আলকুশি বা বিলাই খামচি গাছের ঔষধি গুণাগুণ
পরিচয়: সাধারণত বর্ষজীবী লতা হলেও কখনও কখনও বহুদিন বেঁচে থাকতে দেখা যায়। লতা ও পাতা অনেকটা সিম গাছের মতো লতানো হয়। যদিও পাতা ৮ থেকে ১২ সেন্টিমিটার হয় এবং সেটা মসৃণ ও লোম দ্বারা ঢাকা থাকে।[১] কিন্তু পাতার আকৃতি ও বিন্যাস আমাদের দেশে প্রচলিত শাক আলুর গাছের পাতার মতো, সেইরকম একই বৃন্তে ৩টি পাতা, লতা গাছে ও পাতায় সুক্ষ্ম সুক্ষ্ম রোম আছে। পুষ্পদণ্ড সবদাই অবনত থাকে, সেগুলি লম্বা ৭ থেকে ৮ ইঞ্চি হয়। এর ফলের রং গাঢ় বেগুনি বর্ণের। পুষ্পদন্ডে গুচ্ছবদ্ধ শুঁটি হয়, সেগুলি লম্বা হয় প্রায় ৫ থেকে ৬ ইঞ্চি, শুঁটির গায়ের লোমগুলির রং বানরের গায়ের রংয়ের মতো দেখতে।
এই ফলগুলি যখন পাকে যায়, তখন বাতাসে এই লোমগুলি উড়ে ছড়াতে থাকে, কিছুদিন বাদে ঐ শুঁটি ফল ফেটে বীজগুলি গাছের তলায় পড়ে যায়; অবশ্য এটি অযত্নে বেড়ে ওঠা এক ধরণের পরগাছা লতা। এর প্রচলিত বাংলা নাম আলকুশী, হিন্দিভাষী অঞ্চলে একে বলে কেওয়াজ বীজ আর উড়িষ্যার অঞ্চল বিশেষে একে বলে বাইডঙ্কা। গ্রামে এই ফলের গায়ের লোমগুলিকে ‘দয়ার গুড়ো’ বলে, যখন এই ফল পাকে যায় তখন ঐ গাছের তলায় গেলে কোনো রকমে শরীরে ঐ লোমা লাগলে চুলকোতে থাকে। তারপরে চাকা চাকা হয়ে ফুলে যায়।
পাশ্চাত্য উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের সমীক্ষার প্রতিবেদন হলো পৃথিবীর উষ্ণপ্রধান দেশাঞ্চলে এই গণের (genus) ২০টি প্রজাতি আছে, তার মধ্যে ভারতে ১০টি পাওয়া যায়; তবে এই আলকুশি বাংলাদেশ, ভারতের বিহার, উড়িষ্যা, নেপালের তরাই অঞ্চলে পাওয়া যায়, উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম ভারতের বনাঞ্চলে এর অভাব নেই; তবে সাধারণত এটা তিন হাজার ফুট উচ্চতার মধ্যেও দেখা যায়। ঠিক আলকুশির মতো একই রকম গাছ অথচ ফুলে যে তফাত, সেটা আমাদের মতো সাধারণের চোখে ধরা পড়ে না, তবে তার শুঁটি ফল হলেই তার পার্থক্য নজরে আসে, সেই পার্থক্যটা হলো, এই ফলগুলোর গায়ে রোম হয় না বললেই হয়, আর সেটা গায়ে লাগলেও চুলকোয় না। এটির চাষ হয় ভারতের উত্তর প্রদেশে। প্রাচীনগণের মতে চরক সংহিতায় এইটিই কাকান্ডোল নামে পরিচিত। এর বোটানিকাল নাম Mucuma utilis Wall তবে কাকান্ডোল নামে প্রচলিত গাছটির বীজ আলকুশীর বীজ বলে বিক্রি হয়ে থাকে। [২]
বিস্তৃতি: বাংলাদেশ, ভারত, নেপালসহ এশিয়ার কিছু দেশে এই লতা জন্মে থাকে।
চাষ পদ্ধতি: আলকুশি এক ধরণের লতানো পরগাছা। যত্ন ছাড়াই এটি বন জঙ্গলে জন্মে থাকে। তবে গুয়েতেমালায় কেচি নামে একধরণের সম্প্রদায়ের মানুষ এটাকে খাদ্যশস্য হিসেবে আবাদ করে থাকে। আলকুশি গাছে প্রায় সারা বছরেই ফুল ও ফল হয়।
ব্যবহার্য অংশ: ঔষধ হিসাবে ব্যবহার হয় এর মূল ও বীজ।
তথ্যসূত্রঃ
১. শেখ সাদি; উদ্ভিদকোষ, দিব্যপ্রকাশ, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০০৮, পৃষ্ঠা, ৫২।
২. আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রচার্য, চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ২, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ২১৯।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।