গন্ধভাদালি বা গাঁদাল বা গন্ধভাদুলি লতার দশটি ভেষজ গুণ

গন্ধভাদালি বা গাঁদাল বা গন্ধভাদুলি বা গন্ধভাদাল হচ্ছে একটি লতানো গাছ। এটি ভারতের সর্বত্র কম বেশি পাওয়া যায়। এরা সচরাচর অপর গাছ অথবা বাগানের বেড়ায় দেখা যায়, তবে জনপদে যত্র তত্র যে হয়ে আছে এটাও নয়; তবে সাধারণভাবে এটি লাগানো হয়ে থাকে। এ ছাড়াও এটি মধ্য ও পূর্ব হিমালয়ে পাঁচ হাজার ফুট উচ্চতার মধ্যেও দেখা যায়, এর লতাপাতায় উৎকট বিষ্ঠার গন্ধ; সেইজন্য এর একটি নাম ‘পুতিগন্ধা’ । বর্ষাকালেই তার বাড় বাড়ন্ত। শরতে ফুল এবং শেষে ফল হয়। এইজন্যই আয়ুর্বেদের ভৈষজ্য সংগ্রহের নির্দেশে এই শরতেই তার সংগ্রহের কাল। এটির বোটানিক নাম Paederia foetida Linn. পরিবার Rubiaceae.

এদেশে এর আর একটি প্রজাতি পাওয়া যায়; তার প্রচলিত নাম ভুই গাঁদাল বা ছোট গাঁদাল, এর পাতাগুলি আকারে একটু ছোট ও অল্প রোমশ এবং তার লতাটাও একটু শীর্ণ, তার লতায় পাতায় দুর্গন্ধ একটু  কম, তার বোটানিক্যাল নাম Paedoria tomentosa Blume.এছাড়া গাছ প্রসারণী বলে ব্যবহার হয়ে থাকে।

রোগ প্রতিকারে

১. পক্ষাঘাতে: পঙ্গু, কিন্তু সেই অঙ্গের স্পর্শশক্তি চলে যায়নি, এক্ষেত্রে এই প্রসারণী তাকে সঞ্জীবিত করতে পারে; তবে যুগপৎ অভ্যন্তর ও বাহ্য প্রয়োগ করে যেতে হবে।

২. শিরার সঙ্কোচন: হাতে বা পায়ের শিরার সঙ্কোচন আরম্ভ হয়েছে, সেক্ষেত্রে গাঁদাল পাতা বেটে, তিল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে গায়ে মাখার উপদেশ দেওয়া আছে। এটা চারক আমলের ব্যবস্থা।

৩. মূত্র কৃচ্ছতায়: গ্রন্থিস্ফীতি নেই। অথচ প্রস্রাব আটকায়, সেক্ষেত্রে গাঁদাল পাতার রসে ৩ থেকে ৪ চা চামচ আধ পোয়া আন্দাজ কাঁচা দুধ মিশিয়ে কয়েকদিন খেলে এ দোষটা সেরে যাবে।

৪. বাতরোগ: হর গৌরী মিলনের মত গাঁদাল ও এরন্ড তেল (Castor oil) । এই গাঁদালের রসে এরন্ডতেল তেল মিশিয়ে অতি প্রত্যুষে খেলে, আর তার সঙ্গে পথ্যাশী হলে বাত রোগ পালাবেই।  ৫.আমবাত: (Rheumatic affections) গাঁদালের পাতার রসের সাথে এক কোয়া রসুন চিবিয়ে খেলে ২ থেকে ৪ দিনের মধ্যেই আমবাতের যন্ত্রণা লাঘব হবে।

আরো পড়ুন:  ইশ্বরমূল বা ঈশ্বরশূল বা রুদ্রজটা দক্ষিণ এশিয়ায় জন্মানো ঔষধি লতা

৬. আমাশায়: গাঁদাল পাতার রস ২ থেকে ৪ চামচ একটু গরম করে ৯ থেকে ১০ ফোঁটা মধু মিশিয়ে খেলে থোকা থোকা আম পড়াটা কমে।

৭. আমাজীর্ণ: গন্ধভাদালি বা গাঁদাল পাতার ঝোল দুই থেকে এক টুকরো কাঁচাকলা দিয়ে রান্না করে খেলে ও দোষটা চলে যায়। চোর তাড়িয়ে ডাকাত পোষার মত এখানে একটা কথা জানিয়ে রাখি; অনেক ক্ষেত্রে দেখেছি গাঁদাল পাতা বাটা দিয়ে ঝোল খেলে কোষ্ঠ কাঠিন্য এসে যায়, সেখানে থানকুনী থুলকুড়ির (Centella asiatica) পাতার সঙ্গে ২ থেকে ৩টি গাঁদাল পাতা ঝোল করে খেলে ও অসুবিধেটা আর হয় না; অবশ্য সব ক্ষেত্রে এটা হয় না।

৮. অর্শে: যে অর্শে রক্ত পড়ে অথবা শুধু ফোলে কিন্তু রক্ত পড়ে না, সেক্ষেত্রে গাঁদাল পাতার রস ২ চামচ ৩ গ্রাম আন্দাজ কাঁচা হলুদ বাটার সঙ্গে মিশিয়ে খেলে ২ থেকে ১ দিনের মধ্যেই যন্ত্রণাটা কমে যায় এবং নিয়মিত অভ্যাস করলে কয়েক মাসের মধ্যেই অর্শের বলি মিলিয়ে যায়। তবে প্রয়োজন হলে কোষ্ঠ পরিষ্কারের জন্য পাকা পেয়ারা সিদ্ধ বা আপেল সিদ্ধের সঙ্গে ১ চামচ ঈসবগুলের ভূষি মিশিয়ে খাওয়া ভাল। অবশ্য সেটা সম্ভব হলে; নইলে রাতে শোয়ার আগে শুধু ঐ ভূষি জল দিয়ে খেলেও হবে।

৯. শুকনা মল: যাঁদের মল প্রায় শুকনো হয়ে থাকে এবং পেটটা কাঁপে, তাঁরা যদি গাঁদাল পাতার রস সকালে সামান্য লবণের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। তাহলে অচিরেই ঐ দুটা দোষই কমে যাবে।

১০. শুক্রদোষে: তারল্য এসেছে এবং পরিমাণেও কম ক্ষরণ হয়; পরিণতিতে এলো ‘অসমাপিকা ক্রিয়া’, সেক্ষেত্রে গাঁদাল পাতার রস ২ চামচ একটি ঘন গরম দুধের সঙ্গে খাওয়ার অভ্যাস করতে উপদেশ দিতেন প্রাচীন বৈদ্য গোষ্ঠী, তবে প্রথমেই ২ চামচ না খেয়ে ১ চামচ থেকে আরম্ভ করাই ভাল।

আরো পড়ুন:  কালকেয়া বা কেলেওকড়া উদ্ভিদের সাতটি ভেষজ গুণাগুণ

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য, চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ২২৯-২৩৩।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Forest and Kim Starr

Leave a Comment

error: Content is protected !!