রজনীগন্ধা বাগানভিত্তিক সহজলভ্য সুগন্ধি ও ভেষজ গুণে ভরা বাণিজ্যিক ফুল

ভূমিকা:  রজনীগন্ধা (বৈজ্ঞানিক নাম: Polianthes tuberosa, ইংরেজি নাম: টিউব রোজ) Polianthes গণের একটি প্রজাতি। গণটি ভূনিম্নস্থ কন্দাল অংশ সমন্বিত বহুবর্ষজীবী বীরুৎ। নিম্নের পাতা উত্তম বৃদ্ধিপ্রাপ্ত, শীর্ষের পাতা খর্ব । পুষ্পবিন্যাস সুমিষ্ট গন্ধযুক্ত শীর্ষীয় মঞ্জরী। পুষ্পপুট ধুতুরাকার, স্থায়ী। পুংকেশর ৬ টি, অন্তর্ভূত। গর্ভাশয় ৩-প্রকোষ্ঠীয়, গর্ভমুণ্ড ৩। ফল ও বীজ কুঞ্চিত।

বৈজ্ঞানিক নাম: Polianthes tuberosa L., Sp. Pl.: 316 (1753).

সমনাম: Tuberosa amica Medik, Crinum angustifolium Houtt, Polianthes gracilis Link,  Agave uberosa (L.),  Thiede & Eggli, nom. illeg,  Agave polianthes Thiede & Eggli, nom. superfl.

ইংরেজি নাম: টিউব রোজ। স্থানীয় নাম: রজনীগন্ধা। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য: Plantae . বিভাগ: Angiosperms. বর্গ: Asparagales . পরিবার: Asparagaceae. গণ: Polianthes. প্রজাতি: Polianthes tuberosa.

বর্ণনা:

ভূনিম্নস্থ কন্দাল মৌল কান্ডযুক্ত বহুবর্ষজীবী বীরুৎ। নীচের পাতা উত্তম বৃদ্ধি প্রাপ্ত, লম্বা, সরু, পাতলা, শীর্ষস্থ পাতা খাটো, উজ্জ্বল সবুজ, মূলীয় পাতা কখনও রক্তাভ। পুষ্পবিন্যাস শীর্ষীয় সরল মঞ্জরী, লম্বা। পুষ্প সজোড়, মোমসদৃশ সাদা, সুগন্ধী, ৫-৭ সেমি লম্বা, পুষ্পনালি নিম্নাংশে বক্র, সম্প্রসারিত। পুষ্পপুট নলাকার বা চোঙ্গাকৃতি, খন্ড খাটো। পুংকেশর ৬ টি, পুষ্পপুটনালীর শীর্ষাংশে যুক্ত। গর্ভাশয় ৩-প্রকোষ্ঠীয়, শীর্ষাংশ মুক্ত, গর্ভমুণ্ড ৩, ডিম্বাকৃতি, কাস্তে আকৃতি। ফল ও বীজ ঠাসা। ফুল ও। ফল ধারণ: জুলাই-সেপ্টেম্বর।

ক্রোমোসোম সংখ্যা:

2n = ৫০, ৬০, ১২০ [২]

বংশ বিস্তার ও চাষাবাদ:

রজনীগন্ধা মূলত বাগানে লাগানো হয়। প্রায় সারা বছরই বাজারে এ ফুল পাওয়া যায়। এর চাহিদা বেশী থাকায় সারা বছরই এ ফুল চাষ করা হয়। তবে শীতকালে এটি কিছুটা কম ফোটে। রজনীগন্ধার বংশ বিস্তার কন্দাল মৌল কান্ড থেকে সহজেই বংশবদ্ধি হয়, বীজদ্বারা সামান্যই বংশ বৃদ্ধি ঘটে। কন্দ লাগালে নতুন চারা জন্মে। মার্চ ও এপ্রিল মাস কন্দ লাগানোর উপযুক্ত সময়।

ব্যবসায়িক ভিত্তিতে রজনী গন্ধার চাষের জন্য জল জমে না এমন মাঝারি উঁচু জমি নির্বাচন করতে হয়। মাটি হতে হবে দো-আঁশ এঁটেল বা বেলে মাটি। জমিতে সারাদিন রৌদ্র থাকতে হবে, ধারে কাছে বড় গাছ থাকলে কেটে ফেলতে হবে ।[৩]

বিস্তৃতি:

আদি নিবাস মেক্সিকো ও থাইল্যান্ড। বাংলাদেশের সর্বত্র প্রচুর চাষাবাদ চলছে।

ভেষজ গুণ ও গুরুত্ব:

শুষ্ক ও চূর্ন কল গনোরিয়া রোগে ব্যবহার হয়। ফুলের নির্যাস মূত্র বর্ধক এবং বমনোদ্রেককার রূপে ব্যবহৃত এবং বাচ্চাদের লাল। ফুসকুড়িতে মলম হিসেবে প্রয়োগ করা হয় সুগন্ধি ফুলের জন্যও এটি সুপরিচিতি এবং দেশের সর্বত্র চাষাবাদ করা হয়।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১১তম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) রজনীগন্ধা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে রজনীগন্ধা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।[১]

তথ্যসূত্র:

১. এবিএম এনায়েত হোসেন ও এবিএম রবিউল ইসলাম (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১১ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৮। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

২. Kumar, V. and Subramaniam,, B. 1986 Chromosome Atlas of Flowering Plants of the Indian Subcontinent. Vol.1. Dicotyledons Botanical Survey of India, Calcutta. 464 pp.

 ৩. সিরাজুল করিম আধুনিক পদ্ধতিতে ফুলের চাষ প্রথম প্রকাশ ২০০১ ঢাকা, গতিধারা, পৃষ্ঠা ১২৩-১২৪। আইএসবিএন 984-461-128-7

আরো পড়ুন:  কামিনী দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সাদা সুগন্ধি ফুল বিশিষ্ট ছোট দৃষ্টিনন্দন বৃক্ষ

Leave a Comment

error: Content is protected !!