কাঁকরোল বা কাকরোল বা গোলকাক এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া অঞ্চলের জনপ্রিয় সবজি

কাকরোল বা কাঁকরোল  বা দেশি কাঁকরোল বা গোলকাক (বৈজ্ঞানিক নাম: Momordica cochinchinensis) হচ্ছে কিউকারবিটাসি (শসা লাউ) পরিবারের মমরডিকা গণের একটি বর্ষজীবী আরোহী বীরুৎ।

বৈজ্ঞানিক নাম: Momordica cochinchinensis (Lour.) Spreng., Syst. Veg. 3: 14 (1826). সমনাম: Muricia cochinchinensis Lour. (1790). ইংরেজি নাম: Sweet Gourd, Giant Spine Gourd, Spiny Bitter Cucumber. স্থানীয় নাম: কাকরোল, কাঁকরোল, গোলকাক। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য: Plantae – Plants শ্রেণী: Eudicots উপশ্রেণি: Rosids বর্গ: Cucurbitales পরিবার: Cucurbitaceae উপপরিবার: Cucurbitoideae গণ: Momordica প্রজাতি: Momordica cochinchinensis

বিবরণ: কাকরোল বা কাঁকরোল  বা দেশি কাঁকরোল বা গোলকাক (বৈজ্ঞানিক নাম: Momordica cochinchinensis) হচ্ছে কিউকারবিটাসি (শসা লাউ) পরিবারের মমরডিকা গণের একটি বর্ষজীবী আরোহী বীরুৎ। এদের মূল কন্দাল। কান্ড দৃঢ়, কোণাকার মসৃণ। আকর্ষ দৃঢ়, সরল। পত্র প্রশস্ত অর্ধগোলাকার, ১২-১৮ x ১২-১৮ সেমি, ৩ খন্ডে বিভক্ত (কদাচিৎ ৫ খন্ডে বিভক্ত) মূলীয় অংশ খাতাগ্র, গ্রন্থিযুক্ত, খন্ড ডিম্বাকার বা দীর্ঘায়ত, ভল্লাকার অপসারী অখন্ড বা কদাচিৎ তরঙ্গিত-দন্ডযুক্ত, বৃন্ত ৫-১০ সেমি লম্বা, দৃঢ়, ২-৫ গ্রন্থিযুক্ত। উদ্ভিদ ভিন্নবাসী পুংপুস্প: মঞ্জরীদন্ড দৃঢ়, সহপত্রী, ৬-১৫ সেমি লম্বা, মঞ্জরীপত্র ৩.৯-৩.৫ x ৪-৫ সেমি, অবৃন্ত, ফণাকৃত, গোলাকৃতি-বৃক্কাকার, খাঁজযুক্ত, মুলীয় অংশ সামান্য খাতাগ্র, উপরের পৃষ্ঠ অতিরোমশ, নিচে অমৃসণ, বৃতি খন্ড ১৪-১৬ x ৬-৭ মিমি, সরু, সূক্ষাগ্র, প্রায় অমৃসণ, দলমন্ডল সাদাটে-হলুদ খন্ড ৫-৬ X ১.৫-২.৫ সেমি, ডিম্বাকার-দীর্ঘায়ত, পুংকেশর ৩টি, পুংদন্ড পুরু, কালো ও সাদা দাগ যুক্ত, চকচকে, চাকতি গ্রন্থিযুক্ত, ২টি মধুগ্রন্থি ঢাকনাবৃত। স্ত্রীপুষ্প: মঞ্জরীদন্ড ৫-১৫ সেমি লম্বা, সহপত্রী, রোমশ, বৃতি ও দলমন্ডল পুংপুষ্পের বৃতি ও দলমন্ডলের অনুরূপ, গর্ভাশয় ৩টি আমরা বিশিষ্ট, গর্ভদন্ড সরু, গর্ভমুন্ড ৩টি। ফল ১০-১৫ সেমি লম্বা, লাল, রসালো, ডিম্বাকার, সূক্ষ্মাগ্র, কন্টক যুক্ত। বীজ ২৫-২৮ x ১৯-২৭ মিমি, ৫-৬ মিমি পুরু, অসংখ্য কারুকার্য কৃত, তরঙ্গিত। ফুল ও ফল ধারণ ঘটে জুলাই থেকে নভেম্বর মাসে।

আরো পড়ুন:  কাঁকুড় বা কাঁকড়ি খাওয়ার উপকারিতা ও ছয়টি ভেষজ গুণাগুণ

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২৮ (Sen and Datta, 1975).

চাষাবাদ ও আবাসস্থল: অরণ্য ও ঝোপ এবং উষ্ণ আর্দ্র আবহাওয়া যুক্ত উর্বর সুনিষ্কাশিত দো-আঁশ মাটি যার PH নিরপেক্ষ। বীজ ও কন্দাল মূলে বংশ বিস্তার ঘটে। বাংলাদেশের সর্বত্র চাষাবাদ হয়।

বিস্তৃতি: অস্ট্রেলিয়া, চীন, ফরমোসা, ভারত, বাংলাদেশ, ইন্দোমালয়, মালয়েশিয়া মায়ানমার ও ফিলিপাইনে আদিনিবাস।

কাকরোলের অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

কাঁকরোল সম্পূর্ণ উদ্ভিদটিই পাকস্থলীর পক্ষে উপকারী, এটি উদ্দীপক এবং কাশি উপসমকারী। বীজ বিরেচক এবং ক্ষত, যন্ত্রণাপূর্ণ স্থান নিরাময়সহ যকৃৎ ও প্লীহার প্রতিবন্ধক সৃষ্টিতে বাধা দানকারী, ফল ও পাতা বাহ্যিকরূপে কটিবাত ও ঘায়ে প্রলেপ দেয়া হয়। লাওস, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় বাতের রোগে মূল ব্যবহার প্রচলিত। ফোড়া মিলাইবার জন্য তারা বীজ ব্যবহার করে।

অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) কাঁকরোল প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে কাঁকরোল সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে শীঘ্র সংরক্ষণের পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন নেই।

তথ্যসূত্র:

১. এম অলিউর রহমান, (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩২৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

Leave a Comment

error: Content is protected !!