বিশল্যকরণী লতা (বৈজ্ঞানিক নাম- Polygonum recumbens) একটি বহু শাখা-প্রশাখাবিশিষ্ট সরু লোমযুক্ত উদ্ভিদ। বিশল্যকরণী মাটিতে লতিয়ে অনেকটা দূর পর্যন্ত যায়। পাতা খুব ঘন ঘন থাকে। আকারে ছোট এবং ডিমের মতো কিছুটা গোলাকার। পাতার আগার দিকটা মোটা অর্থাৎ ভোতা বলে মনে হয়। বীজকোষের মধ্যে অনেকগুলো বীজ একসাথে থাকে। বীজের রং কালো, গোডা দিকটা অপেক্ষাকৃত চওড়া হয়।
বিভিন্ন অসুখে ব্যবহার:
ফোঁড়ার অস্ত্রোপচারে: যদি কোন কারণে ফোঁড়া না পাকে এবং ফটাতে না চায় । তখন বাধ্য হয়ে অস্ত্রোপচার করে ফেঁড়ার মধ্যে জমে থাকা পুঁজ ও রক্ত বের করে দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের তিন থেকে চার ঘণ্টা আগে বিশল্যকরণীর কচি এবং টাটকা পাতা গাছ থেকে সংগ্রহ করে সেগুলো সামান্য পানি দিয়ে বেটে ফোঁড়ার ওপর একটু পুরু করে লাগিয়ে দিতে হবে। ফলে অস্ত্রোপচার করলে বেশি রক্তপাত হয় না। ফোড়াও খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়।
রক্তবমি হলে: পেটে ক্ষতের জন্যে রক্তবমি, বুকের দোষের জন্যে বমির সাথে অথবা কাশির বেগে রক্ত পড়া, এছাড়াও অতিরিক্ত রক্তপিত্তে রক্তবমি করলে বিশল্যকরণীর শিকড় দুই গ্রাম, পাতা আট থেকে দশটি নিয়ে একসাথে বেটে সামান্য ঠাণ্ডা পানি মিশিয়ে খাওয়ালে রক্তবমি অবশ্যই বন্ধ হয়ে যাবে ।
রক্ত আমাশয়ে: বিশল্যকরণী গাছের কচি ডাল ও পাতা একসাথে বেটে তার রস ১৫ মি.লি, আধা কাপ গরুর দুধের দই-এর ঘোলে মিশিয়ে খেলে নিশ্চিত উপকার হয়। মলের সাথে খুব বেশি রক্ত এবং বেশি পায়খানা হলে সারা দিনে একই পরিমাণে ওষুধ তিন থেকে চার ঘণ্টা অন্তর দিনে তিনবার দিতে হবে। যদি কম পায়খানা হয়, তবে ঐ পরিমাণ রস ঘোলে মিশিয়ে দিনে দু’বার খাওয়ালেই যথেষ্ট। দিন আষ্টেক নিয়ম করে একই পরিমাণ সারাদিনে দু’বার খাওয়াতে হবে।
উচ্চ রক্তচাপে: বিজ্ঞানীরা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর স্থির সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, বিশল্যকরণীর মধ্যে ‘ভোগেলিন’ নামে এক ধরনের জৈব যৌগ রয়েছে। এটা যে কোনো ধরনের উচ্চ রক্তচাপ অর্থাৎ ‘হাই-ব্লাড প্রেসার’-কে কমিয়ে স্বাভাবিক করতে পারে। কাজেই বিশল্যকরণী গাছের মূল, পাতা অথবা টাটকা কচি ডাল তুলে এনে সামান্য পানি দিয়ে বেটে তার রস দশ মি.লি. পরিমাণ প্রতিদিন সকালে খালিপেটে একবার করে খেলে রক্তের চাপ অবশ্যই স্বাভাবিক হবে। ৪ থেকে ৫ দিন ওষুধ খাওয়ার পর রক্তের চাপটা অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখা দরকার। স্বাভাবিক হলে ওষুধ বন্ধ করে দিতে হবে।
বিষাক্ত ঘায়ে: বিশল্যকরণী পাতার রস সামান্য গরম পানিতে মিশিয়ে তার সাহায্যে দিনে একবার ঘা ধুয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে বিশল্যকরণী পাতা এবং মূল ভালো করে বেটে ঘায়ের ওপর লাগিয়ে ফালি কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখতে হবে। চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে ঘা ভালো হয়ে যাবে।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্র:
১. আঃ খালেক মোল্লা সম্পাদিত;লোকমান হেকিমের কবিরাজী চিকিৎসা; মণিহার বুক ডিপো, ঢাকা, অক্টোবর ২০০৯; পৃষ্ঠা ১১৭-১১৮।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।