গণসংহতি আন্দোলন সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালু করার দাবি জানিয়েছে। ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বৃহস্পতিবার দুপুরে গণসংহতি আন্দোলনের আয়োজনে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে রাজনৈতিক সংকট সংঘাত উত্তরণে জাতীয় সনদ প্রস্তাব নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করা হয়।
বিদ্যমান পরিস্থিতি ও জাতীয় সংকট থেকে উত্তরণে দিকনির্দেশনা সম্বলিত ‘সংঘাত-সংকট সমাধানে নতুন জাতীয় সনদ’ ঘোষণা করেন গণসংহতি আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল। এতে বলা হয়, ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি করতে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। এ ছাড়া সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালু করলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। নির্বাচন কমিশনসহ সব স্বাধীন কমিশনগুলোকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। এসব কমিশনের আস্থা তৈরি করতে সময় লাগবে, তাই আগামী তিনটি নির্বাচনে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণসংহতি আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল। এ সময় সংগঠনের অন্যান্য নেতা উপস্থিত ছিলেন।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে জোনায়েদ সাকি, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী, বলেছেন, ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে রেখে নির্বাচনকালীন ঐক্যমতের সরকার হবে না। কেননা, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই আস্থার জায়গাগুলো নেই। নির্বাচনকালীন সময়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতায় রাখলে সেটা দলীয় সরকারে পরিণত হবে। কেননা সংবিধান অনুসারে সরকারের সব ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে। তাই নির্বাচন সামনে রেখে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে।’
জোনায়েদ সাকি আরো বলেন, ‘২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হওয়ার কথা ছিল বিচারপতি কে এম হাসানের। তার ব্যাপারে সেই সময় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে তৎকালীন বিএনপি সরকার তাকেই প্রধান উপদেষ্টা করার জন্য বিচারপতিদের বয়সসীমা বাড়ানোর ফলে তুমুল অনাস্থার জায়গা তৈরি হয়েছিল। সেই বিচারপতির রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে এমন অনুমানের ভিত্তিতে যে অনাস্থার রাজনীতি হয়েছিল, তার পরিণাম সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসেছিল।’
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ‘একটি দলীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কি ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সেই আস্থা তৈরি করা অসম্ভব। এই সমস্যা সমাধানে আমাদের সাংবিধানিক সংস্কার করতে হবে। কারণ, নির্বাচনকালীন সরকার অথবা ঐক্যমতের সরকার যে নামেরই সরকার হোক না কেন, আসন্ন নির্বাচনের পর আবার পরবর্তী নির্বাচনের ক্ষেত্রে আবার সংকটের জায়গা তৈরি হবে। তাই আমরা অন্তত তিনটি নির্বাচনে এই সরকার ব্যবস্থা পরিচালনার কথা বলেছি।’
গণসংহতি আন্দোলন প্রত্যেকটি ইস্যুতে জনগণের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করেছে উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমরা মনে করি বাংলাদেশে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও যে সংকট, সেই জায়গায় একটি ন্যায়সঙ্গত উদ্যোগ কিংবা বক্তব্য থাকা দরকার। সেটা সংখ্যা কিংবা দলের আকৃতি দিয়ে নির্ভর হয় না। আমরা তাই ইতোমধ্যে আমাদের এই দাবিগুলো বাম গণতান্ত্রিক জোটে উত্থাপন করেছি। আমরা আশা করি এই দাবিগুলো নিয়ে জোটগতভাবেই উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’
জামায়াতে ইসলামী ছাড়া সক্রিয় অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি জামায়াতে ইসলামী ব্যতীত নিবন্ধিত অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটা আলাপ- আলোচনা করা দরকার। এখানে রাজনৈতিক চলমান প্রক্রিয়াটি কীভাবে অগ্রসর হবে, কীভাবে চলবে, এটা নিয়ে কিন্তু একটা বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। এমন একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দেশ যাচ্ছে যেখানে একটা সংঘাত ছাড়া আর কোনো পথ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এইরূপ বিরূপ পরিস্থিতি থেকে একটি গণতান্ত্রিক পথে উত্তরিত হতে চাইলে রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে পরিচালিত হবে, তার কতগুলো ন্যূনতম শর্তের জায়গা আছে। ক্ষমতা যদি একচেটিয়া হয় তাহলে সেই জিনিসটা কখনোই অর্জন হতে পারে না। ক্ষমতা একচেটিয়া হলে, ক্ষমতায় কোনো জবাবদিহির জায়গা না থাকলে বাংলাদেশের রাজনীতি বারবার সংকটের জায়গায় পড়বে। কাজেই আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এমন একটি ঐক্যমতে আসা, যেখানে আমরা ক্ষমতার একটি ভারসাম্য এবং জবাবদিহিমূলক একটা ব্যবস্থা তৈরি করবো।’
নির্বাচন কমিশনের সংস্কারের বিষয় তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সংস্কার করা এই সরকারের পক্ষে কঠিন কিছু না, যেহেতু তাদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। তারা যদি সম্মত হয় তাহলে এই সাংবিধানিক সংস্কারগুলো করতে পারেন। নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো যদি ঐক্যমত তৈরি করতে পারে, তাহলে তারও সাংবিধানিক বিধান তারা তৈরি করতে পারেন।’