সাঁওতালি সুর বাংলা গানকে হাজার বছর ধরে প্রভাবিত করেছে। বাংলা ভাষায় অনেক গান লেখা হয়েছে সাঁওতালি সুরে। বাংলার উত্তরে যেমন সাঁওতালদের বাস, তেমনি সাঁওতাল পরগণার আশপাশে তাঁদের সংখ্যাধিক্যের বসতি হবার কারণে বাঙালির সাথে সাঁওতালদের মনের সংযোগ দীর্ঘদিনের। লাল পাহাড়ির দেশ বা বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া তো এখনো সাঁওতাল অধ্যুষিত, ফলে সাঁওতালদের সাথে বাঙালির যোগ কয়েকশত বছরের। রাঢ় বঙ্গের কৃষকদের সাথে সাঁওতালদের সংযোগ ঐতিহাসিক কাল ধরেই। সংস্কৃতির দিক দিয়ে সমৃদ্ধ সাঁওতালরা বাঙালি সংস্কৃতিকেও তাই প্রভাবিত করে চলেছে দীর্ঘকাল ধরে। অনেক বাংলা গানের সুর এসেছে সাঁওতালি সুর থেকে। সেখান থেকে আমার পছন্দের গানের একটি তালিকা দেয়া হলো। আপনারা আমাকে সাহায্য করে গানের তালিকাটিকে আরো সমৃদ্ধ করলে অনেক খুশি হবো।
০১. কালো জলে কুচলা তলে, ডুবলো সনাতন; আজ সারা না কাল সারা না পাই যে দরশন,
০২. ফুল গাছটি লাগইছিলাম ধুলা মাটি দিয়ারে, সেফুলো ফুটিয়া রইলো অগম দইরার মাজারে,
০৩. একদিন কার হলুদ বাঁটো তিন দিনকার বাসি, চৌদ্দলং চৌদ্দলং ফুরায় গেল হে,
০৪. রাঙামাটির পথে লো, মাদল বাজে বাজে বাঁশের বাঁশী,
০৫. হলুদ গাঁদার ফুল, রাঙা পলাশ ফুল, এনে দে এনে দে নইলে বাঁধব না বাঁধব না চুল,
০৬. চুড়ির তালে নুড়ির মালা রিনিঝিনি বাজে লো, খোঁপায় দোলে বনফুলের কুঁড়ি,
০৭. আমার দুর্যোধনে বিদায় দিব কেমনে, মাসাবধি দুর্যোধনকে পুঁজেছি যতনে, দুর্যোধনে,
০৮. আগা ডালে বোসো কোকিল মাঝ ডালে বাসারে, ভাঙিল বৃক্ষের ডাল জীবনে নাই আশারে,
০৯. দালান দিলি মহল দিলি বাড়ির নিচে পুষ্করিণী, একখানা পানসী দিতে পারনি,
১০. কৃষ্ণ কালার কী রূপ রাধা পাগল হলো, কালো রূপ কী দেখেসে প্রেমেতে মজিল,
১১. আমার ঘরকে ভাদু এলেন কোত্থ্যাকে বসাবো, পিয়াল গাছের তলায় আসন সাজাবো,
১২. চাঁদ উঠেছে ঐ, ফুল ফুটেছে ঐ, সোনার মেয়ে নাচো দেখি মাথার চুল খুলে,
১৩. ইচ্ছেমতোন রোদ জ্বলে যায়, ইচ্ছেমতোন জলের কণা মেঘ, … ইচ্ছেমতোন ঘুরি
১৪. তু রাঙামাটির দেশে যা, লাল পাহাড়ির দেশে যা, হেথাক তোকে মানাইছে নারে,
১৫. ঝিঙ্গাফুলি সাজেতে পেয়ে পথের মাঝেতে, তু কেনে কাদা দিলি সাদা কাপড়ে,
