বেলজিয়াম কৃষি ও ভারী শিল্পোন্নত ইউরোপীয় দেশ

নেদারল্যান্ডসের মতো বেলজিয়ম মধ্য ইউরোপের আন্তর্জাতিক পথসন্ধির সুবিধাজনক অবস্থানে অবস্থিত। বেলজিয়াম আত্যন্তিক শিল্পোন্নত দেশ। তার শিল্প কৃষির তুলনায় অনেক বেশি উন্নত। এটি ভারী শিল্পের ক্ষেত্রেই বিশেষ প্রযোজ্য হলেও তার হালকা ও খাদ্য শিল্পগুলিও যথেষ্টই উন্নত। বেলজিয়ামের অর্থনীতি বৈদেশিক বাজার ও বিদেশের কাঁচামালের উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। বেলজিয়ামের প্রায় সকল শিল্পই আমদানিকৃত কাঁচামাল ব্যবহার করে ও সে তৈরী পণ্যের ৮০ শতাংশই বিদেশে পাঠায়।

মোট জাতীয় আয়ের ৪০ শতাংশের বেশি অর্জনকারী দেশের শিল্পের মধ্যে ধাতুশিল্প বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী। বেলজিয়াম বার্ষিক ৯০ লক্ষ টন লৌহপিণ্ড ও ১৬ কোটি টন পর্যন্ত ইস্পাত উৎপাদন করে। সে পশ্চিম ইউরোপের অন্যতম প্রধান তামা, দস্তা, কোবাল্ট ও টিন উৎপাদক দেশ। বেলজিয়াম উন্নয়নশীল দেশ থেকে ইউরেনিয়াম, রেডিয়াম ও অন্যান্য সব বিরল ধাতু আমদানি করে এবং এগুলিকে সমদ্ধতর করে বিশ্ববাজারে পাঠায়।

মেশিন-নির্মাণ শিল্পের মধ্যে এখানে বিদ্যুৎ-ইঞ্জিনিয়ারিং এবং খনি, ধাতু ও পরিবহণ শিল্পের সাজসরঞ্জাম নির্মাণ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। রাসায়নিক শিল্পের মধ্যে আকরিক সার তৈরিই অগ্রগণ্য। তার তৈল রাসায়নিক ও ঔষধ শিল্পগুলি আমদানিকৃত কাঁচামাল ব্যবহার করে। বেলজিয়াম হীরা-কাটা শিল্পে বিশেষীকৃত এবং এক্ষেত্রে পৃথিবীর অন্যতম অগ্রগণ্য দেশ।

রাজধানী ব্রাসেলস, (জনসংখ্যা ১০ লক্ষাধিক) একটি বৃহৎ শহর এবং দেশের অন্যতম প্রধান মেশিন-নির্মাণ, বাণিজ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র। এণ্টোয়াপ দেশের প্রধান বন্দর, একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবহণ-ঘাঁটি ও শিপকেন্দ্র। লিয়েজ শহরকে কেন্দ্র করেই দেশের কয়লাওল, লৌহ ও ইস্পাত শিল্প এবং ভারী ইঞ্জিনিয়রিং কারখানাগুলি অবস্থিত।

দেশের প্রয়োজনীয় গোমাংস উৎপাদন ও দুগ্ধশিল্পের লক্ষ্যেই বেলজিয়ামের কৃষি বিশেষীকৃত। অভ্যন্তরীণ শস্য চাহিদার অর্ধেকই আমদানিকৃত। দেশে উৎপন্ন শিল্পলগ্ন ফসলের মধ্যে আছে চিনি-বীট, তিসি, হপ ও তামাকই প্রধান।

রাস্তার ব্যাপক জালবিস্তারের ক্ষেত্রে বেলজিয়ম পৃথিবীতে তুলনাহীন। তার অভ্যন্তরীণ জলপথগুলি দেশকে সাগরের সঙ্গে যুক্ত করেছে এবং সামুদ্রিক পরিবহণের কল্যাণে তার বৈদেশিক অর্থনৈতিক সম্পর্কগুলি নিশ্চিত হয়েছে।

আরো পড়ুন:  ডাইকাস্ট হচ্ছে প্রাচীন এথেন্স নগর-রাষ্ট্রের একটি রাষ্ট্রীয় পদ

তথ্যসূত্রঃ

১. কনস্তানতিন স্পিদচেঙ্কো, অনুবাদ: দ্বিজেন শর্মা: বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভূগোল, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, বাংলা অনুবাদ ১৯৮২, পৃ: ১৯৯-২০০।

Leave a Comment

error: Content is protected !!