পরিচিতি: হেলেঞ্চা একটি জলজ শাক। হেলেঞ্চা শাক ৩০-৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এদের কান্ডে বহু শাখা থাকে। কান্ডের প্রতিটি গাঁট থেকে শিকড় বের হয়। এর পাতা ২.৫-৭.৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। পত্রফলক বল্লমাকৃতির। পাতার কিনারা সূক্ষ্ম খাঁজকাটা। গাছের শীর্ষে শীতকালে ছোট সাদা গুচ্ছফুল ফোটে।
প্রাপ্তিস্থান: আসাম, উড়িষ্যা, বিহারে জন্মালেও বাংলাদেশের যত্রতত্র বিলে, খালে ও পুকুরে জন্মে এবং জলের সন্নিকটস্থ কিনারায় হতে দেখা যায়, তবে লবণাক্ত জলে হয় না; বাংলায় এটি সহজপ্রাপ্য। শাকটি স্বাদে তিক্ত কষায়, এর চলতি নাম হিঞ্চে বা হেলেঞ্চা, উড়িষ্যার অঞ্চলবিশেষে একে বলে হিড়ামিচি। হিন্দিতে বলে হুরহুল। এটির বোটানিক্যাল নাম Enhydra fluctuans Lour), ফ্যামিলি Compositae.
লোকায়তিক ব্যবহার
১. শরীরের ভারবোধে:— আপনি রোগা না মোটা সে কথা নয়, যেন নিজের শরীরটা নিজের নয়। এই ক্ষেত্রে হিঞ্চে বা হেলেঞ্চা শাকের রস ২ চা-চামচ একটু গরম করে সকালে ও বিকালে দুবার খেতে হয়, এর দ্বারা এই অসুবিধেটা চলে যাবে।
২. খোসা চুলকানিতে:— যাদের বর্ষা বা শীতে এই উপসর্গটি জোটে, তাঁরা ২/৩ চা-চামচ হিঞ্চে বা হেলেঞ্চা রস একটু গরম করে সকালের দিকে খাবেন, এটা থেকে রেহাই পাবেন।
৩. অপরিপাক দাস্তে:— যাকে বলা হয় ‘ভসকা’ বা পাতলা পায়খানা। এরূপ মল, তার সঙ্গে উৎকট গন্ধ থাকলে সেক্ষেত্রে হিঞ্চে বা হেলেঞ্চা রস ১ চা-চামচ গরম করে সকালে অথবা বিকালে খাওয়া ভাল। বালকদের ক্ষেত্রে ৩০ ফোঁটা। এর দ্বারা ঐ দোষটা চলে যাবে।
৪. অকারণে অগ্নিমান্দ্য:— হ্যাঁ, কারণ না থাকলে তো হবে না, কিন্তু কারণটা ধরা পড়ছে না, সেটা হ’লো বিকৃত শ্লেষ্মার ছোঁয়াচ তাতে থাকবেই, যার জন্যে পিত্ত সেখানে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না অথবা করে না। এ অসুবিধাটা দূর করতে পারে হিঞ্চে বা হেলেঞ্চার রস, খেতে হবে ১ চা-চামচ একটু গরম করে।
৫. বিস্বাদে:— জিভে একটা সর পড়ে আছে, মুখে কিছু খেতে ভাল লাগে না বা অরুচি, সব কিছুতেই অরুচি, এক্ষেত্রে ২ চা-চামচ হিঞ্চে বা হেলেঞ্চার রস গরম ক’রে কয়েক দিন খেলেই ঐ অসুবিধাটা চলে যাবে।
৬. বাতের ব্যথা:— বাত হওয়ার তো কথা নয় কিন্তু কোমরের নিচের অংশটা আড়ষ্ট, ব্যথা এবং কোনো কোনো সময় রাত্রের দিকে পায়ের পেশীতে খি’চে ধরা, এগুলি কিন্তু বিকৃত কফের ক্রিয়া; এক্ষেত্রে হিঞ্চে বা হেলেঞ্চার রস ২ চা-চামচ একটু গরম ক’রে সকালের দিকে খেতে হবে।
৭. হাত-পা জ্বালা:— এর সঙ্গে মুখেও গরম ভাপ বেরোয়, চোখেও জ্বালা করছে (অবশ্য এটা বর্ষা এবং শরৎকালেই বেশী দেখা দেয়), এক্ষেত্রে ২ চা-চামচ রস গরম না করে কাঁচা দুধ মিশিয়ে খেতে হবে। এর দ্বারা ঐ অসুবিধাগুলি চলে যাবে।
৮. খোস পাঁচড়া:— সারছে না, এমন কি কোন জায়গায় ছড়ে গেলেই ঘা হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সারতে চায় না, সেক্ষেত্রে হিঞ্চে বা হেলেঞ্চার রস ২ চা-চামচ একটু গরম করে দু’বার খেতে হবে।
৯. নিম্নাঙ্গের শোথে:— দেখা যাচ্ছে কোমর ও পা দু’টা রোজ ফুলে যায়, বিশ্রাম করলে কমে, এক্ষেত্রে কফাশ্রিত বায়ুই এর কারণ (অবশ্য হৃদরোগেও অনেক সময় পায়ে ফুলা দেখা যায়, সেক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা যাবে না)। উপরিউক্ত ক্ষেত্রে হিঞ্চে বা হেলেঞ্চা শাক বেটে পায়ে বা কোমরে প্রলেপ দিলে ওটা কমে যায়।
১০. ঘামাচিতে:— দেশ গাঁয়ে একটা কথা আছে — ‘শীতকালে জাড় কাঁটা গ্রীষ্মমকালে ঘামাচি। কোন কালে ছিলি রে তুই পরম রূপসী৷’
এই যে জাড়-কাঁটা অর্থাৎ শীতকালে ছোট-ছোট কাঁটার মত গায়ে একরকম চর্মরোগ হয়, তাকেই জাড়-কাঁটা বলে, ‘জাড়’ অর্থে শীত; এক্ষেত্রেও ঘামাচিতে হিঞ্চে বা হেলেঞ্চা বেটে গায়ে মাখলে এ দু’টি রোগ সেরে যায়।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রচার্য: ‘চিরঞ্জীব বনৌষধি‘ খন্ড ২, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৪, পৃষ্ঠা,১০-১৪।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: mukulghosh
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।