১৬. আজ গানের তালে হৃদয় দোলে মিঠে বাতাস যাইরে বয়, হলুদ ধানের দোদুল দোলায়,
১৭. বিহুরে লগন মধুরে লগন, আকাশে বাতাসে লাগিল রে, চম্পা ফুটিছে চামেলি ফুটিছে,
১৮. দোল দোল দুলুনি, রাঙা মাথার চিরনি, এনে দেব হাট থেকে মান তুমি করোনা,
১৯. ও মনরে.. , সাঁওতাল করেছে ভগবানরে, সাঁওতাল করেছে ভগবান,
২০. ইটা তুর কেমুন … ছলনা, ও মেঘের বউ চাঁদ,
২১. ময়না ছলাৎ ছলাৎ চলে রে, পেছন পানে চাইনা রে, মন ধুকপুক ধুকপুক করে রে,
২২. হুররর তাং তাং, ধনুকে জোর দেরে টান, টানা বাবা টানা, ফিরিঙ্গি দেয় হানা,
২৩. ভাদর আশ্বিন মাসে ভ্রমর বসে কাঁচা বাঁশে, … আর না থাকিও বাপের ঘরেতে, ও বধূ হে,
২৪. ফাগুনেরো মোহনায়, মন মাতানো মহুয়ায়, রঙ্গিণী বিভুর নেশা কোন আকাশে নিয়ে যায়,
২৫. আজ জীবন খুঁজে পাবি, ছুটে ছুটে আয়, মরণ ভুলে গিয়ে ছুটে ছুটে আয়,
২৬. আমি যদি তুমার হতাম…… খোঁপায় তোমার গুঁজে দিতাম শাল বনের ফুল লো,
২৭. সাইরন বাজিলো অপিসেতে লো, উঠলো মিনির মা কামে যেতে হবে, (দোহার)
২৮. ছাতা ধরো হে দেওরা, এইসান সুন্দর খোপা হামার ভিক গেলায় না
২৯. চলো চলো সহচরী যমুনায় কে ডাকে, গো দাঁড়ায় ঘাটে, শ্যামের বাঁশরী শুনিব গো দাঁড়ায় ঘাটে
৩০. পিন্দাড়ে পলাশের বন, পালাবো পালাবো মন, নেংটি ইদুরে ঢোল কাটেহে, বতরে পিরিতের ফুল ফোঁটে
৩১. ওলো তোরা টুসু লিয়ে যাস না বাঁধেলো, ঐ বাঁধেতে ভুত আছে, …
৩২. নদীর ঘাটের কাছে নৌকো বাঁধা আছে, নাইতে যখন যায় দেখিসে জলের ঢেউয়ে নাচে
৩৩. সাঝের আধার ঘিরলো যখন শাল পিয়ালের বন, তারই আভাস দিল আমায় হঠাত সমীরণ
৩৪. ফুলে ফুলে রং এলো শাল গাছে ফুল এলো আজ আমাদের সারুল, আমার গানে মাদল
৩৫. লাল মাটি সবুজ টিলা সোহাগি সে রঙ্গিলা, হেলেদুলে নেচে নেচে যায়
৩৭ ধিতাং ধিতাং ধিতাং ধ্মাধ্ম ধামসা তলে ঝিঙা ফুল কাঁকুড় ফুলে, আদাড়ে বাদাড়ে ঝিঙা ঝাঁকে বলে সিং
বিশেষ দ্রষ্টব্য: ১-৩ নং গান উত্তরা সিনেমায় ব্যবহৃত। ৪-৬ নজরুল সঙ্গীত। ৭-১২ নং গান শিল্পী কৃষ্ণকলি তার বুনোফুল এবং ১৩ নং গানটি সূর্যে বাসি বাঁধা এলবামে গেয়েছেন । বাকিগুলা বিভিন্নভাবে এখানে-ওখানে শোনা।
সাঁওতালি সুর ও নাচ দেখুন ইউটিউব থেকে
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।