মনোযোগ বা মনোদৃষ্টি কাকে বলে?

একটি মুহূর্তে কোনো কিছুর উপর মন কিংবা মস্তিষ্কের ক্রিয়াশীল হওয়াকে মনোযোগ বা মনোদৃষ্টি (ইংরেজি: Attention) বলা হয়। মনোযোগ দুরকমের হতে পারে ইচ্ছাকৃত মনোযোগ এবং অনিচ্ছাকৃত মনোযোগ।

ইচ্ছাকৃত মনোযোগের ক্ষেত্রে মন আন্তরিক কোনো উদ্দীপক বা স্টিমুলাসের কারণে একটি বিষয়ের উপর দৃষ্টি নিবেশ করতে পারে। অর্থ্যাৎ একটি বিষয় সচেতন মনের বিবেচনার সীমার মধ্যে আসতে পারে। অনিচ্ছাকৃত মনোযোগের ক্ষেত্রে কোনো উদ্দীপক তার অস্বাভাবিকতা বা বৈপরিত্য কিংবা নতুনত্ব দ্বারা ইন্দ্রীয়গুলির উপর এরূপ আঘাত হানতে পারে-যাতে মনের দৃষ্টি উদ্দীপকের উপর পড়তে বাধ্য হয়। যেমন, সাধারণভাবে যে-শব্দের মধ্যে আমি কোনো একটা মহূর্তে অবস্থান করছি, সে মহূর্তে একটি বিকট শব্দ হলে শব্দের অস্বাভাবিকতাই আমার মনকে আকৃষ্ট করবে। বলা চলে, মন বাধ্যতামূলক এই উদ্দীপকের দিকে আকৃষ্ট হবে।

অসংখ্য উদ্দীপক দ্বারা আমরা সর্বদা পরিবেষ্টিত। মনুষ্যেতর প্রাণী উদ্দীপক মাত্রতেই ক্রিয়াশীল হয়ে উঠে। কেবলমাত্র মানুষই নিজের স্বার্থের বিবেচনায় অসংখ্য উদ্দীপকের কোনো একটিকে বাছাই করে তাকে তার উপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। যখন আমার উদ্দেশ্য হয় আমার গ্রন্থের একটি কঠিন দার্শনিক কথার অর্থ উদ্ধার করা, তখন শব্দ তরঙ্গের যথেষ্ট পরিমাণ হ্রাস-বৃদ্ধিও আমার মনকে আকৃষ্ট না করতে পারে।

ইচ্ছানুযায়ী মনোযোগ দানের ক্ষমতাকেই মনোবিজ্ঞানে ইচ্ছাকৃত মনোযোগ বলা হয়। মানুষের মন আদিতে অন্যান্য প্রাণীর মতোই উদ্দীপক মাত্ররেই দাস ছিল। যে-কোনো উদ্দীপক যখন তখন তার মনকে আকৃষ্ট করতে পারত। শত শত বছরের শ্রমের অভিজ্ঞতা এবং জীবনের তাগিদে উদ্দীপকের দাস হওয়ার চেয়ে উদ্দীপককে দাস করার ইচ্ছায় মানুষ ইচ্ছামূলক মনোযোগের ক্ষমতা নিজের মধ্যে অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। মানুষের মন এবং মস্তিষ্কের ক্ষমতা আজ যেমন, তার শৈশবেও তেমন ছিল, এমন কথা ভাবা ঠিক নয়।

তথ্যসূত্র:

১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; ৫ম মুদ্রণ জানুয়ারি, ২০১২; পৃষ্ঠা ৬৮-৬৯।

Leave a Comment

error: Content is protected !!