মাতামুহুরী নদী বাংলাদেশ ও আরাকানের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী

মাতামুহুরী নদী: মাতামুহুরী নদী (ইংরেজি: Matamuhuri River) বাংলাদেশ ও মায়ানমারের আরাকানের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এটি বাংলাদেশের বান্দরবন ও কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত একটি নদী। নদীটির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৭ কিলোমিটার, বাংলাদেশ অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪৬ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১৫৪ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা পাউবো কর্তৃক মাতামুহুরী নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর পূর্ব পাহাড়ি অঞ্চলের নদী নং ১৩।[১] মারমা ভাষায় এই নদীটির নাম মামুরি। বঙ্গোপসাগরে মাতামুহুরীর মোহনায় যে বদ্বীপের সৃষ্টি হয়েছে তা ভোলাখাল থেকে খুটাখালি পর্যন্ত বিস্তৃত।

প্রবাহ: মাতামুহুরী নদীটি বান্দরবন জেলার আলীকদম উপজেলার বাংলাদেশ এবং মায়ানমার সীমান্তের পাহাড়ি এলাকা তথা লুসাই পাহাড় হতে উৎপত্তি লাভ করেছে। অতঃপর উৎপত্তিস্থান হতে উত্তর পশ্চিম দিকে আলীকদম ও লামা উপজেলার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়ে পশ্চিম দিকে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলা অভিমুখে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। বহুল পরিচিত মুহুরী পরিবারের নামানুসারে নদীটির নামকরণ করা হয়েছে মাতামুহুরী। বামু খাল, পোপা অথবা বোপা ছড়া, লামা ছড়া, ইয়াংচি খাল এ নদীর অন্যতম উপনদী। বামু খাল লামা উপজেলার সারিয়া ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকা হতে উৎপত্তি লাভ করে লামাবাজারের কাছে মাতামুহুরী নদীতে পতিত হয়েছে। আলীকদম উপজেলার চোখং ইউনিয়নের মানগু হতে লামা ছড়া এবং লামা ইউনিয়নের নাখং হতে পোপা/বোপা ছড়া উৎপত্তি লাভ করে দরদরিতে এসে মিলিত হয়েছে এবং এই যৌথ ধারা মাতামুহুরী নদীতে নিপতিত হয়েছে। নদীটির ভাটির অঞ্চল জোয়ারভাটার প্রভাবে প্রভাবিত। সমুদ্রের কাছাকাছি কিছু এলাকায় এ নদীর তীরবর্তী ভূমিতে লবণ চাষ করা হয়। এ কারণে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি সংগ্রহের প্রয়োজনে এ নদীর সঙ্গে বেশ কিছু কৃত্রিম খাল সংযুক্ত করা হয়েছে।

অন্যান্য তথ্য: মাতামুহুরী নদী বাংলাদেশের আলীকদম, লামা, চকরিয়া, মহেশখালী ও পেকুয়া উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীটি জোয়ারভাটা প্রভাবিত এবং বন্যাপ্রবণ। মাতামুহুরী নদীর অববাহিকার প্রকল্প হচ্ছে পোল্ডার ৬৪/২-বি, মাতামুহুরী সেচ প্রকল্প। নদীটির তীরে চকরিয়া পৌরসভা, লামা পৌরসভা, ঘানাশ্যামবাজার, আলিকদম বাজার ও মানিকপুর বাজার অবস্থিত। নদীটিতে বাংলাদেশে ব্যারাজ বা রেগুলেটর হচ্ছে মাতামুহুরী রাবার ড্যাম এবং বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ আছে বাঁতীরে ১৭.৫০ এবং ডানতীরে ৩৩ কিলোমিটার। 

আরো পড়ুন:  নাফ নদী বাংলাদেশ ও আরাকানের আন্তঃসীমান্ত নদী

তথ্যসূত্র:

১. মানিক, মোহাম্মদ রাজ্জাক, বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি, কথাপ্রকাশ, ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ঢাকা, পৃষ্ঠা ২৮৯ -২৯০।

Leave a Comment

error: Content is protected !!