ভূমিকা: গম (বৈজ্ঞানিক নাম: Triticum aestivum, ইংরেজি নাম: Bread Wheat, Common Wheat) পোয়াসি পরিবারের ট্রিটিকাম গণের তৃণ। সকল পরিবেশে জন্মাতে পারে।
বর্ণনা: এক বা দ্বিবর্ষজীবী তৃণ, কান্ড ৫০-১৫০ সেমি লম্বা, খাড়া, গুচ্ছাকার, ফাঁপা, গোড়া মুক্তভাবে শাখায়িত। পত্রফলক রৈখিক-ভল্লাকার বা প্রশস্ত রৈখিক, ৬-২০ মিমি প্রশস্ত, দীর্ঘাঘ্র, রোমশবিহীন বা রোমশ, অনুফলক খাটো, কর্তিতা, ঝিল্লম, আবরণ মসৃণ।
পুষ্পবিন্যাস স্পাইক খাড়া কিন্তু পরিপক্ক অবস্থায় বক্র, ৫-১৫ সেমি লম্বা, মঞ্জরী অক্ষ ২-৩ মিমি লম্বা। স্পাইকলেট একল, ডিম্বাকার, পার্শ্বীয় চাপা, ৩-৫ পুষ্প যুক্ত, সর্ব ওপরের স্পাইকলেট বন্ধ্যা, রোমশ বা রোমশবিহীন, শূক ১৬ সেমি লম্বা বা অনুপস্থিত। গুম ডিম্বাকৃতি আয়তাকার, ১ সেমি লম্বা, চর্মবৎ, প্রান্ত সামান্য ঝিল্লিযুক্ত, ৩-শিরাল, কিল যুক্ত স্থলা বা খাটো শূক যুক্ত, পার্শ্ব অসম, দৃঢ়, স্থায়ী। লেমা ডিম্বাকৃতি-আয়তাকার, চর্মবৎ, ৫-৯ শিরাল, ১-৩ টি শূক যুক্ত। পেলিয়া ২টি কিলযুক্ত, সরু পক্ষল, কিল সিলিয়াযুক্ত লডিকিউল ২টি।
পুংকেশর ৩টি, পরাগধানী ১.৮-২.০ মিমি লম্বা। ক্যারিঅপসিস আয়তাকার, ৫ মিমি লম্বা, শীর্ষ রোমশ, অঙ্কীয় পৃষ্ঠ গর্তযুক্ত, মুক্ত। ফুল ও ফল ধারণ: জানুয়ারি-এপ্রিল।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ৪২ (Fedorov, 1969)।
আবাসস্থল ও চাষাবাদ: সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় বিভিন্ন প্রকার উর্বর মাটি, স্যাতসেঁতে এবং উন্মুক্ত ভূখন্ডে জন্মে।
বিস্তৃতি: আদিনিবাস সম্ভবত প্রাচ্য, বিশ্বের অধিকাংশ দেশে বর্তমানে চাষাবাদ করা হয়। বাংলাদেশের সর্বত্র চাষ করা হয়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: গম বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শস্য এবং মানুষের খাদ্যরূপে ব্যবহৃত হয়। মানুষের খাদ্যে ব্যাপকভাবে শ্বেতসার ব্যবহার করা হয়, নরম গম থেকে প্রাপ্ত ময়দা কেক, বিস্কুট ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। মদ ও অন্যান্য পানীয় এবং বয়ন শিল্পে শ্বেতসারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। খড় দ্বারা চেয়ার, মাদুর তৈরি হয় এবং পাতা গবাদি পশুর খাদ্য (Purseglove, 1968)।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: চীনে মহিলাদের যক্ষা রোগের যন্ত্রণা থেকে উপশমের জন্য গমের দানা ভেজে খাওয়া হয় (Kirtikar et al., 1935)। ভারতের লোধা আদিবাসী সম্প্রদায় গোলমরিচের সাথে মূলের ক্বাথ মিশ্রিত করে মূত্রকৃচ্ছ্ররোগ নিরাময়ে গ্রহণ করে (Pal and Jain, 1998)।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১২তম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) গম প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে প্রজাতিটি চাষাবাদ করা প্রয়োজন।[১]
তথ্যসূত্র:
১. এস নাসির উদ্দিন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১২ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৪১১। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।