওয়া যায় না। যাহোক বীজ থেকে চারা উৎপাদন করতে হলে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে বীজতলায় বীজ বুনা হয়। এক মাস বয়স্ক চারা মাটি বা টবে স্থায়ীভাবে লাগাতে হয়। শাখা কলম করে বংশ বিস্তারের ক্ষেত্রে ফুল দেওয়ার পর বর্ষার পূর্বে অভিপ্রেত কয়েকটি গাছ টবে বা উঁচু জায়গায় স্থানান্তরিত করে রাখতে হয়। বর্ষার পর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে এ সমস্ত গাছের শাখা কলম করে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চারা উৎপাদন করে নিতে হবে।
জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ:
জমি চাষ এবং আগাছামুক্ত করে নিয়ে হেক্টর প্রতি ৫০ টন জৈব সার, ১৫০ কেজি টিএসপি এবং ১৫০ কেজি এমপি মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এছাড়া চারা লাগানোর ৪০ দিনের মাথায় হেক্টর প্রতি ২০০ কেজি ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করতে হয়। ফরাসি জাতের গাঁদার ক্ষেত্রে ইউরিয়া সার কম ব্যবহার করা উচিত। তা না হলে গাছ বেশি বড় হয়ে যাবে এবং ফুল কম দিবে।
চারা রোপণ:
চারার বয়স মাস খানেক হলে ৪৫-৬০ সেঃ মিঃ দূরত্বে সারি করে এবং সারিতে গাছের দূরত্ব ৪০-৫০ সেঃ মিঃ বজায় রেখে চারা লাগাতে হয়। নভেম্বর মাসে এ কাজটি সম্পন্ন করতে হবে। জাত অনুযায়ী চারা লাগানোর দূরত্ব কম বেশি হতে পারে। অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা জমি আগাছামুক্ত রাখতে হয়। জমির রস বুঝে ফুল আসার আগে ২-৩ বার সেচ দিতে হয়।
ফুল আসার পর প্রয়োজন দেখা দিলে সেচ দেওয়া অব্যাহত রাখলে এতে ফুলের আকার ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে। বেশি ফুল পেতে হলে গাছগুলো অল্প বড় হলেই তাদের অগ্রভাগ কেটে দিবে হবে। তবে এতে ফুলের আকার ছোট হবে। ফুলের আকার বড় করতে হলে ডগা কাটা যাবে না। ফুলের কুঁড়ি বের হলে উপরের দু-একটি কুঁড়ি রেখে বাকি কুঁড়িগুলো কেটে ফেলতে হবে।
ফুল সংগ্রহ:
ফুল ধারালো ছুরি বা কাঁচি দিয়ে কেটে তোলা উচিত। বোঁটা লম্বা রেখে গাছ থেকে। ফুল তুললে বেশি দিন টাটকা থাকে। গাঁদা জানুয়ারি মাস হতে ফুল দেওয়া শুরু করে।
তথ্যসূত্র:
১. সিরাজুল করিম আধুনিক পদ্ধতিতে ফুলের চাষ প্রথম প্রকাশ ২০০১ ঢাকা, গতিধারা, পৃষ্ঠা ১০৬-১০৭। আইএসবিএন 984-461-128-7
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।